এই কিছুদিন আগেই তো বহু মানুষের ভেতর থেকে বেলারুশের কবি ও গায়ক ভ্লাদিমির লেনকেভিচকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর অপরাধ, তিনি ‘কুপালিঙ্কা’ গাচ্ছিলেন রাস্তায়। ‘কুপালিঙ্কা’ হচ্ছে একটা গান যেটা লিখেছিলেন আরেক বেলারুশীয় কবি মিশেজ জার্যনট, যাঁকে ১৯৩৭ সালে রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, তিনি শেষ কবিতাটি লিখে রেখে গিয়েছিলেন জেলখানার দেয়ালে, যখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘দেশে দেশে কালে কালে বাক্রোধ করার চেষ্টায় এই নৃশংসতা কীভাবে চলে, আর কীভাবেই বা তার থেকে উত্তরণেরও একটা স্বপ্ন–আশ্বাস থেকে যায় দর্পিত মানুষের মনে’! বলেছিলেন ‘অজেয় লিপি’ নামের ব্রেখটের সেই কবিতার কথা, যেখানে আছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ইতালীয় এক জেলবন্দীর কথা। জেলের দেয়ালে কপিং পেনসিল দিয়ে সেই বন্দী, সোশ্যালিস্ট সৈনিক লিখেছিলেন: ‘দীর্ঘজীবী হোন লেনিন’। জেলারের নির্দেশে একবালতি চুন দিয়ে মুছে দেওয়া হলো সেই লেখা। মুছে তো গেলই না, বরং অক্ষরগুলোর ওপর চুন বুলিয়েছিল বলে আরও জ্বলজ্বল করে উঠল লেখাটা। গোটা দেয়ালে তখন বুলিয়ে দেওয়া হলো চুন। চুন শুকিয়ে যেতেই আবারও ফুটে উঠল সেই লেখা। তখন একটা ছুরি দিয়ে কেটে কেটে নেওয়া হলো অক্ষরগুলো। ফলে দেয়ালে এবার গভীর করে খুঁড়ে তোলা অক্ষরগুলো পড়া গেল। তখন সৈনিকটি বলে উঠল, ‘এবার তবে দেয়ালটাকেই ভাঙো।’ আবার আমাদের মনে পড়ে যে স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময় গুলি করে মারা হয়েছিল লোরকাকে (১৯৩৬)। সমবেত জনতার সামনে দিয়েই হাতে শিকল বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কবিকে। অস্ফুট হৃষ্টতায় কবি তখন উচ্চারণ করছিলেন, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, মানুষের মুক্তি আসুক। আমার শিকল খুলে দাও।’ কিন্তু তাঁকে গুলি করা হলো। প্রথম গুলি কানের পাশ দিয়ে গেল। কবি হাসলেন। দ্বিতীয় গুলিতে তাঁর বুক ফুটো হয়ে গেল। তৃতীয় গুলি ভেদ করে গেল তাঁর কণ্ঠ। কিন্তু তবু কবি শান্তভাবে বললেন, ‘আমি মরব না।’ চতুর্থ গুলিতে বিদীর্ণ হলো কপাল। যে খুঁটিতে তাঁকে বাঁধা হয়েছিল, পঞ্চম গুলিতে মড়মড় করে উঠল সেটা। আর ষষ্ঠ গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেল তাঁর ডান হাত। মাটিতে পড়ে থাকা ছিন্ন হাতের দিকে তাকিয়ে কবি বলতে চাইলেন, ‘বলেছিলাম না, আমার হাত শিকলে বাঁধা থাকবে না।’
আমি বুঝতে পারছি খুন করা হয়েছে আমাকে।
তারা কাফে, কবরখানা আর গির্জাগুলো
তন্ন তন্ন করে খুঁজছে।
তারা সমস্ত পিপে আর কাবার্ডগুলো
তছনছ করছে।
তিনটে কঙ্কালকে লুট করে
খুলে নিয়ে গেছে সোনার দাঁত।
আমাকে তারা খুঁজে পায়নি।
কখনোই কি পায়নি তারা?
[অমিতাভ দাশগুপ্ত ও কবিতা সিংহের ‘লোরকার শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বই থেকে]
সৈনিক লিখেছিলেন: ‘দীর্ঘজীবী হোন লেনিন’। জেলারের নির্দেশে একবালতি চুন দিয়ে মুছে দেওয়া হলো সেই লেখা। অক্ষরগুলোর ওপর চুন বুলিয়েছিল বলে আরও জ্বলজ্বল করে উঠল লেখাটা। গোটা দেয়ালে তখন বুলিয়ে দেওয়া হলো চুন। চুন শুকিয়ে যেতেই আবারও ফুটে উঠল সেই লেখা। ছুরি দিয়ে কেটে কেটে নেওয়া হলো অক্ষরগুলো। দেয়ালে এবার গভীর করে খুঁড়ে তোলা অক্ষরগুলো পড়া গেল। তখন সৈনিকটি বলে উঠল, ‘এবার তবে দেয়ালটাকেই ভাঙো।’নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক
‘ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের সময়, অনেক বিপ্লবী সাহিত্য ব্রিটিশরা নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ, এগুলো তৎকালীন ভারতে তাদের শাসনের “নিরাপত্তা”র পক্ষে “বিপজ্জনক” হয়ে উঠেছিল।’—ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসডটকমের এ রকমই একটা সংবাদে এসে চোখ পড়ে সেদিন। দিনটি ছিল ৯ই জুলাই ২০২২। ‘স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে সরকার এখন সাহিত্যের এই অংশ আবার তুলে ধরছে। পরাধীন ভারতের সেই লেখাগুলোকে জনপ্রিয় করার জন্য অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও কাজে লাগানো হয়েছে।’—বেশ ভালো লাগছিল পড়ে। ‘স্বাধীন স্বর’ নামে অমৃত মহোৎসব ওয়েবসাইটের একটি অংশে বাংলা, গুজরাতি, হিন্দি, কন্নড়, মারাঠি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু ও উর্দু ভাষায় ১৯৪৭ সালের আগে লেখা কবিতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রক, ৭৫ সপ্তাহব্যাপী এই অমৃত মহোৎসবে ব্রিটিশ রাজের নিষিদ্ধ করা কবিতা, লেখা ও প্রকাশনাগুলো চিহ্নিত করেছে। সেই সব লেখাকে ক্যাটালগ আকারে একত্র করেছে, যা ন্যাশনাল আর্কাইভসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ৯টি আঞ্চলিক ভাষা—বাংলা, গুজরাতি, হিন্দি, মারাঠি, কন্নড়, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, তেলেগু, তামিল ও উর্দু ভাষায় সেসব লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় লেখা। এই সুন্দর কাজও রাষ্ট্রই করছে। আবার আমাদের মনে পড়ছে কবি একরাম আলির ওই কথাও, ‘কবিতা প্রকৃতপক্ষে এমনই, যা হৃদয় পুঁজে পরিপূর্ণ হওয়ার চেয়েও ভয়ংকর। কবিতার যে সর্বগ্রাসী ধ্বংসোন্মুখতা আছে, অন্তত কবির জীবনে, হাঙরের ঢেউয়ে সাঁতার কাটার বিপজ্জনক সেই তরঙ্গকে আমি দেখতে চেয়েছিলাম।.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মিঠুর জোড়া গোলে আবারও সেমিফাইনালে এআইইউবি
গতবারের রানার্সআপ হিসেবে মাঠে নামার আগেই মানসিকভাবে এগিয়ে ছিল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)। মাঠে নেমে নিজেদের শক্তিটা ভালোই দেখিয়েছে তারা। আর সেই শক্তির সামনে পেরে ওঠেনি গতবারের সেমিফাইনালিস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়ে ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে তৃতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছে এআইইউবি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে আজ সকালে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রেয়তর দল হিসেবেই জিতেছে এআইইউবি। বাংলাদেশের শীর্ষ লিগের কয়েকজন খেলোয়াড় খেলেছেন দলটিতে। গোলপোস্টের নিচে ছিলেন পুলিশ এফসির গোলকিপার আসিফ ভূঁইয়া, একই দলের ফরোয়ার্ড মঈন আহমেদ, ঢাকা মোহামেডানের ডিফেন্ডার আজিজুল হক, রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার অলফাজ মিয়া, আরমাবাগের মিডফিল্ডার আক্কাস আলী ও ওমর ফারুক মিঠু খেলেন। গত ম্যাচে খেলতে না পারা মোহামেডানের ফরোয়ার্ড সৌরভ দেওয়ানকেও আজ পেয়েছে এআইইউবি।
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিচ্ছেন এআইইউবির ওমর ফারুক মিঠু