রাবি নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, অনশন অব্যাহত
Published: 26th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী বোর্ডে ৮২ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন
গোবিপ্রবির সায়েন্স ফেস্টে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাফল্য
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যেসব সংবাদ ও ফোনালাপের অডিও প্রকাশ হয়েছে, সেটা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম আসাদুল হককে এই কমিটির আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের দাবি- সুষ্ঠু তদন্ত করে তারপর সিন্ডিকেট মিটিং করতে হবে।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেক রহমান ও দর্শন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল।
এর আগে, শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলের দিকে তারা অনশন শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাকসুর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অ্যলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করেন।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন—তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করে নিয়োগ দিতে। কিন্তু এর পরিবর্তে প্রশাসন সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অনশন শুরুর পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন থেকে কোনো আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাননি তারা।
এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী সাদেক রহমান বলেন, “২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কোনো পানি বা খাবার না খেয়ে এই তীব্র রোদে অবস্থান করছি। কেন আমরা এখানে বসে আছি? কারণ বারবার প্রশাসন ও নিজ বিভাগের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের একটাই দাবি—শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত রিপোর্ট আমরা দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমরা রাকসুতে জানিয়েছি, উপ-উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি, উপাচার্যকেও জানিয়েছি। তিনি বলেছেন ‘আস্থা রাখুন’। কিন্তু আমরা কীভাবে আস্থা রাখব? আস্থা রাখলে আজ আমরণ অনশনে বসতাম না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—জুলাইয়ের পর কোনো দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ হতে পারবে না; যদি হয়, তা হবে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে।”
রাবি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যদি এভাবে নিয়োগ সিন্ডিকেটের প্রভাব চলতে থাকে, তাহলে আপনাদের শিক্ষার্থীদেরই লাশ পড়ে থাকবে এখানে। আমরা শুধু চাই, স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হোক। কালকের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করা সম্ভব হলে সিন্ডিকেট মিটিং হবে, না হলে তা বাতিল করতে হবে।”
অনশরনত আরেক শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা অনশনে বসে আছি। প্রশাসন এখনো আমাদের আশানুরূপ কিছু জানায়নি। উপাচার্য স্যার একবার এসেছিলেন, তিনি তাদের উপর আস্থা রাখতে বলে গেলেন। কিন্তু কোনো প্রক্রিয়ার কথা জানাননি এবং বিতর্কগুলো সামনে নিয়ে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট মিটিং এ চূড়ান্ত হতে চলেছে- এ বিষয়ে নাকি আমাদের কথা বলার এখতিয়ার নেই।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক লেনদেন এর মাধ্যমে, দলীয়করণ এর মাধ্যমে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে এর ভুক্তভোগী শুধু নাট্যকলা বিভাগ না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের। আগে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হত, এখন লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলো তদন্ত করা হোক এবং জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর কোনো সমাধান না হবে, আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।”
এ বিষয়ে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমরা তাদের বিষয়টি বিবেচনা করছি। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আর সিন্ডিকেটের বিষয় সিন্ডিকেট দেখবে।”
আগামীকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাবিতে সিন্ডিকেট মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অনশন উপ চ র য ন ট যকল গঠন কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে ‘ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের’ দমনে ডেভিল হান্ট ২ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার যেকোনো অপচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারি যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেন তিনি।
এ ছাড়া লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে কোর কমিটি অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস টু অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট ১ শুরু করে সরকার। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সবাই ওসমান হাদির জন্য দোয়া করবেন। উনি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমাদের সবার দোয়ায় আল্লাহ দিলে উনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।