গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ
Published: 16th, September 2025 GMT
নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ২০১৯ সালের নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এই নির্বাচনের আগে রাব্বানীর এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি উল্লেখ করে ওই সুপারিশ করেছে কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সভায় রাব্বানীর ভর্তি সাময়িক বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার রাতে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালেই এমন একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। নতুন করে সেটার অগ্রগতি জানতে আবেদন করা হলে আমরা নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করি। সেই তদন্ত কমিটি এই প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্ত কমিটি তাঁর (গোলাম রাব্বানী) ভর্তি জালিয়াতির প্রমাণ পায়।’ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সেই ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতাও বৈধ ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভর্তি বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তাঁর প্রার্থিতা অবৈধ এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও অবৈধ হবে।
২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী রাশেদ খাঁন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো.
এর প্রেক্ষাপটে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০১৯ অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু প্রার্থী/প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোট দান, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ভোট কারচুপি করা, ভোট দানের জন্য কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোটকেন্দ্র দখল করা, ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা, ভোট দানে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, ব্যালট-বাক্সসহ নানা কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণাদি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মাণ হয়েছে যে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি থাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। অতএব উক্ত ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতা বৈধ ছিল না। সুতরাং এই কমিটির পক্ষ থেকে গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করা হলো।
এই প্রতিবেদনের আলোকে সর্বশেষ সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে বলা হয়, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এমফিল প্রোগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাঁদের এমফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। তাঁদের এমফিল ভর্তি বাতিলের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হোক। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ বাস্তবায়নে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য আইন উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে রাশেদ খাঁন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই, তারা গুরুত্বের সঙ্গে আমার অভিযোগ বিবেচনা করেছে। গোলাম রাব্বানী শিক্ষার্থীদের ভোটে জিএস নির্বাচিত হয়নি। তৎকালীন প্রশাসন ফলাফল ছিনতাই করে রাব্বানীকে জিএস ঘোষণা করে। দীর্ঘ সময় পরে হলেও আমি ন্যায়বিচার পেতে যাচ্ছি। এতটুকুতেই আমার তৃপ্তি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ পেয়েছে, গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ছিল।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল র এমফ ল র ব ষয়ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল