যুক্তরাষ্ট্রে মাইনর লিগে ব্যাটে–বলে পুরোনো সাকিব
Published: 20th, September 2025 GMT
ব্যাটিংয়ে ১৭ বলে অপরাজিত ২৭ রান আর বোলিংয়ে ৯ রানে ২ উইকেট। যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর ক্রিকেট লিগে এমন দারুণ অভিষেক হলো সাকিব আল হাসানের।
তাঁর দল আটালান্টা ফায়ার জিতেছেও বড় ব্যবধানে। গতকাল রাতে ব্যাটিংয়ে নেমে আটালান্টার ১৮১ রানের জবাবে মরিসভিল র্যাপ্টর্স ২০ ওভারে তুলতে পারে মাত্র ৮৫ রান। তাতে সাকিবের দল জয় পেয়ে ৯৬ রানে।
মাইনর লিগ ক্রিকেট যুক্তরাষ্ট্রের একটি পেশাদার টি-টোয়েন্টি লিগ। সেখানকার বড় প্রতিযোগিতা মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) জন্য এটি উন্নয়নমূলক লিগ। এই লিগে খেলার আগে সাকিব খেলেছেন সিপিএলে।
ক্যারিবিয়ান লিগে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি সাকিব। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ব্যাট হাতে ২০ গড়ে ১৮০ রান করেছেন এই বাঁহাতি, ফিফটি মাত্র একটি। বল হাতে ৮.
মাইনর লিগে সাকিবের শুরুটা পুরোনো দিনের মতোই হলো। ছয়ে ব্যাট করেন সাকিব। আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান স্টিভেন টেলরের সঙ্গে গড়েন ৪১ বলে ৭৯ রানের জুটি। ৩ চার ও ১ ছক্কা মারেন সাকিব। টেলর ৬২ বলে করেন অপরাজিত ৯৭। এই ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছেন টেলর, কোনো চার ছিল না।
বোলিংয়ে অবশ্য সাকিব তাঁর চার ওভারের কোটা পূরণ করতে পারেননি। ২ ওভার বোলিং করেন। অবশ্য আটালান্টার হয়ে সানি প্যাটেল ছাড়া কেউই বোলিং কোটা পূর্ণ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্পিনার ৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
আরও পড়ুনসাকিবের সিপিএল কেমন কাটল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫সাকিব অনেক দিন ধরেই দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে নেই। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে ফিরতে পারেননি নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিব।
অভ্যুত্থানের পরপর পাকিস্তান ও ভারতে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে খেললেও দেশে ফিরতে না পারায় সাকিব এখন জাতীয় দলের বাইরে। এই সময়ে সাকিব খেলছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয়। পিএসএল, গ্লোবাল সুপার লিগ, ম্যাক্স ৬০ ও সিপিএলের পর সাকিব এখন মাইনর ক্রিকেট লিগেও খেলছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরআটালান্টা: ২০ ওভারে ১৮১/৪ (টেলর ৯৭*, সাকিব ২৭*; রিত্বিক ১/২৩)
মরিসভিল: ২০ ওভারে ৮৫/৭ (রাজ ৫০, আনিশ ২৪; সানি ৩/৫, সাকিব ২/৯)
ফল: আটালান্টা ৯৬ রানে জয়ীআরও পড়ুনমোস্তাফিজকে চোখ বন্ধ করে রশিদের ছক্কা—আধুনিক ক্রিকেটে যে শটগুলো খেলা হয়১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আট ল ন ট স প এল ম ইনর
এছাড়াও পড়ুন:
কারাম উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস
গোধূলির আলো তখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে পুঁতে রাখা কারামগাছের ডাল। এর চারপাশে ভিড় জমিয়েছেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কিশোরীরা দূর্বাঘাস ও ফুল দিয়ে কারাম ডালগুলো সাজাচ্ছে। নারীদের কেউ কেউ উপোস ভেঙে সেজেগুজে এসেছেন। সবার চোখেই উচ্ছ্বাস। বাঁশি, মাদল ও ঢোলের তালে শুরু হলো নাচ–গান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নাচে-গানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে।
ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উপলক্ষে আনন্দের এমন আবহ তৈরি হয়েছিল শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, ৪০ বছর পর দুই বছর ধরে সেখানে আবার উৎসবটি হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেন মূলত গ্রামটির নারীরা। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিনব্যাপী উৎসবকে ঘিরে গ্রামজুড়ে ছিল সাজসাজ রব।
বুধবার সন্ধ্যায় আখড়ায় কারামগাছের ডাল পুঁতে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। এরপর রাতভর চলে নাচ-গান। পরদিন বিকেলে আখড়ায় (বড় খোলা উঠান) পুঁতে রাখা কারাম ডাল তোলা হয়। এরপর মাদল-বাঁশি ও ঢোলের তালে তালে তালে নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে পুকুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী উৎসব। তবে এরপরও ছিল উৎসবের রেশ। সেদিনও গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুরা গান ও নাচে অংশ নেয়।
ষষ্ঠ শ্রেণির তিন কিশোরী স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে ধানগাছ, দূর্বাঘাস, ফুল ও সুতা দিয়ে কারাম ডাল সাজায় বুধবার সন্ধ্যায়। আগের রাত থেকে তারা নির্জলা উপোস ছিল। অন্যদিকে তিন কিশোর দূরের গ্রাম থেকে খিলকদমের ডাল কেটে নিয়ে আসে। তারাও উপোস করেছিল। নতুন ধুতি পরে তারা ডাল নিয়ে এলে কিশোরীরা ফুল ছিটিয়ে বরণ করে। এরপর নারীদের সঙ্গে নেচেগেয়ে আখড়ায় তিনটি ডাল পাশাপাশি পুঁতে দেওয়া হয়।
গ্রামের মোড়ল ভোলা খালকো (৭৮) আখড়ায় বসে নারী-পুরুষ ও শিশুদের করম দেবতা ও পূজার সূচনার কাহিনি শোনান। এরপরই শুরু হয় নাচ-গান, যা চলে সারা রাত। ষাটোর্ধ্ব বিসরি এক্কা বললেন, আখড়ায় নাচতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জামাইকে দেখে লজ্জায় শেষ পর্যন্ত অন্যদের সঙ্গে নাচে অংশ নেননি। সবাইকে আনন্দ করতে আর নাচতে–গাইতে দেখে খুব ভালো লেগেছে জানিয়ে বলেন, ‘সামনের বচ্চরে আর শরম করব না।’
গ্রামের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একসময় কারাম ছিল ওঁরাওদের অন্যতম একটি উৎসব। কিন্তু খরচ ও আগ্রহের অভাবে প্রায় চার দশক আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। মিনতি বাকলা নামে গ্রামটির চল্লিশোর্ধ্ব এক গৃহবধূ দুই বছর আগে আবারও এ উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেন। মিনতি বাকলা বললেন, কারাম ছিল তাঁদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব। উৎসবটি হারিয়ে যেতে বসেছিল। ঐতিহ্য ধরে রাখতে উদ্যোগ নেন তিনি।
নেচে-গেয়ে কারাম ডাল বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন গ্রামের মেয়েরা