রাসেলের ব্যাট দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেধড়ক পিটুনি ডেভিডের, ১১ ছক্কায় রেকর্ড সেঞ্চুরি
Published: 26th, July 2025 GMT
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ফিনিশার। অস্ট্রেলিয়া দলেও তাঁর কাজটা কমবেশি একই। তবে টিম ডেভিড আজ প্রমাণ করলেন, ক্রিজে আগেভাগে এসেও খেলাটা তিনি শেষ করতে জানেন।
ওয়ার্নার পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ডেভিড ক্রিজে এলেন পাওয়ার প্লের মধ্যে, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৬১। এরপর ১১ ছক্কায় ৩৭ বলে করলেন রেকর্ড সেঞ্চুরি।
ডেভিডের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১৫ রান তাড়া করেছে ২৩ বল হাতে রেখে। আজ ৬ উইকেটের জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও জয় নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া। টি–টোয়েন্টি সিরিজে আপাতত ৩–০ তে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাকি দুই ম্যাচ আনুষ্ঠানিকতার।
আরও পড়ুনকীভাবে বদলাচ্ছে টি–টোয়েন্টির বাংলাদেশ২ ঘণ্টা আগেঅস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন ডেভিড। এরপর যা হয়েছে তা ছক্কার উৎসব। ইনিংসের দশম ওভারে ক্যারিবিয়ান স্পিনার গুড়াকেশ মোতির ৪ বলে টানা ছক্কা মারেন ডেভিড। আরেক স্পিনার আকিল হোসেনের ওপরও ঝড় বয়ে গেছে। ১৬ বলে ফিফটির দেখা পান ডেভিড, যা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি ফিফটির রেকর্ড।
৩৭অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিই করেছেন ডেভিড। এটি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে তৃতীয় দ্রুততম।ডেভিড পরের ফিফটি তুলেছেন ২১ বলে। তবু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিই করেছেন ডেভিড। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে রোমারিও শেফার্ডের বলে চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেন। এই বাউন্ডারিতে নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার জয়ও। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল জশ ইংলিশের। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ডেভিডের করা ৩৭ বলের সেঞ্চুরিটি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে তৃতীয় দ্রুততম।
আরও পড়ুনইন্টার মায়ামিতে এবার ‘দেহরক্ষী’ দি পলকেও পেলেন মেসি ৩২ মিনিট আগেঅধিনায়ক শাই হোপের সেঞ্চুরিতে আজ বড় সংগ্রহই তুলেছিল আগে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারত, তবে শেষ ৫ ওভার ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে মাত্র ৪৯ রান। ৫৭ বলে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন হোপ। বোলিং ইনিংসেও এক পর্যায়ে ৮৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিল হোপের দল। তবে ডেভিড ও মিচেল ওয়েনের রেকর্ড জুটিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ১২৮ রান তুলেছেন দুজন, তাও ৪৬ বলে। ভেঙেছেন মিচেল মার্শ ও টিম ডেভিডের আগের রেকর্ড (৯৭ রান)।
রেকর্ড জুটি গড়েছেন ডেভিড ও ওয়েন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ততম র কর ড উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’