আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্যানেলে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানের চেষ্টা করছে রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা। ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন করছেন ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম।

চেষ্টা করছেন আচরণবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের দ্বারে পৌঁছানোর। ডাকসুর নির্বাচনী পরিবেশ, প্রতিশ্রুতি, সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড ও ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি সংবাদদাতা ই এম সৌরভ। 

আরো পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত তালিকায় ৪৭১ প্রার্থী

ডাকসু নির্বাচন: জাতীয় কবির কবর জিয়ারত করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রচার শুরু

রাইজিংবিডি: নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিবেশ কেমন দেখছেন? কোনো শঙ্কা আছে কি?

সাদিক কায়েম: বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলকে বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে এবং বিশেষ আদর্শ লালন করছে। অথচ নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত হলো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। আমরা চাই, সব প্রার্থী ও অংশীজনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। শিক্ষকরা যদি নিজেদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সবার প্রত্যাশা।

রাইজিংবিডি: ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনের পার্থক্য কোথায়?

সাদিক কায়েম: ২০১৯ সালে ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল, ক্যাম্পাসগুলো ছিল সন্ত্রাসীদের ক্যান্টনমেন্ট। শিবিরের হাজার হাজার কর্মী নির্যাতিত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ছিল না। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর পরিস্থিতি বদলেছে। আজ শিক্ষার্থীরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাচ্ছে, সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে হলে সিট দেওয়া হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

রাইজিংবিডি: কেনো আপনাদের প্যানেলকে ইনক্লুসিভ প্যানেল বলছেন?

সাদিক কায়েম: জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে- ঐক্যবদ্ধ লড়াই সফলতা আনে। তাই শুধু দলীয়ভাবে নয়, বরং সবার জন্য প্যানেল করেছি। এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, উপজাতি (চাকমা) শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধা, ক্রীড়াবিদ ও গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদকদেরও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা চাই- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক সবার, যেখান থেকে সবার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

রাইজিংবিডি: ভিপি পদে আপনার জয়ের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অবস্থান কী? পুরো প্যানেল কি জয়ী হতে পারবে? 

সাদিক কায়েম: জুলাই বিপ্লবে আমি শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি। বিপ্লব-পরবর্তী ১ বছর আমরা শহীদ পরিবার, আহত শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে সক্রিয় থেকেছি। পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্প, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বিভিন্ন দাবিদাওয়া প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেছি। শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীদের আস্থা আমাদের ওপর বেড়েছে। তারা পরামর্শ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। এ কারণেই আমরা আশাবাদী- ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সফল হবে।

রাইজিংবিডি: ছাত্রী হলগুলো থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? 

সাদিক কায়েম: অতীতে ডাকসু-চাকসু নির্বাচনে ছাত্রীরা আমাদের সর্বাধিক সমর্থন দিয়েছে। গত ১ বছরে তাদের অংশগ্রহণও বেশি ছিল। আমাদের মেনুফেস্টোতে নারীদের নিরাপত্তা, গার্ডিয়ান লাউঞ্জ, ক্যান্টিন-হাইজিন সুবিধা, ডে কেয়ার সেন্টার, রাতের জরুরি চিকিৎসা, নারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সংখ্যালঘুদের অধিকার- সবই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়তে চাই। তাছাড়া, এখন নারী শিক্ষার্থীদের ব্যপক সাড়া পাচ্ছি।

নারীদের কাছে শিবির সম্পর্কে ফ্যাসিবাদী বিষবাষ্প এখন নেই বললেই চলে। দুঃখজনকভাবে রাজনীতি কিংবা রাজনীতির বাইরে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো গড়ে উঠেনি। অব্যাহত কটূক্তি, প্রোপাগান্ডা, বিদ্বেষমূলক প্রচার, সাইবার বুলিং ও ট্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ডান-বাম ঘরানার কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই ব্যাধি থেকে। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের সফলতার অন্যতম কারিগর আমাদের ছাত্রী বোনেরা। তাদের সাহসী অবদান ও দুর্নিবার নেতৃত্ব আমাদের বিজয়কে তরান্বিত করেছে। আমরা নারীদের জন্য মসৃণ পথ তৈরি করে দিতে চাই। 

রাইজিংবিডি: ডাকসুতে শিবিরের অংশগ্রহণের ইতিহাস জানতে চাই। 

সাদিক কায়েম: ১৯৭৭ সাল থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির ডাকসুর প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের তাহের-কাদের পরিষদ, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালের এনাম-কাদের পরিষদ, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালের আমিন-মুজিব-হেলাল পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। বহু হামলা-মামলার শিকারও হয়েছি। শুধু ২০১৯ সালে দমন-নিপীড়নের কারণে অংশ নিতে পারিনি। তাই অনেকে বলছে ছাত্রশিবির ‘প্রথমবার অংশ নিচ্ছে’-এটা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি।

রাইজিংবিডি: জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ডাকসুতে আপনাদের অঙ্গীকার কী?

সাদিক কায়েম: বিপ্লব-পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনে আমাদের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার- এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে নারীরা মুক্তভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। এ যাত্রা কণ্টকমুক্ত নয়। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করছি, নারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার এই পথযাত্রায় আমরা থামব না।

রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ।

সাদিক কায়েম: রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য র জন ত আম দ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে: রাষ্ট্র সংস্কার

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই সংকট এড়াতে কমিশনকে দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারের নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা সংস্কার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। ঐকমত্য কমিশন যে ঐক্যকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, বাস্তবায়নের সুপারিশ সেই ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।

চ্যালেঞ্জের মূল কারণ হিসেবে বলা হয়, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেটুকু আলোচনা করেছিল, সেখানে এ প্রস্তাবে উল্লেখিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয়নি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর যদি এ প্রস্তাব জাতির সামনে হাজির করা হতো, তাহলে চ্যালেঞ্জ পরিহার করা যেত।

এতে আরও বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদকে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় গঠনগত ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু যেসব প্রস্তাবে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছিল, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় সংস্কার প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ আপত্তির বিষয়গুলোকে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে মুছে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মনে করে, দ্রুত ওই সুপারিশ থেকে বের হয়ে না এলে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের ভেতরের যৌক্তিক ক্ষোভ পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের ভেতর ছড়িয়ে পড়বে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের মানুষ যখন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের প্রতি অন্যায় আচরণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। দেশের মানুষকে স্বৈরাচারী সরকারের চেয়ে উন্নত জীবন উপহার দেওয়ার সুযোগ হারিয়ে যাবে।

সংকট এড়াতে ঐকমত্য কমিশনকে দ্রুত তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা বলেছে, সংবিধান টেকসই ও সর্বজনীন করতে তাড়াহুড়ো থেকে বিরত থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোই সংবিধান সংস্কারের একমাত্র পথ। ঐকমত্য কমিশন সঠিক বিবেচনাবোধকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে সংকট থেকে মুক্ত রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত
  • সনদ বাস্তবায়নে আবারো কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে: রাষ্ট্র সংস্কার