কুয়েত দূতাবাসের ‘দ্বৈত ছুটি’ নীতিতে প্রবাসীদের জীবন দুর্বিষহ
Published: 3rd, October 2025 GMT
কুয়েতে বর্তমানে তিন লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত, যাঁরা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁরা বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে টিকিয়ে রেখেছেন। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
সেবার ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ:কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীরা প্রধানত পাসপোর্ট নবায়ন (ই-পাসপোর্ট সেবা), জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্মনিবন্ধন, ভিসা সত্যায়ন এবং আউট পাস (ট্রাভেল পারমিট), এ ছাড়া আরও অনেক অত্যাবশ্যকীয় সেবা পেয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে সেবার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জগুলো লক্ষ করা যাচ্ছে:
১.
২. ছুটির কারণে কার্যদিবস সীমিত হওয়া: কুয়েতপ্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, দূতাবাসের ছুটির তালিকা।
যেসব কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত বন্ধ থাকে
★ কুয়েতের সাপ্তাহিক ছুটি: প্রতি শুক্র ও শনিবার।
★ বাংলাদেশের সব সরকারি ছুটি।
★ কুয়েতের সব সরকারি ছুটি।
এই অতিরিক্ত ছুটির কারণে কার্যকর সেবার দিনগুলো অত্যন্ত সীমিত হয়ে যায়, যার ফলে সেবাপ্রাপ্তিতে ব্যাপক বিলম্ব ঘটছে। একজন প্রবাসী কর্মজীবীর পক্ষে কাজের দিনে ছুটি নিয়ে দূতাবাসে যাওয়া প্রায়ই কঠিন।
কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত আবেদন, আমরা স্বীকার করি যে একটি দেশের দূতাবাসকে উভয় দেশের সরকারি ছুটি মেনে চলতে হয়। তবে প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিশেষ এবং জরুরি প্রয়োজন বিবেচনা করে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানাচ্ছি যেন এই নিয়মে একটি বিশেষ পরিবর্তন আনা যায় কি না?
প্রবাসীদের সুবিধার্থে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা১. সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (বিশেষ করে শুক্রবার) আংশিক সেবা চালু রাখা: কর্মজীবীদের কথা মাথায় রেখে, প্রতি শুক্রবার দিনটিতে দূতাবাসের রুটিন কাজের চাপ কিছুটা কমিয়ে শুধু পাসপোর্ট সেবা অথবা নির্দিষ্ট কিছু জরুরি সেবা সীমিত সময়ের জন্য চালু রাখা যেতে পারে। এর জন্য কর্মীদের বিশেষ ভাতার মাধ্যমে অতিরিক্ত কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
২. কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেবার ডিজিটাল রূপায়ন: ই-পাসপোর্টের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসে প্রয়োজনে অতিরিক্ত কর্মী (Staff) নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং সেবার প্রক্রিয়াকে আরও ডিজিটাল ও দ্রুততর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩. মোবাইল কনস্যুলার সেবা বৃদ্ধি: কুয়েতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন ঘন মোবাইল কনস্যুলার সেবা বা ক্যাম্প আয়োজন করলে দূতাবাস ভবনের ওপর চাপ কমবে এবং প্রবাসীরা সহজেই কাছাকাছি সেবা নিতে পারবেন। যদিও এই সেবাটি আগে কিছুদিন ছিল, তবে এখন সেবা বন্ধ অনেক দিন ধরে।
আমরা বিশ্বাস করি, যেখানে সরকার প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান দিচ্ছে, সেখানে তাদের অত্যাবশ্যকীয় সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই বিলম্ব ও ভোগান্তি কাম্য নয়।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আরও আন্তরিক ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করার জন্য এই নিয়মগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনাদের দ্রুত ও ইতিবাচক সাড়া কামনা করি।
মো. সাইফুল ইসলাম সামাজিক কর্মী, কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব স দ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো’—সিডনির মঞ্চে হিমু-রূপার নস্টালজিয়া
রোববারের সিডনির ম্যাকুয়ারি লিংকস গলফ ক্লাব হলজুড়ে ছিল হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের পরিচিত নস্টালজিয়ার আবহ। ‘পড়ুয়ার আসর’ আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠান ‘প্রিয় পদরেখা’ ছিল কেবল আলোচনা নয়, এ ছিল হুমায়ূনের সৃষ্টিকে অনুভব করার, তাঁর চরিত্রদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার এক আবেগঘন আয়োজন। গদ্য, পদ্য, গান ও নাট্য-আলাপ মিলেমিশে মনে রাখার মতো এক আসর।
অপূর্ব এক দৃশ্যের দেখা মিলল। তরুণ শিল্পী রূপন্তি আকিদ—সিডনির বাঙালি কমিউনিটির তরুণ অভিনেত্রী। নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ তাঁকে তরুণ প্রবাসী শিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। সেদিন তাঁর পরনে ছিল হিমুর স্বাক্ষররং নীল শাড়ি, হাতে হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমুর আছে জল’ উপন্যাস।
রূপন্তির পাশে ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা মাজনুন মিজান—গায়ে উজ্জ্বল হলুদ পাঞ্জাবি, হাতে ফুল। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন ও টেলিভিশনে দুই যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করা মিজান বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের নাটক, টেলিফিল্ম ও সিনেমায় কাজ করে দর্শকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও প্রবাসে নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন এবং সিডনির শিল্পমহলে তিনি পরিচিত ও সম্মানিত মুখ।
এই নাট্য-আলাপে হিমু ও রূপার ভূমিকায় অভিনয় করেন রূপন্তি ও মিজান। তাঁদের সংলাপ, দৃষ্টিভঙ্গি আর অভিনয়ের কোমল আবেগ যেন মঞ্চে সত্যিই ফিরিয়ে আনল হিমুর হাঁটাচলার সেই নরম আলো, রূপার শান্ত উপস্থিতি আর দুজনের অদ্ভুত অনুভবের জটিল সুন্দর সম্পর্ক।
নাট্য-আলাপ শুরু হতেই মঞ্চ যেন গল্পের পাতায় পরিণত হলো। যখন তাঁদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো—
‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’
‘না, ভালোবাসি না...কারণ, ভালোবাসলে তো প্রাপ্তির বাসনা থাকে। আমি তোমাকে অনুভব করি।’
তখন হলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল নিস্তব্ধতার গভীর ঢেউ। দর্শকের চোখে ভেসে উঠল হিমু-রূপার নরম, শীতল, হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্তগুলো।
পরিবেশ আরও আবেগময় হয়ে ওঠে পরিচিত সুরে—‘নেশা লাগিল রে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে...’
গানের সুর মিশে গিয়েছিল সিডনির প্রবাসী আবেগে—হিমুর হলুদ, নীল আর স্নিগ্ধ প্রেমের গন্ধে। ‘পড়ুয়ার আসর’-এর অন্যতম সদস্য রোকেয়া আহমেদ বলেন, ‘তাঁর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে সিডনিতে এই আয়োজন। আমরা চাই তাঁর সৃষ্টির আলো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাক। প্রবাসে থেকেও তাঁকে নতুন করে উপলব্ধি করার একটি জায়গা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুনগানের সুরে, মেজবানের ঘ্রাণে—সিডনি যেন এক দিনের চট্টগ্রাম১০ নভেম্বর ২০২৫একজন মুগ্ধ দর্শক অনুষ্ঠান শেষে মন্তব্য করেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন গল্পের চরিত্ররা সত্যি সত্যি সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আলোচনার প্রতিটি কথাই হৃদয় ছুঁয়ে গেল।’
রোববারের সিডনির ম্যাকুয়ারি লিংকস গলফ ক্লাব হলজুড়ে ছিল হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের পরিচিত নস্টালজিয়ার আবহ