যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে ইরান। এ–সংক্রান্ত দাখিল করা এক প্রতিবাদপত্রে দেশ দুটির বিরুদ্ধে শত শত নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের উচ্চ মানবাধিকার পরিষদের প্রধান নাসের সেরাজ গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের কাছে এই প্রতিবাদপত্র জমা দেন।

গত বুধবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১২ দিন ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৭০ জন। ইরানের প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, এই সমন্বিত হামলা আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন এবং মানবিক আইনের মৌলিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রতিবাদপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিংয়ের (আইআরআইবি) কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর, স্বাস্থ্য ও সেবাকেন্দ্র, কারাগার, আবাসিক এলাকা এবং নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে আবাসিক ভবনগুলোতে ইসরায়েলের হামলায় দেশটির একাধিক বিখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানীকে নিজ বাড়িতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইরানের মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে মানুষের জীবনধারণের অধিকার, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার অধিকার, চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

এ ছাড়া বারবার আবাসিক ভবনে বোমাবর্ষণের হুমকির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধের অধিকার এবং ইরানের আইআরআইবিতে হামলা চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও লঙ্ঘন করেছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য না করে চালানো হামলায় নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা না দিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো’—সিডনির মঞ্চে হিমু-রূপার নস্টালজিয়া

রোববারের সিডনির ম্যাকুয়ারি লিংকস গলফ ক্লাব হলজুড়ে ছিল হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের পরিচিত নস্টালজিয়ার আবহ। ‘পড়ুয়ার আসর’ আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠান ‘প্রিয় পদরেখা’ ছিল কেবল আলোচনা নয়, এ ছিল হুমায়ূনের সৃষ্টিকে অনুভব করার, তাঁর চরিত্রদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার এক আবেগঘন আয়োজন। গদ্য, পদ্য, গান ও নাট্য-আলাপ মিলেমিশে মনে রাখার মতো এক আসর।

অপূর্ব এক দৃশ্যের দেখা মিলল। তরুণ শিল্পী রূপন্তি আকিদ—সিডনির বাঙালি কমিউনিটির তরুণ অভিনেত্রী। নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ তাঁকে তরুণ প্রবাসী শিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। সেদিন তাঁর পরনে ছিল হিমুর স্বাক্ষররং নীল শাড়ি, হাতে হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমুর আছে জল’ উপন্যাস।

রূপন্তির পাশে ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা মাজনুন মিজান—গায়ে উজ্জ্বল হলুদ পাঞ্জাবি, হাতে ফুল। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন ও টেলিভিশনে দুই যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করা মিজান বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের নাটক, টেলিফিল্ম ও সিনেমায় কাজ করে দর্শকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও প্রবাসে নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন এবং সিডনির শিল্পমহলে তিনি পরিচিত ও সম্মানিত মুখ।

এই নাট্য-আলাপে হিমু ও রূপার ভূমিকায় অভিনয় করেন রূপন্তি ও মিজান। তাঁদের সংলাপ, দৃষ্টিভঙ্গি আর অভিনয়ের কোমল আবেগ যেন মঞ্চে সত্যিই ফিরিয়ে আনল হিমুর হাঁটাচলার সেই নরম আলো, রূপার শান্ত উপস্থিতি আর দুজনের অদ্ভুত অনুভবের জটিল সুন্দর সম্পর্ক।

নাট্য-আলাপ শুরু হতেই মঞ্চ যেন গল্পের পাতায় পরিণত হলো। যখন তাঁদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো—

‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’

‘না, ভালোবাসি না...কারণ, ভালোবাসলে তো প্রাপ্তির বাসনা থাকে। আমি তোমাকে অনুভব করি।’

তখন হলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল নিস্তব্ধতার গভীর ঢেউ। দর্শকের চোখে ভেসে উঠল হিমু-রূপার নরম, শীতল, হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্তগুলো।

পরিবেশ আরও আবেগময় হয়ে ওঠে পরিচিত সুরে—‘নেশা লাগিল রে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে...’

গানের সুর মিশে গিয়েছিল সিডনির প্রবাসী আবেগে—হিমুর হলুদ, নীল আর স্নিগ্ধ প্রেমের গন্ধে। ‘পড়ুয়ার আসর’-এর অন্যতম সদস্য রোকেয়া আহমেদ বলেন, ‘তাঁর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে সিডনিতে এই আয়োজন। আমরা চাই তাঁর সৃষ্টির আলো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাক। প্রবাসে থেকেও তাঁকে নতুন করে উপলব্ধি করার একটি জায়গা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।’

আরও পড়ুনগানের সুরে, মেজবানের ঘ্রাণে—সিডনি যেন এক দিনের চট্টগ্রাম১০ নভেম্বর ২০২৫

একজন মুগ্ধ দর্শক অনুষ্ঠান শেষে মন্তব্য করেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন গল্পের চরিত্ররা সত্যি সত্যি সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আলোচনার প্রতিটি কথাই হৃদয় ছুঁয়ে গেল।’

রোববারের সিডনির ম্যাকুয়ারি লিংকস গলফ ক্লাব হলজুড়ে ছিল হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের পরিচিত নস্টালজিয়ার আবহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ