ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অপমৃত্যুর মামলা এখন রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। সেই সূত্রেই সামনে আসছে একের পর এক অজানা তথ্য। এবার আলোচনায় এসেছেন সালমান শাহর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন মর্গকর্মী সেকান্দার (বর্তমানে রমেশ নামে পরিচিত)।

সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি এখনও ভোলেননি তিনি। এক সাক্ষাৎকারে আবেগভরে রমেশ বলেন, “আমার প্রিয় নায়কের বুকে আমি নিজেই ছুরি চালাই। ফরেনসিক চিকিৎসকের নির্দেশে সবকিছু করতে হয়েছিল, কিন্তু কাটতে কাটতে বিশ্বাস হচ্ছিল না—সালমান সত্যিই মারা গেছেন।”

সেকান্দার জানান, সালমান শাহর মৃত্যুর দিন ছিল শুক্রবার। “সেদিন মর্গের সামনে হাজারো মানুষ কান্না করছিল। সবাই তাদের প্রিয় নায়কের শেষ দেখা পাওয়ার আশায় ভিড় জমিয়েছিল। আমি নিজেও সালমানের ভক্ত ছিলাম। যখন মরদেহ আনা হলো, মনে হচ্ছিল আমি প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “তখন ঢাকা মেডিকেলের মর্গ আধুনিক ছিল না। পুরনো জায়গাতেই ময়নাতদন্ত করতে হয়েছিল। চিকিৎসকের নির্দেশে কাজ শুরু করি, কিন্তু ছুরি চালানোর সময় হাত কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল, যেন নিজের প্রিয় মানুষকে আঘাত করছি।”

৩৫ বছরের চাকরি শেষে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন সেকান্দার। তিনি বলেন, “আমার জীবনে হাজার হাজার লাশের ময়নাতদন্ত করেছি, কিন্তু সালমান শাহর মরদেহে হাত দেওয়ার অভিজ্ঞতা আজও ভোলা সম্ভব হয়নি।”

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন সালমান শাহ। প্রথমে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছিল এটি হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ ২৮ বছর পর, চলতি বছরের ২০ অক্টোবর আদালত সালমান শাহর মৃত্যুকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সালমান শাহর মৃত্যু আজও এক অনির্ণেয় রহস্য—যার উত্তর খুঁজে ফিরছেন কোটি ভক্ত, আর যার স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় মর্গকর্মী সেকান্দারের মতো মানুষকেও।

ঢাকা/রাহাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে ‘ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের’ দমনে ডেভিল হান্ট ২ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এ হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার যেকোনো অপচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারি যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেন তিনি।

এ ছাড়া লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে কোর কমিটি অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস টু অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট ১ শুরু করে সরকার। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সবাই ওসমান হাদির জন্য দোয়া করবেন। উনি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমাদের সবার দোয়ায় আল্লাহ দিলে উনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।

ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ