চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এবারের এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার মাত্র ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ; যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। চট্টগ্রাম শহরের পরীক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করলেও ক্রমেই খারাপ করছে তিন পার্বত্য জেলার পরীক্ষার্থীরা।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ফলাফল খারাপ হওয়ায় তা বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদের কাছে চট্টগ্রাম বোর্ড পিছিয়ে পড়ার পেছনে তিন পার্বত্য জেলা ‘বড় ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বছর অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে অধিকাংশই পাহাড়ের তিন জেলার শিক্ষার্থী।
পাহাড়ের বিদ্যালয়গুলো মূলত সুযোগ-সুবিধা ও দক্ষ শিক্ষক সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ভৌত অবকাঠামো, পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা ও যাতায়াতেও অনেক পিছিয়ে তিন পার্বত্য জেলা। চট্টগ্রাম শহরের স্কুলগুলোয় পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলার অধিকাংশ স্কুলে দক্ষ তো দূরে থাক, প্রয়োজনীয় শিক্ষকও নেই। আবার নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। দেখা গেল পাহাড়ের স্কুলগুলোয় বাংলা বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয়গুলো পড়াতে হচ্ছে, সেগুলোয় তিনি দক্ষ নন। তাই পাহাড়ের বিদ্যালয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
এবার চট্টগ্রাম নগরীর পরীক্ষার্থীদের পাসের হার ৮১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অথচ নগরী বাদে জেলায় পাসের হার ৭১ দশমিক ২৯ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার রাঙামাটিতে, মাত্র ৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া খাগড়াছড়িতে ৬০ দশমিক ৭৭ ও বান্দরবানে ৬৩ দশমিক ১২ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এবার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি খারাপ ফলাফল করেছে। যে কারণে তিন বিভাগের মধ্যে এখানে পাসের হার সর্বনিম্ন। মেয়েদের চেয়ে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে ছেলেরা। এক বছরের ব্যবধানে বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে এসব বিষয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পাঁচ বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৫৩ এবং ২০২১ সালে ছিল ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে এবার সেখানে পাসের হার মাত্র ৭২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। যেটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবার বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা– তিন বিভাগেই কমেছে পাসের হার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে মানবিক বিভাগে। এবার মানবিকে পাসের হার সবচেয়ে কম ৫৫ দশমিক ০২ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৭৩ দশমিক ৪১। বিজ্ঞানে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৯৪ দশমিক ৫২। ব্যবসা শিক্ষায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮৪ দশমিক ১১।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড.
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই পাহাড়ের স্কুলগুলোর ফলাফল আমাদের চরমভাগে ভোগায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পাহাড়ে অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ থেকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়লে ফলাফলেও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। এসব বিষয় আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের জানাব। আমরাও চাই সমতলের মতো পাহাড়ের স্কুলগুলোও এগিয়ে যাক।’
ফলাফলে পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ। পাসের হারের মতো জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়েও ছাত্রদের তুলনায় এগিয়ে ছাত্রীরা। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৯০ জন এবং ছাত্রী ৬ হাজার ৩৫৩ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৮২৩ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২১৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৬৪ টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ৭৮ হাজার ৭২৫ জন ছাত্রী ও ৬১ হাজার ৬৬৩ জন ছাত্র। এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এবার ২৪ হাজার ৬৬৮ জন পরীক্ষার্থী এক বিষয়ে ফেল করেছে। হার ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমে এবার হয়েছে ৩৩টি। যা গতবার ছিল ৪৬টি। শুধুমাত্র একটি বিদ্যালয়ে পাসের হার শূন্য পাওয়া গেছে। সেটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট উচ্চ বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয় থেকে দুজন পরীক্ষা দিয়ে দুজনই ফেল করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসএসস র পর ক ষ র থ গতব র ছ ল র ফল ফল ম নব ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত, অপেক্ষা ফলাফলের, মেধাক্রম যেভাবে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন ফলাফলের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টা থেকে দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।
গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার সময় গত বছরের তুলনায় ১৫ মিনিট বাড়িয়ে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট করা হয়েছে। লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনশিক্ষক-কর্মচারীরা আইন পেশা, সাংবাদিকতাসহ একই সঙ্গে অন্য চাকরি করতে পারবেন না, নীতিমালা জারি০৯ ডিসেম্বর ২০২৫মেধাতালিকা নির্ধারণ কীভাবে—এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
(ক) এসএসসির জিপিএর-৮ গুণ = ৪০।
(খ) এইচএসসির জিপিএর ১২ গুণ = ৬০।
লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে এই দুইয়ের যোগফলেই মেধাতালিকা চূড়ান্ত হবে।
*২০২৪ সালের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৩ নম্বর এবং গত শিক্ষাবর্ষে কোনো সরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি থাকা প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৫ নম্বর কেটে মেধাতালিকা করা হবে।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি যার মধ্যে এমবিবিএস ৫ হাজার ১০০ এবং বিডিএস ৫৪৫টি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৪০৬টি। যার মধ্যে এমবিবিএস ৬ হাজার ১ এবং বিডিএস এক হাজার ৪০৫টি। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে মোট আসন ১৩ হাজার ৫১টি। যার মধ্যে এমবিবিএস কোর্সে ১১ হাজার ১০১ এবং বিডিএস কোর্স এক ৯৫০টি আসন। ১৩ হাজার ৫১ টি আসনের জন্য এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন।
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫