নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, চট্টগ্রাম চেম্বারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। চেম্বারের নির্বাচনে দুই শ্রেণির প্রার্থীকে সুযোগ না দিতে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছেন চার ব্যবসায়ী। তাঁদের একজন এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। গত বুধবার রিট শুনানির পর ওই দুই শ্রেণিকে ছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য রুল নিশি জারি করেছেন হাইকোর্ট।

চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে ১২ জন সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জন সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হন সভাপতি ও দুই সহসভাপতি। তবে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে এবার পরিচালক হওয়ার পথে রয়েছেন তিনজন করে মোট ছয়জন। অতীতের বিধান অনুযায়ী, এসব গ্রুপ থেকে সরাসরি পরিচালক নির্বাচিত হন। এ কারণে নির্বাচনে এই দুই শ্রেণির অংশগ্রহণ বাদ দিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক ব্যবসায়ী।

চেম্বার সূত্রে জানা যায়, চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপ অনেকটা অকার্যকর। টাউন অ্যাসোসিয়েশন চারটি হলো পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। আর চারটি ট্রেড গ্রুপ হলো চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস গ্রুপ, চিটাগাং ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার গ্রুপ এবং চিটাগাং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স গ্রুপ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে তাদের নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এই আটটির মধ্যে ছয়টির প্রতিনিধিরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংগঠনগুলো অকার্যকর প্রমাণ হওয়ার পরও তাঁদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ায় এফবিসিসিআইয়ের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল। আদালতেও এ বিষয়ে রিট করেন তিনি।

রিটকারীর আইনজীবী মো.

সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে তদন্ত করে আটটি ট্রেড ও টাউন গ্রুপকে অকার্যকর পাওয়া গিয়েছিল। তাই তাদের বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে ৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে ৪ সেপ্টেম্বরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি স্থগিত করে অকার্যকর সংগঠনগুলোকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে রুল জারি করেছেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোট গ্রহণ আগামী ১ নভেম্বর। সর্বশেষ এই চেম্বারে ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি গঠিত হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। প্রায় এক যুগ পর ভোটের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন হতে চললেও নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আছে একটি পক্ষের।

আদালত ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হওয়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্রেড এবং টাউন গ্রুপ শ্রেণিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ এম এ লতিফ চেম্বারকে নিজের পারিবারিক চেম্বারে পরিণত করেছিলেন। তাঁর ছেলে ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি ওমর হাজ্জাজও ট্রেড গ্রুপ থেকে বিনা ভোটে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘আমাদের গ্রুপের সব নথিপত্র থাকার পরও আমাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ আটটি অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চেম্বারের নির্বাচন ঘিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব আসুক।’

এদিকে অকার্যকর টাউন ও ট্রেড শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছিলেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এস এম নুরুল হক ও চেম্বারের সদস্য আজিজুল হক। গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফা শুনানি হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।  
এ বছর নির্বাচনে ইতিমধ্যে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছে ব্যবসায়ীদের দুটি পক্ষ।

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে আছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। অন্যদিকে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক। তাঁরা দুজনই এর আগে চট্টগ্রাম চেম্বারে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আদালতের আদেশে যে আটটি সংগঠনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ স্থগিত হয়েছে, তার একটি চিটাগাং ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে চেম্বার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আমিরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতে যেহেতু জবাব দেওয়ার সুযোগ আছে রুলের, আমরা সেখানে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।’

জানতে চাইলে চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আহমেদ হাছান বলেন, ‘আমরা এখনো আদালতের আদেশের সার্টিফায়েড কপি (নকল) পাইনি। তাই এই মুহূর্তে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ইমপ র ট র স দ বন দ ব এফব স স হয় ছ ন র ল হক হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে কাবাডি খেলায় হাজারো দর্শক, ফিরে এলো হারানো ঐতিহ্য

 

গ্রামবাংলার মাঠে-মাঠে একসময় জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হতো কাবাডি বা হাডুডু খেলা। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক খেলাধুলার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশের এই জাতীয় খেলা। তবে দীর্ঘদিন পর সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক চেঙ্গাকান্দী গ্রামের তরুণরা। 

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে চেঙ্গাকান্দী বালুর মাঠে আয়োজিত হয় এক চমৎকার কাবাডি প্রতিযোগিতা। আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শক মাঠে ভিড় জমান। দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা যেন ফিরে এসেছে গ্রামবাংলার সেই সোনালি দিন।

খেলার আয়োজক শরীফ বলেন, হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা হলেও আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এই আয়োজন করেছি। এলাকাবাসীর সহায়তায় আজ তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় লাল দল ও নীল দল মুখোমুখি হয়। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই ম্যাচে দুই দলই সমানভাবে জয় ভাগাভাগি করে নেয়।

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় দর্শক মো. সিদ্দিক বলেন, এখন সবাই ক্রিকেট আর ফুটবলে ব্যস্ত। কিন্তু কাবাডিই তো আমাদের শিকড়ের খেলা। আজ এত মানুষ দেখে মনে হলো পুরোনো সময় ফিরে এসেছে।

দর্শক তারা মিয়া বলেন, এই খেলা আমাদের গ্রামের মানুষকে একসাথে করে। আজকে ছেলেমেয়েরা, বৃদ্ধ সবাই মিলে মাঠে এসেছে এটাই তো আসল আনন্দ। এমন আয়োজন বারবার হলে গ্রামের সংস্কৃতি টিকে থাকবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও বারদী ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক আব্দুল আলী বলেন, কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা হলেও আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করা গেলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে এবং ঐতিহ্য টিকবে।”

কাবাডি খেলোয়াড় শুক্কুর আলী বলেন, “কাবাডিতে এখনো অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু সুযোগের অভাবে তারা উঠে আসতে পারে না। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যদি উদ্যোগ নেয়, কাবাডি আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক জাকির সরকার এবং উদ্বোধক ছিলেন এডভোকেট সানাউল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি বারাকাহ হাসপাতালের পরিচালক ড. আবদুল মালেক।

উল্লেখ্য, এশিয়া মহাদেশেই কাবাডির উৎপত্তি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় এবং এটিকে জাতীয় খেলার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ