ক্ষমতার রাজনীতির প্রথম নিয়ম হচ্ছে কেউ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়ে না। দ্বিতীয় নিয়ম হচ্ছে গতকালের মিত্র আজকের শত্রু হতে পারে, আজকের শত্রু কালকের বন্ধু হতে পারে। এই দুই নিয়মই এখন গাজায় বাস্তব রূপ নিচ্ছে। খবর আসছে যে হামাস আবারও গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে।

যুদ্ধের অভিঘাতে গাজার প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। হামাস হয়তো সংখ্যায় কমে গেছে, কিন্তু তাদের মনোবল এখনো অটুট। তারা এখন প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির পর গাজায় কোন গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করবে, তার প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এটাকে হামাস ও তাদের শাসনে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষের মধ্যকার সংঘাত বলে উপস্থাপন করতে চাইছেন। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও গাজার বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল ও ধোঁয়াশাপূর্ণ।

হামাসকে চ্যালেঞ্জ জানানো গোষ্ঠীগুলো মূলত গোত্রভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। এদের অপরাধ ও সহিংসতার ইতিহাস দীর্ঘ। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আদর্শে অনুপ্রাণিত মুক্তিসেনা তারা নয়। তারা ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের প্রতীক ‘কেফিয়ার’ ধ্বজাধারীও নয়। খুব খোলাখুলিভাবে বললে, তারা নির্লজ্জ রকমের ঠগ চরিত্রের। দশকের পর দশক ধরে তারা ক্ষমতার হাওয়া বুঝে নিজেদের অবস্থান বদলাতে অভ্যস্ত।

আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতিতে কে জিতল—ইসরায়েল নাকি হামাস?১০ অক্টোবর ২০২৫

হামাস যখন কঠোর হাতে গাজা শাসন করত, এই গোত্রগুলো তখন তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলত। বিনিময়ে গাজার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালে এরা নিজেদের সদস্যদের সামান্য কিছু অর্থনৈতিক সহায়তাও দিয়েছে। এখন তারা মনে করছে, তাদের নিজেদের সামনেই ক্ষমতা দখলের সুযোগ এসেছে।

সংঘাতের হেরে যাওয়া পক্ষের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা যুদ্ধের মতোই প্রাচীন একটি বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে লুকিয়ে থাকা জাপানি সেনা থেকে শুরু করে ইরাক দখলের পর সাদ্দাম হোসেনের অনুগত যোদ্ধা—সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পরাজিত শক্তি সচরাচর পরাজয় মেনে নেয় না। ২০০৭ সাল থেকে গাজায় ক্ষমতায় থাকা হামাসের জন্য এ লড়াই আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হামাস কেবল একটি সরকার বা সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়—এটি একটি আদর্শ, একটি সামাজিক আন্দোলন এবং পৃষ্ঠপোষকতার একটি নেটওয়ার্ক। গাজায় ক্ষমতা হারানো মানে হচ্ছে হামাসের অস্তিত্ব নাই হয়ে যাওয়া।

গাজার আকাশে এখনো ঘুরে ঘুরে শকুন উড়ছে। সম্ভবত দীর্ঘদিন ধরেই উড়তে থাকবে। হামাস সহজে তাদের কর্তৃত্ব ছাড়বে না, গোত্রগুলো সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে আর পিআইজে তাদের মুহূর্ত আসার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। এদিকে সাধারণ গাজাবাসীকেই মূল্য চুকিয়ে যেতে হবে।

হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া গোষ্ঠীগুলোও সময় নিয়ে নিজেদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে। তারা বিজয়ী পক্ষের (ইসরায়েল) সমর্থনও পাচ্ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল হামাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পাশ কাটিয়ে এই গোত্রগুলোর শক্তি বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে হামাস শক্তিশালী ডগমুশ গোত্রের একজন নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, ত্রাণ কাফেলা লুট করেছেন এবং সেই মাল কালোবাজারে বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে ‘শাবাব’ নামে পরিচিত আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের সমর্থন পাচ্ছে।

ডগমুশ, শাবাবের মতো কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গোত্রভিত্তিক সংগঠন খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। কিছু পশ্চিমা বিশ্লেষক এটিকে হামাসের চরমপন্থী আদর্শের প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখছেন। কিন্তু এটি গাজার রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি ভুল একটি ধারণা। ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ও লেবাননে এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ইতিহাস দীর্ঘদিনের, যারা সুবিধাজনক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করেছে, কিন্তু ক্ষমতা সংহত হওয়ার পর তারা তাদের সাবেক পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ ইসর য় ল র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

লালন সাঁইয়ের তত্ত্ব আলোচনা, গানে গানে মুখর সন্ধ্যা

লালন সাঁইয়ের গান নিয়ে আলোচনা আর গানে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান হয়ে গেল। আজ শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘নদীয়ার ভাবুকতার ইতিহাসে ফকির লালন শাহ, সংগীত ও তাত্ত্বিক পর্যালোচনা অনুষ্ঠান’–এর আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি ও নবপ্রাণ আন্দোলন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল চারটা। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাঁর পৌঁছাতে দেরি হয়। পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, জাতীয় পর্যায়ে লালনকে ধারণ ও উপস্থাপন করা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এটা তিনি উপলব্ধি করেছেন জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। এ ক্ষেত্রে বড় বাধাটা আসে বুদ্ধিবৃত্তিক মহল থেকে, ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে নয়। তবু শেষাবধি সেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, লালন সাঁইয়ের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমেই বাড়ছে। তাঁকে নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। লালন সাঁইসহ আরও অনেক বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করা প্রয়োজন। সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান আলোচক কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘লালন সাঁই নিজেকে কখনো বাউল বলে পরিচয় দেননি। বাউল সম্পর্কে আমাদের এখানে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করা হয়েছে। এর কুফল আমরা ভোগ করছি। লালন সাঁইয়ের গান ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁর গানের ভাবের প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারিনি।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, লালন সাঁইকে দেখার জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন অনেকটা পাল্টেছে। আগে লালনের রচনা লোকসাহিত্য হিসেবে পড়ানো হতো। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে তাঁর রচনা কবিতা বা গীতিকবিতা হিসেবে পাড়ানো হচ্ছে। তাঁর দর্শন পশ্চিমা দার্শনিকদের মতোই জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা সম্ভব।

স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব সেলিম রেজা। ধন্যবাদ জানান কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রোমেল।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার

সম্পর্কিত নিবন্ধ