গিভিংটুইসডে মুভমেন্টের কমিউনিটি ডিরেক্টর হলেন হাসান মাহমুদ
Published: 17th, June 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী খ্যাতিসম্পন্ন গিভিংটুইসডে মুভমেন্টের যুক্ত হয়েছেন সাংবাদিক ও সংগঠক হাসান মাহামুদ। তিনি আগামী দুই বছরের জন্য গিভিংটুইসডে বাংলাদেশ-এর পরিচালক (কমিউনিটি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
গিভিংটুইসডে বাংলাদেশ সোমবার (১৬ জুন) তার নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি ২১ জুন থেকে ২০২৭ সালের ২০ জুন পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন।
সোমবার (১৬ জুন) গিভিংটুইসডে বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তিনি আগামী ২১ জুন থেকে ২০২৭ সালের ২০ জুন পর্যন্ত সময়কালের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী এই পদটি বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তোলা, স্বেচ্ছাসেবক কর্মকাণ্ড প্রবর্তন এবং প্রভাবশালী উদ্যোগ চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার প্রধান দায়িত্ব হবে স্থানীয় সম্প্রদায়, প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা ও রক্ষা করা। কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ইভেন্ট, কর্মশালা এবং সচেতনতা ক্যাম্পেইন আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করা। কমিউনিটিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা করা, যাতে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং সঠিক সাপোর্ট পায়। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য অর্থবহভাবে কমিউনিটি প্রকল্পে অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা ইত্যাদি দায়িত্ব তিনি ডিরেক্টর (কমিউনিটি) হিসেবে পালন করবেন।
গিভিংটুইসডে মুভমেন্ট একটি বিশ্বব্যাপী উদারতার আন্দোলন, যা মানুষকে দান, স্বেচ্ছাসেবকতা ও দক্ষতা ভাগাভাগির মাধ্যমে ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই আন্দোলনে যোগ দিতে একজন ব্যক্তি অ্যাডভোকেট, স্বেচ্ছাসেবক বা তহবিল সংগ্রাহক হিসেবে অবদান রাখতে পারেন। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা স্থানীয় ইভেন্ট আয়োজন, সচেতনতা বৃদ্ধি বা চ্যারিটি, ব্যবসা ও কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও নিজের এলাকায় স্থানীয় মুভমেন্টে যোগ দিতে বা নতুন মুভমেন্ট শুরু করতে পারেন।
গিভিংটুইসডে ২০১২ সালে নিউ ইয়র্কের ৯২ স্ট্রিট ওয়াই-তে হেনরি টিমসের উদ্যোগে শুরু হয়। এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সংগঠন ছিলেন জাতিসংঘ ফাউন্ডেশন এবং এতে সমর্থন ছিল ব্ল্যাক শিপের (BLK SHP)। এটি ব্যক্তি পর্যায়ে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি দান করার জন্য একটি দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখন এটি বিশ্বজুড়ে একটি বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যা কোটি কোটি মানুষকে উদার কার্যক্রমে একত্রিত করে। গিভিংটুইসডে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠিত একটি বৈশ্বিক আন্দোলন।
গিভিংটুইসডে বাংলাদেশের কান্ট্রি লিডার ও সিইও শাকিল আজাদ মনন বলেছেন, এটি একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন যা উদারতার শক্তিকে উদযাপন করে। হাসান মাহমুদ একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। এটি একটি অবৈতনিক দয়িত্ব, যা তার নেতৃত্বগুণ ও পেশাদার দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়।
হাসান মাহমুদ বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) এবং বিরল এসএমএ রোগীদের কল্যাণে কাজ করা দেশের একমাত্র সংগঠন কিউর এসএমএ বাংলাদেশ-এই দুটি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবাদিকতা ও সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০২৪ সালে শের-ই-বাংলা স্বর্ণপদক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ স্কিনকেয়ার ও বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের ‘মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২৪’, বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড বিশেষ সম্মাননা ২০২১ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা ২০১৮ সহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবদ ন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে
২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।
একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক