ইবিতে সাজিদ হত্যার তদন্ত নিয়ে সিআইডির বৈঠক, বিচার চেয়ে কফিন মিছিল
Published: 26th, October 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার ১০০ দিন পেরোলেও জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দ্রুত হত্যার বিচার দাবিতে কফিন মিছিল করেছেন ইবি শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার ১ মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে গৃহবধূকে কুপিয়ে মারলেন শ্বশুর
শরীয়তপুরে আলোচিত নাজমা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
রবিবার (২৬ অক্টোবর) পৌনে তিনটায় বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
এ সময় শাখা ছাত্রদল, শাখা ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৈঠকে জানা যায়, সাজিদের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। নিয়মিত তথ্য সংগ্রহে ক্যাম্পাসে আসছেন তারা। এখন পর্যন্ত ৩৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
আলোচনায় তদন্তের স্বার্থে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সাজিদের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তার একটাই পরিচয়- সে অধরাধী।
তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করার এখতিয়ার আছে। তবে নিরপরাধ কাউকে যেন কোনো প্রকার হেনস্তা করা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার দাবি জানান তারা।
তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই কোনো ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে তদন্ত সংস্থা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় একইভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া একটু কঠিন। কেননা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলে অনেক সময় তাকে অপরাধী হিসেবে মনে করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো মর্মে প্রশাসনের কাছে প্রজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অপরাধীদের দ্রুত শনাক্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর নির্দেশে বৈঠকে দুইটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তদন্ত কাজের পর্যালোচনা বৈঠক করবে সিআইডি; তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর পাড় থেকে সাজিদের হত্যার বিচার দাবিতে কফিন মিছিল শুরু হয়। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্রমজলিস, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়াসহ ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়। এ সময় আগামী সাতদিনের মধ্যে সাজিদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা জড়িতদের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে। হত্যার ঘটনায় প্রায় ২ মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব পায় ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
এ হত্যার ১০০ দিন পেরোলেও জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া দায়িত্বের ১ মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য স আইড জ জ ঞ স ব দ কর র চ হ ন ত কর কর মকর ত ন ত কর ম তদন ত র তদন ত ক ল ইসল ম হত য র স আইড অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে ‘ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের’ দমনে ডেভিল হান্ট ২ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার যেকোনো অপচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারি যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেন তিনি।
এ ছাড়া লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে কোর কমিটি অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস টু অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট ১ শুরু করে সরকার। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সবাই ওসমান হাদির জন্য দোয়া করবেন। উনি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমাদের সবার দোয়ায় আল্লাহ দিলে উনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।