গুম তদন্ত কমিশনে জমা ১৯০০ অভিযোগের সুরাহা নিয়ে প্রশ্ন
Published: 25th, October 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর একটি গুম। সেই সময়ে হওয়া গুমের ঘটনায় গঠিত কমিশন নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করছে। তবে গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগগুলোর সমাধান কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল মিলনায়তনে ‘গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের লেখা আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের ৮ বছর নামের বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয় এ সময়। সেমিনারের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান সেমিনারে অংশ নেন। গুম কমিশনে দায়ের করা অনেক অভিযোগ কেন তদন্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই কমিশন ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে হুমা খান বলেন, কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। যদিও এখনো তাদের কাছে জমা অভিযোগগুলোর সমাধান হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, কমিশনে জমা ১ হাজার ৯০০টি অভিযোগের সমাধান কীভাবে হবে। গণমাধ্যমেরও উচিত সেই প্রশ্ন তোলা। যারা গুম করেছিল বা আটক করেছিল শুধু তাদের নয়, যারা পরিকল্পনা করেছিল, নির্দেশনা দিয়েছিল, তাদেরও আইনে অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, অবশ্যই আওয়ামী সরকারের অধীন সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো গুম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দমনমূলক রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে নির্বিচার আটক। গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং তা ছিল ভয়াবহ। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন নির্বিচার আটকের ঘটনাগুলো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল।
আওয়ামী লীগ আমলে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে। সেই বিচারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা এখন আসামি।
গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, সেই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগে সংঘটিত বিচারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যায্য হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, যে প্রমাণগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। আওয়ামী লীগ আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন–নিপীড়নের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
গুমের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে ডাকসুর ভিপি মো.
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রচ্ছদ প্রকাশনের মালিক রাজিবুল হাসান। শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক আবিদ হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী, আইনজীবী চৌধুরী তানজিম করিম, আইনজীবী ইমরান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ম র ঘটন ঘটন গ ল কর ছ ল সরক র তদন ত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে ‘ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের’ দমনে ডেভিল হান্ট ২ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার যেকোনো অপচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারি যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেন তিনি।
এ ছাড়া লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে কোর কমিটি অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস টু অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট ১ শুরু করে সরকার। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সবাই ওসমান হাদির জন্য দোয়া করবেন। উনি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমাদের সবার দোয়ায় আল্লাহ দিলে উনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।