কেন মুশফিকুরের সেঞ্চুরি পর্যন্ত অপেক্ষা করলো না বাংলাদেশ?
Published: 22nd, November 2025 GMT
টেস্ট ক্রিকেটে শততম টেস্টে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন রিকি পন্টিং। মুশফিকুর রহিমের সেই সুযোগ ছিল। ঢাকায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রান করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও তার ব্যাট থেকে আসে ঝকঝকে ৫৩ রান।
দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। ঘণ্টা দেড়েক বা এক সেশন পেলেই হয়তো আরেকটি তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলতেন। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট মুশফিকুরের সেঞ্চুরির অপেক্ষা করেননি। ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ ৫০৯ রানের বিশাল টার্গেট দেয় আয়ারল্যান্ডকে।
আরো পড়ুন:
ভালোবাসা, গর্বে মোড়ানো মুশফিকের ‘একশ’ টেস্ট
তার ১০০-২০০ করার অভ্যাস আছে, মুশফিকুরের সেঞ্চুরি নিয়ে মুমিনুল
মুশফিকুরকে সেঞ্চুরির সুযোগ দেওয়া যেত কিনা সেই প্রশ্ন উঠল দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে। ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল জানালেন, টিম ম্যানেজমেন্ট দলের কথা ভেবেই ইনিংস ঘোষণা করেছে। মুশফিকুরের ব্যক্তিগত মাইলফলকের কথা চিন্তা করেনি। অবশ্য মুশফিকুরের বিষয়টি চিন্তা না করলেও মুমিনুলকে সুযোগ দিয়েছিল দল।
লিড পাঁচশ ছাড়ানোর পরও ব্যাটিং চালিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল তখন ছিলেন আশির ঘরে। কিন্তু ৮৭ রানে তার ইনিংস কাটা পড়ে লেগ স্পিনার হোয়ের বলে। এরপরই বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে।
নাজমুল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে ইনিংস ঘোষণা করলে মুশফিকুরও দৌড়ে বেরিয়ে আসেন মাঠ থেকে। তিনিও স্পোর্টিংলি বিষয়টি গ্রহণ করেছেন তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
আশরাফুলও একই কথা বললেন দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে, ‘‘আসলে এটা একটা দলগত খেলা। ব্যক্তির কথা চিন্তা করে না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, ব্যাক্তি পারফরম্যান্স করলেই টিম পারফরম্যান্সটা হয়। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে… আমাদের অলরেডি ৫০০ রান হয়ে গিয়েছে।‘’
‘‘আয়ারল্যান্ডের ১০ উইকেট নিতে আমাদের যেই ওভার ছিল তা প্রয়োজন ছিল। হ্যাঁ আপনি চাইলে আরো এক ঘণ্টা খেলাতে পারতেন। কিন্তু আসলে জিনিসটা সুন্দর লাগবে না স্পিরিট অফ ক্রিকেটে। এই কারণেই আমাদের ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করেছে (ইনিংস ঘোষণার)। মুমিনুল কাছাকাছি ছিল। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আনলাকি সে করতে পারেনি।’’ - যোগ করেন তিনি।
কোচ হিসেবে আশরাফুলের যাত্রা শুরু হয়েছে এই সিরিজ দিয়েছে। মুশফিকুর, মুমিনুলের সঙ্গে তিনি একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করেছেন। তাদের সঙ্গে কাজ করা, বোঝাপড়া কেমন যাচ্ছে জানাতে গিয়ে আশরাফুল বলেছেন, ‘‘আমি যখন ছিলাম মুশফিকুরের অভিষেক হয়েছে আমার সামনে এবং মুমিনুলের টেস্ট ক্যাপটা আমি গিয়েছিলেন। গলে তার অভিষেক হয়েছিল ২০১৩ সালে। এছাড়া আর বাকি সবার সাথে আমার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি।’’
‘‘সবাই খুব সুন্দর মতোই আমাকে গ্রহণ করেছে। আমিও আমার চেষ্টা করছি যে আমার অভিজ্ঞতাগুলো তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে। এই লেভেলে আপনার টেকনিক নিয়ে অত বেশি পরিবর্তন করার কিছু নাই। শুধুমাত্র মানসিক সহযোগিতকা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা বল খেলার সময় আপনার রুটিনটা কেমন হওয়া উচিত। ওই জিনিসগুলোই যদি শুধু মনে করিয়ে দিতে পারে তাহলেই এনাফ। কোচিং স্টাফ বলেন খেলোয়াড় সবাই খুব সাপোর্ট করছে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৮ দেশের ১ হাজার ৮০০ তরুণ–তরুণীর অংশগ্রহণে ‘টেক কানেক্ট’–এর সমাপনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সহযোগিতায় গ্রো ইয়োর রিডার ফাউন্ডেশন (জিওয়াইআরএফ)–এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘টেক কানেক্ট: এমপাওয়ারিং ইয়ুথ টু বিকাম গ্লোবাল সিটিজেনস’ প্রকল্পের সমাপনী প্রদর্শনী আজ শনিবার ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ হাজারো দর্শক অনলাইনে যুক্ত হন।
দুই ঘণ্টার এই বর্ণিল আয়োজনে বাংলাদেশ, ক্যামেরুন, কানাডা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের শিক্ষার্থীরা এক মঞ্চে মিলিত হন, যা দীর্ঘ এক বছরের আন্তসাংস্কৃতিক শিক্ষাযাত্রার আনন্দঘন সমাপ্তি। শিক্ষার্থীরা তাঁদের সৃজনশীলতা, শেখার অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক নাগরিকত্বের উপলব্ধি বিভিন্ন পারফরম্যান্স ও উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রজেক্টে তিনটি মহাদেশের আট দেশের মোট ১ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন। বছরজুড়ে জিওয়াইআরএফ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে শিক্ষা মডিউল তৈরি, কর্মশালা পরিচালনা ও অনলাইন এক্সচেঞ্জ সেশন আয়োজন করে। এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া গড়ে তুলেছে এবং প্রমাণ করেছে প্রযুক্তি কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে তরুণদের একত্রে শেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অনুষ্ঠানে পুরো মিলনায়তন ভরে ওঠে আবেগ, সুর, নৃত্য ও রঙিন এক উদ্দীপনায়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নৃত্য, নাটক, গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে দেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, উৎসব–অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, স্থিতিস্থাপকতা ও বৈচিত্র্যের গল্প তুলে ধরেন। অপর দিকে আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার শিক্ষার্থীরা তাঁদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতাকে প্রাণবন্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
পারফরম্যান্সগুলোয় উঠে আসে ঐতিহাসিক চেতনা, সাংস্কৃতিক দৃঢ়তা ও বৈশ্বিক নাগরিকত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। শিক্ষার্থীরা তাঁদের দেশ ও সমাজের গল্প শেয়ার করেন। আর শিক্ষক ও অতিথিরা ব্যাখ্যা করেন কীভাবে আন্তসাংস্কৃতিক সহযোগিতা তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, সংযোগ ও বোঝাপড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে শ্রেণিকক্ষে গ্লোবাল সিটিজেনশিপ এডুকেশন অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, ‘টেক কানেক্ট’–এর মতো উদ্যোগ তরুণদের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রস্তুত হতে সহায়তা করে এবং প্রযুক্তিনির্ভর আন্তসাংস্কৃতিক সংযোগের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়।
প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সাবভীনা মনীর চিঠি ও বিশেষ অতিথি ইউনেসকো ঢাকা অফিসের প্রধান সুজান ভাইজ শিক্ষার্থীদের সাফল্য ও এ ধরনের আন্তসাংস্কৃতিক কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন।
গ্রো ইয়োর রিডার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাদিয়া জাফরিন বলেন, এ প্রজেক্টটি প্রযুক্তিনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সৃজনশীল শিক্ষা গঠনে জিওয়াইআরএফের স্বপ্নকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ৪০০–এর বেশি অংশগ্রহণকারী সরাসরি উপস্থিত ছিলেন, আর অনলাইনে জিওয়াইআরএফের ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ৭০ হাজারের বেশি দর্শক যুক্ত হন। ‘টেক কানেক্ট’ প্রজেক্টটি এসডিজি ফোর (মানসম্মত শিক্ষা) ও এসডিজি সেভেনটিন (লক্ষ্য অর্জনে পার্টনারশিপ) অর্জনে জিওয়াইআরএফের অঙ্গীকারকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে, যেখানে শেখা, সংযোগ ও পারস্পরিক সহমর্মিতার মাধ্যমে তরুণেরা হয়ে উঠছেন বিশ্বমানের নাগরিক।