আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর একটি গুম। সেই সময়ে হওয়া গুমের ঘটনায় গঠিত কমিশন নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করছে। তবে গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগগুলোর সমাধান কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল মিলনায়তনে ‘গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের লেখা আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের ৮ বছর নামের বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয় এ সময়। সেমিনারের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান সেমিনারে অংশ নেন। গুম কমিশনে দায়ের করা অনেক অভিযোগ কেন তদন্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই কমিশন ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে হুমা খান বলেন, কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। যদিও এখনো তাদের কাছে জমা অভিযোগগুলোর সমাধান হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, কমিশনে জমা ১ হাজার ৯০০টি অভিযোগের সমাধান কীভাবে হবে। গণমাধ্যমেরও উচিত সেই প্রশ্ন তোলা। যারা গুম করেছিল বা আটক করেছিল শুধু তাদের নয়, যারা পরিকল্পনা করেছিল, নির্দেশনা দিয়েছিল, তাদেরও আইনে অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, অবশ্যই আওয়ামী সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো গুম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দমনমূলক রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে নির্বিচার আটক। গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং তা ছিল ভয়াবহ। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন নির্বিচার আটকের ঘটনাগুলো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল।

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে। সেই বিচারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা এখন আসামি।

গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, সেই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগে সংঘটিত বিচারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যায্য হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, যে প্রমাণগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। আওয়ামী লীগ আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন–নিপীড়নের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

গুমের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে ডাকসুর ভিপি মো.

আবু সাদিক বলেন, তাঁদের এসি প্রিজন ভ্যানে করে আনা–নেওয়া হচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার। তাঁদের সাধারণ কারাগারে রেখে বিচার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রচ্ছদ প্রকাশনের মালিক রাজিবুল হাসান। শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক আবিদ হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী, আইনজীবী চৌধুরী তানজিম করিম, আইনজীবী ইমরান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ম র ঘটন ঘটন গ ল কর ছ ল সরক র তদন ত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

গুম তদন্ত কমিশনে জমা ১৯০০ অভিযোগের সুরাহা নিয়ে প্রশ্ন

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর একটি গুম। সেই সময়ে হওয়া গুমের ঘটনায় গঠিত কমিশন নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করছে। তবে গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগগুলোর সমাধান কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল মিলনায়তনে ‘গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের লেখা আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের ৮ বছর নামের বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয় এ সময়। সেমিনারের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান সেমিনারে অংশ নেন। গুম কমিশনে দায়ের করা অনেক অভিযোগ কেন তদন্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই কমিশন ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে হুমা খান বলেন, কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। যদিও এখনো তাদের কাছে জমা অভিযোগগুলোর সমাধান হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, কমিশনে জমা ১ হাজার ৯০০টি অভিযোগের সমাধান কীভাবে হবে। গণমাধ্যমেরও উচিত সেই প্রশ্ন তোলা। যারা গুম করেছিল বা আটক করেছিল শুধু তাদের নয়, যারা পরিকল্পনা করেছিল, নির্দেশনা দিয়েছিল, তাদেরও আইনে অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, অবশ্যই আওয়ামী সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো গুম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দমনমূলক রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে নির্বিচার আটক। গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং তা ছিল ভয়াবহ। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন নির্বিচার আটকের ঘটনাগুলো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল।

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে। সেই বিচারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা এখন আসামি।

গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, সেই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগে সংঘটিত বিচারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যায্য হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, যে প্রমাণগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। আওয়ামী লীগ আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন–নিপীড়নের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

গুমের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক বলেন, তাঁদের এসি প্রিজন ভ্যানে করে আনা–নেওয়া হচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার। তাঁদের সাধারণ কারাগারে রেখে বিচার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রচ্ছদ প্রকাশনের মালিক রাজিবুল হাসান। শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক আবিদ হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী, আইনজীবী চৌধুরী তানজিম করিম, আইনজীবী ইমরান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ