Risingbd:
2025-12-06@15:38:33 GMT

সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮০ শতাংশ 

Published: 21st, October 2025 GMT

সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮০ শতাংশ 

“স্বাধীনতার আগে এ দেশে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নৌ ও রেলপথে ৮০ শতাংশ এবং সড়কে ২০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ছিল। তাই, সড়কে দুর্ঘটনা ২০ শতাংশে সীমিত ছিল। স্বাধীনতার পরে দাতা সংস্থাগুলোর প্রেসক্রিপশনে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বেহিসেবী লুটপাট, সড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করে ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত সড়কে নিয়ে আসায় সড়ক দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।”

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো.

মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের চাদাঁবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে সড়কের বিশৃঙ্খলা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, লাইসেন্সবিহীন চালক, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, সড়কে ত্রুটি, চালকের মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গতি, অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সবিহীন-প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতে যানবাহন তুলে দেওয়াসহ নানা কারণে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি শুধু গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য পেলেও দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র বলছে, হতাহতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। একই সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার। এসব যুদ্ধে যে পরিমাণ লোক মারা গেছে, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তার চেয়ে বেশি। এমন ধারাবাহিক সড়কহত্যা বন্ধে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নানা খাতে এগিয়ে গেলেও দীর্ঘদিন যাবত দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে নিরাপদ ও স্বাশ্রয়ী নৌ ও রেলপথের ব্যবহার বন্ধ করে একের পর এক সড়ক সম্প্রসারণ, সড়কের ব্যবহার বাড়ানোর সাথে সাথে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে সড়কের ওপর একচেটিয়া চাপ বাড়ানো হয়েছে। সে তুলনায় সড়কে ম্যাস ট্রানজিট বাড়ানো হয়নি। পথচারীদের হাঁটার অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। উন্নত গণপরিবহনের অভাবে মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে। পরিবহনের ভয়াবহ সংকটকে পুঁজি করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি নসিমন-করিমন, পাশ্ববর্তী দেশের তৈরি মাহিন্দ্রা, পিয়াজিও, পিকআপ ভ্যানকে লেগুনা বানিয়ে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহারের কারণে বাস নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গেছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের ইতিহাসে সড়ক মন্ত্রণালয়ের এক যুগেরও বেশি সময়ের মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের পরিবহনে বিশৃঙ্খলা থামাতে ও কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় চরম গলদ করায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরেও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের নীতি ও কৌশল পরিবর্তন না হওয়ায় দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে, সড়কে গণহত্যা বন্ধে যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এই সেক্টরে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে পরিবহন সেক্টর সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি আরো বাড়বে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উন্নত গণপরিবহন নামানোর পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিয়ে রাস্তায় নামানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও নানা গলদ থাকায় এই কার্যক্রম শুরু করা হলে এক বছরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর অটোরিকশার কারণে অচল হয়ে যাবে। তাই, এ সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত এসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানিজটের (পাতাল মেট্রোরেল) ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লেন চালু করলে উন্নত দেশের আদলে পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরত আসবে। যাতায়াতে গতি বাড়বে। সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে। মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে। দেশের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্তি মিলবে।

আগামীকালের নিরাপদ সড়ক দিবসকে সামনে রেখে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবন- সম্পদ রক্ষায় ১২ দফা সুপারিশ পেশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

১. হারিয়ে যাওয়া নৌ ও রেলপথ সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

২. চাদাঁবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি, মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবহন খাত আপাদমস্তক সংস্কার করতে হবে।

৩. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানিজটের (পাতাল মেট্রোরেল) ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (আলাদা উন্নতমানের বাস লেন) চালু করতে হবে।

৫. সারা দেশে জেলা শহর থেকে উপজেলায় মানসম্পন্ন বাস নামিয়ে যাতায়াতে শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

৬. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

৭. উন্নত কারিকুলাম তৈরি করে পরিবহন চালকদের রাষ্ট্রের খরচে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

৮. উন্নত দেশের আদলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তুলতে হবে।

৯. সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নিতে হবে। প্রতিটি হতাহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে।

১০. পরিবহন সেক্টরে যাত্রীদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ফোরামে যাত্রী প্রতিনিধি তথা ভুক্তভোগীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

১১. সড়ক সেক্টরে আইনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

১২. সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন ও নিরাপদ ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন—যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ব ভ গ য় শহর দ র ঘটন য় ব যবস থ পর বহন উদ য গ র পর ব ন র পদ সরক র সড়ক র পর এক ক সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

পূর্বাচলে গাড়ির প্রদর্শনী

২ / ১১৫০ বছরের বেশি পুরোনো ফক্সভাগেন গাড়ির সামনে ছবি তুলছেন প্রদর্শনীতে আসা দর্শক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ