কীভাবে বদলাচ্ছে টি–টোয়েন্টির বাংলাদেশ
Published: 26th, July 2025 GMT
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের ছন্দ কি বাংলাদেশ আর খুঁজেই পাবে না? প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছিল এই সংস্করণে টানা ছয় ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর। এর মধ্যে ছিল গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজও।
তবে হতাশার পথ পেরিয়ে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতে এখন আবার আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল।
শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে আর পাকিস্তানকে ঘরের মাঠে হারানো বাংলাদেশের পরের মিশন সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপ। তবে দৃষ্টিটা মূলত ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকেই।
বড় এই দুই টুর্নামেন্টের আগে দুটি সিরিজ জয় নিয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমূল আবেদীনের মন্তব্য, ‘ইতিবাচক, অনেক স্বস্তির। এখন দেখতে হবে এই ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রাখতে পারি কি না।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তান হয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রথম টি–টোয়েন্টি, হারের বৃত্তবন্দী দলটা এরপর হঠাৎ কী করে এমন বদলে গেল?
নাজমূল বলছেন, ক্রিকেটারদের এখন তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে। নিজেদের ওপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটটাও খেলোয়াড়েরা সবাই এখন আগের চেয়ে ভালো বুঝতে পারছেন।
সঙ্গে যোগ হয়েছে লিটন দাসের দায়িত্বশীল ও পরিণত অধিনায়কত্ব। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে লিটনের নেতৃত্বেই ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ। তবে তিনি তখনো ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের আগে ২০২৬ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় দলের নেতৃত্ব।
অধিনায়কত্ব অধ্যায়ের শুরুতে টানা হার দেখলেও শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে লিটন যেন অনেকটাই পরিণত। নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, দল নিয়ে ভাবনাটাও পরিষ্কার। শ্রীলঙ্কার পর মিরপুরেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ফুটে উঠেছে তা।
মাঠে লিটনের ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্যে সন্তুষ্ট ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানও, ‘আমরা লিটনের মতামতকে গুরুত্ব দিই, সম্মান করি। সব সিদ্ধান্ত যে ঠিক হবে, তা তো নয়। তবে বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই সে ঠিক নিচ্ছে বলে মনে হয়।’
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারানোয় সন্তুষ্টি থাকবে, তবে এটুকুতেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলার যাওয়ার সুযোগ নেই। লিটন আর তাঁর দলের সামনে এখন এশিয়া কাপে ভালো করার চ্যালেঞ্জ। পরপর দুই সিরিজ জেতায় এখন এশিয়া কাপ নিয়ে প্রত্যাশাটাও বেশি।
তবে এশিয়া কাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতির ছবিটা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। টুর্নামেন্টের প্রায় মাস দেড়েক বাকি। আগস্টের ভারত সিরিজ বাতিল হয়ে যাওয়ায় সময়টা এখন ফাঁকা। গত পরশু পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি–টোয়েন্টির পর লিটন বলেছেন, এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে আরও একটি সিরিজ খেলতে পারলে ভালো হতো তাঁদের জন্যও।
ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানও জানিয়েছেন, দেশে বা বিদেশে একটি সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা তাঁরা করে যাচ্ছেন। তবে সম্ভাব্য দলগুলোর ব্যস্ত সূচির জন্য চূড়ান্ত হয়নি কিছু। টানা সিরিজ খেলার ধকল সামলে নিতে আপাতত তাই ক্রিকেটারদের বিশ্রামে রাখাটাই জরুরি মনে করছে তারা।
১০–১২ দিনের বিশ্রামের পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি, যাতে থাকার কথা লম্বা স্কিল ক্যাম্পও। এশিয়া কাপের আগে সপ্তাহ তিনেকের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের স্কিলের উন্নতিতেই বেশি জোর দেওয়া হবে।
সারা বছর খেলার ব্যস্ততায় আলাদা করে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ মেলে না। খেলার ব্যস্ততা না থাকায় এশিয়া কাপের আগে সেটি করার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সিরিজ খেলার জন্য শেষ পর্যন্ত বিদেশি দল পাওয়া না গেলে ‘এ’ দল বা হাই পারফরম্যান্স দলের সঙ্গে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারে জাতীয় দল।
প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের চাহিদা অনুযায়ী এশিয়া কাপের প্রস্তুতিতে যোগ দেওয়ার কথা একজন পাওয়ার হিটিং কোচেরও। এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেও এখনো কাউকে চূড়ান্ত করেনি বিসিবি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ত
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অদ্ভুত রেকর্ড, আবার হারল অস্ট্রেলিয়ার কাছে
গত ম্যাচের নায়ক ছিলেন টিম ডেভিড। তাঁর রেকর্ড সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১৪ রান ২৩ বল বাকি থাকতেই তাড়া করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তাতে সিরিজজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে আজ আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে তাঁকে বিশ্রাম দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ডেভিড না থাকলেও আরেকবার ২০০ রান তাড়া করতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার।
সেন্ট কিটসে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২০৬ রানের লক্ষ্যে ৩ উইকেট ও ৪ বল বাকি থাকতে পেরিয়েছে মিচেল মার্শের দল। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সপ্তমবার ২০০ বা এর বেশি রান তুলেও হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যে বিব্রতকর রেকর্ড আর কোনো দলের নেই।
আগের ম্যাচে ডেভিড যেমন ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়ান রেকর্ড গড়েছেন, আজ কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি। জশ ইংলিশ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ক্যামেরন গ্রিনদের মাঝারি কিন্তু বিধ্বংসী ইনিংসই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। শূন্য রানেই ফেরেন অধিনায়ক মার্শ। পাওয়ার প্লেতে এরপর ঝড় তোলার দায়িত্ব নেন ইংলিশ ও ম্যাক্সওয়েল। ৩০ বলে ৫১ রান করে ইংলিশ যখন আউট হন, তখন অস্ট্রেলিয়ার রান ৬.১ ওভারে ৬৬।
পাওয়ার প্লের পরের চার ওভারে ঝড় তোলেন ম্যাক্সওয়েল। ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে করেন ৪৭ রান। এই ৪ ওভারে তিনি ছক্কা মেরেছেন ৫টি। অস্ট্রেলিয়াকে ১০.১ ওভারে ১২৯ রানে ম্যাক্সওয়েল ফেরেন বলে। এরপর গ্রিন খেলেছেন পরিস্থিতির মেজাজ বুঝে। ৩০ বলে করেছেন ফিফটি, মাঠ ছেড়েছেন দল জিতিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার দারুণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারের পেছনে তাদের বাজে ফিল্ডিংও কম দায়ী নয়। তিনটি ক্যাচ মিসের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ফিল্ডিংও মিস করেছেন ক্যারিবীয়রা। এই জয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৪-০ তে এগিয়ে গেল।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৫ রান তুলেছিল ‘সমবায় পদ্ধতিতে’। মানে কারও অবদান খুব বেশিও না, কমও না। রোস্টন চেজকে হিসাবের বাইরে রাখতে হবে, তিনি আউট হয়েছেন শূন্য রানে। বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান এসেছে শেরফান রাদারফোর্ডের কাছ থেকে, ৩১ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান এসেছে রোমারিও শেফার্ড ও রোভম্যান পাওয়েলের ব্যাট থেকে।
কোনো ব্যাটসম্যান ৩২ রানও করতে পারেননি, এমন টি-টোয়েন্টি ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০৫ রানই সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কোনো ফিফটি ছাড়া সর্বোচ্চ রান অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২১ রান করেছিল তারা।