জাপানে ইতিহাসে গড়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তাকাইচি
Published: 21st, October 2025 GMT
সানায়ে তাকাইচি জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে জাপানের শাসক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) এই নারী প্রার্থী নিম্ন ও উচ্চ—দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। তিনি নিম্নকক্ষে ২৩৭ ভোট ও উচ্চকক্ষে ১২৫ ভোট পেয়েছেন।
জাপানের ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিত তাকাইচি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী এবং তাঁর মতোই দৃঢ় রক্ষণশীল ভাবধারার রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত।
জাপানে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। তাই, এই জয়কে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে তাকাইচি জাপানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। তিনি এমন এক সময় ক্ষমতায় এলেন, যখন এলডিপি দল রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। তাদের জনসমর্থনও বেশ কমে যাচ্ছে।
ঠিক এমন এক সময়ে তাকাইচির জয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জাপান এখনও লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।
তবে তরুণ জাপানি নারীদের অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন যে রক্ষণশীল তাকাইচি নারীর অধিকারকে এগিয়ে নেবেন কি না। তাঁদের একজন বলেন, তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ খুঁজে দেখলে দেখা যায়, তিনি বরং পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখতে চান।
আরও পড়ুননতুন জোট সরকার গঠনের পথে জাপান, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তাকাইচি১৯ অক্টোবর ২০২৫চলতি মাসের শুরুতে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দল এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন। তবে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে পড়লে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। এর পর থেকে এলডিপি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, যা তাকাইচির প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনাকে আবারও জোরদার করে তুলেছে। এলডিপি তাকাইচিকে জোট গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে।
অবশেষে আজ মঙ্গলবার ভোটাভুটিতে তাকাইচি জাপানের দুই কক্ষে নির্বাচিত হয়েছেন।
আরও পড়ুনসানায়ে তাকাইচির পুলসিরাত পার হওয়া এবং কোন জাপানের স্বপ্ন তিনি দেখছেন১৭ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম ন র র জন ত ক এলড প
এছাড়াও পড়ুন:
আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা
আজ ৬ ডিসেম্বর, ফেনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে শত্রুমুক্ত হয় ফেনী। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর স্বাধীনতার প্রতীক লাল সবুজের পতাকা প্রথমবারের মতো ফেনীর আকাশে ওড়ে।
ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে ফেনীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। শহিদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন বিজয়ের মুহূর্ত।
আরো পড়ুন:
আজ খোকসা মুক্ত দিবস
আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভোর থেকেই সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর পূর্বাঞ্চল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ফেনী শহরে প্রবেশ করতে থাকে। পরে শহরের রাজাঝির দীঘির পাড়ে ডাকবাংলোর সামনে ফেনীতে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে জড়ো হওয়া মুক্তিসেনারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।
এ সময় সাধারণ মানুষও মিছিল দেখে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। বিকেল নাগাদ সেখানে বিএলএফ কমান্ডার জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে যুক্ত হন আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় ‘ফেনীর রাজা’খ্যাত খাজা আহম্মদ সব মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়তে আহ্বান জানিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের লক্ষণ দেখে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকবাহিনী আর তাদের দোসরেরা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই দীর্ঘ নয় মাসের বজ্রকঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিকামীরা লাল-সবুজের পতাকা ফেনীর আকাশে ওড়ান।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য ফেনীর ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চারজন বীর উত্তম, সাতজন বীর বিক্রম এবং ২০ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
সেদিনের বিবরণ দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধারা সকালেই ফুলগাজীর বন্দুয়া থেকে এসে ফেনী সার্কিট হাউজে (বর্তমান ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজ) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। বিকালের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক জয়নাল আবেদীন ভিপির নেতৃত্বে মুজিববাহিনী রাজাপুর, কোরাইশ মুন্সী ও সোনাগাজীর নবাবপুর থেকে ট্রাংক রোডে চলে আসেন। সন্ধ্যায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশ করেন।
রণাঙ্গনের এ যোদ্ধা আরও বলেন, ‘‘একটি স্বাধীন দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা জীবন বাজি রেখে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি। আফসোস স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ এখনও বিনির্মান হয়নি। আমাদের অনেক পরে ভিয়েতনাম স্বাধীন হয়েছে। ভিয়েতনাম কোথায় আর আমরা কোথায়? আমার বিশ্বাস এখনও তরুণ প্রজন্ম চাইলে এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য সবার আগে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।’’
মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের শুরুতেই গেরিলা যুদ্ধের নীতি ‘হিট অ্যান্ড রান’ প্রয়োগ করে যুদ্ধ করতে করতে আমরা পাঁচগাছিয়া এলাকার কাছাকাছি চলে আসি। রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এদিকে এসে হিট (হামলা) করে আবার চলে যাই। ৫ ডিসেম্বর আমরা ঠিক ফেনীর কাছাকাছি যখন আসি তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রণভঙ্গ দিয়ে শেষ রাতের দিকে শুভপুর ও বারইয়ারহাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।’’
ঢাকা/সাহাব//