রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন বিতরণ শেষ হচ্ছে রবিবার (৩১ আগস্ট)।

এর মধ্যেই ক্যাম্পাস জুড়ে তীব্র হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। তবে এই উত্তাপের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে বারবার তফসিল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তের জন্য।

আরো পড়ুন:

৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান

রাবিতে ৭০ স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরজেপি টেক অলিম্পিয়াড

মনোনয়ন সংগ্রহে চমক স্বতন্ত্রদের

এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ৫৯৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন পদে ১৯৯ জন, সিনেটে ২৬ জন এবং হল সংসদের বিভিন্ন পদে ৩৭০ জন প্রার্থী রয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি সবার নজর কেড়েছে। কেন্দ্রীয় ২৩টি পদের জন্য বেশিরভাগ মনোনয়ন ফরম তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এজিএস পদে মনোনয়ন সংগ্রহকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী সজিবুর রহমান বলেন, “আমি দল-গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।”

নারীবিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনয়ন নেওয়া প্রথম নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিশা আক্তার বলেন, “রাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতেই আমি মনোনয়ন নিয়েছি। নিরাপদ ক্যাম্পাস, নারী নিরাপত্তা ও আবাসন নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য।”

কমিশনের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ক্ষোভ

নির্বাচন কমিশন তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারছে না, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। মাত্র সাড়ে ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার তফসিল পুনর্বিন্যাস এবং ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইবার ভোটের সময় পরিবর্তন করার মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে ১৭ আগস্ট মনোনয়ন বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয় এবং পরে তারিখ পরিবর্তন করে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এরপর ২৭ আগস্ট একই দিনে দুইবার ভোটের তারিখ পরিবর্তন করে কমিশন। প্রথমে ২৮ সেপ্টেম্বর এবং পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তা ২৫ সেপ্টেম্বর করা হয়।

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট

প্রথমবারের মতো রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার খরচ বহন করছে কমিশন। ডোপ টেস্টের ফল পজিটিভ হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রার্থীরা এক বা দুদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন হাতে পাবেন এবং তা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল প্রস্তুতি

নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের প্যানেল গঠনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এককভাবে রাকসু ও সিনেট পদের জন্য মোট ২৫টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি এবং সিনেটের দুইটি পদে ফরম তোলা হয়েছে।

রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশে যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করবেন।

শাখা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মেহেদী হাসান জানান, গত কয়েকদিনে রাকসু এবং হল সংসদের জন্য শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে মোট ২১৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। তারা শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল প্রকাশ করবেন।

একসময় রাকসুতে বাম সংগঠনগুলোর শক্ত অবস্থান ছিল। মোট ১৪টি নির্বাচনের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১১ জন ভিপি-জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এখন তাদের ঐতিহ্য হারানোর আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে। এবার ছয়টি বাম সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’ প্যানেলভুক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই জোট থেকে ইতোমধ্যে ২৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলে রাকসু নির্বাচনের আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হবে।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বতন ত র প র র থ জন প র র থ দ র জন য আগস ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান