রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।

রবিবার (২৬ অক্টোবর)  জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী বোর্ডে ৮২ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন

গোবিপ্রবির সায়েন্স ফেস্টে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাফল্য

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যেসব সংবাদ ও ফোনালাপের অডিও প্রকাশ হয়েছে, সেটা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম আসাদুল হককে এই কমিটির আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের দাবি- সুষ্ঠু তদন্ত করে তারপর সিন্ডিকেট মিটিং করতে হবে। 

অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেক রহমান ও দর্শন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল।

এর আগে, শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলের দিকে তারা অনশন শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাকসুর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অ্যলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন—তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করে নিয়োগ দিতে। কিন্তু এর পরিবর্তে প্রশাসন সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অনশন শুরুর পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন থেকে কোনো আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাননি তারা।

এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী সাদেক রহমান বলেন, “২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কোনো পানি বা খাবার না খেয়ে এই তীব্র রোদে অবস্থান করছি। কেন আমরা এখানে বসে আছি? কারণ বারবার প্রশাসন ও নিজ বিভাগের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের একটাই দাবি—শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত রিপোর্ট আমরা দেখতে চাই।”

তিনি বলেন, “আমরা রাকসুতে জানিয়েছি, উপ-উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি, উপাচার্যকেও জানিয়েছি। তিনি বলেছেন ‘আস্থা রাখুন’। কিন্তু আমরা কীভাবে আস্থা রাখব? আস্থা রাখলে আজ আমরণ অনশনে বসতাম না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—জুলাইয়ের পর কোনো দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ হতে পারবে না; যদি হয়, তা হবে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে।”

রাবি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যদি এভাবে নিয়োগ সিন্ডিকেটের প্রভাব চলতে থাকে, তাহলে আপনাদের শিক্ষার্থীদেরই লাশ পড়ে থাকবে এখানে। আমরা শুধু চাই, স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হোক। কালকের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করা সম্ভব হলে সিন্ডিকেট মিটিং হবে, না হলে তা বাতিল করতে হবে।”

অনশরনত আরেক শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা অনশনে বসে আছি। প্রশাসন এখনো আমাদের আশানুরূপ কিছু জানায়নি। উপাচার্য স্যার একবার এসেছিলেন, তিনি তাদের উপর আস্থা রাখতে বলে গেলেন। কিন্তু কোনো প্রক্রিয়ার কথা জানাননি এবং বিতর্কগুলো সামনে নিয়ে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট মিটিং এ চূড়ান্ত হতে চলেছে- এ বিষয়ে নাকি আমাদের কথা বলার এখতিয়ার নেই।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক লেনদেন এর মাধ্যমে, দলীয়করণ এর মাধ্যমে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এর ভুক্তভোগী শুধু নাট্যকলা বিভাগ না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের। আগে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হত, এখন লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলো তদন্ত করা হোক এবং জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর কোনো সমাধান না হবে, আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।”

এ বিষয়ে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমরা তাদের বিষয়টি বিবেচনা করছি। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আর সিন্ডিকেটের বিষয় সিন্ডিকেট দেখবে।”

আগামীকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাবিতে সিন্ডিকেট মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অনশন উপ চ র য ন ট যকল গঠন কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা

অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সেশনজট নিরসনের দাবিতে অনশনের বসেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তারা সেমিস্টারের মেয়াদকাল সর্বসাকুল্যে ৪ মাস করার দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

আরো পড়ুন:

‘কাশির সূত্র ধরে’ খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেপ্তার ৩

ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়: প্রধান বিচারপতি

এ সময় তারা হাতে থাকা প্লাকার্ডে ‘মোদের দাবি একটাই চার মাসে সেমিস্টার চাই’, ‘ডিগ্রি নিতে ১০ বছর চাকরি নিব কোন বছর’, ‘এক দফা এক দাবি ৪ মাসে সেমিস্টার দিবি’, ‘সেশনজটে পুড়ছে প্রাণ এবার চাই সমাধান’ ইত্যাদি লেখা দেখা যায়। 

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। আলোচনায় শেষে বিকেল ৪টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. নাঈম মিয়া বলেন, “ভেটেরিনারি অনুষদের সেশনজট নিরসনে সেমিস্টার সময়কাল ৪ মাসে করার জন্য গত ১২ অক্টোবর আমরা উপাচার্য স্যার বরাবর স্মারকলিপি জমা দেই। পরবর্তীতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমরা জানাই ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের দাবি না মানা হলে ২৫ তারিখ থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছি।”

দুপুরের পর উপাচার্যের সঙ্গে হওয়া আলোচনায় তাদের দাবি না মানায় আমরণ অনশন শুরু করেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আমরা তাদের দাবির প্রতি যথেষ্ঠ নমনীয়। আমরা প্রায় ২ ঘন্টা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবকিছু তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আমরা ভাবতে পারিনি তারা অনশনে বসবে।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে যথাযথ আইন মেনে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা বিষয়টি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি।”

এর আগে, গত ১২ অক্টোবর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সময়সীমা বেধে দেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/কাওছার/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে আমরণ অনশনে দুই শিক্ষার্থী
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা