অনিয়মের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় এক কর্মচারীকে বদলি করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা ও এস্টেট শাখা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে।

ইতোপূর্বে একাধিক অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য শক্তিবলে স্বপদে আছেন এই কর্মকর্তা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

যবিপ্রবিতে উচ্চশিক্ষা সহায়তা ডেস্কের যাত্রা শুরু

নানা অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষককে ফেরাতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডরমিটরি থেকে কিছু আসবাবপত্র লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে যবিপ্রবির কর্মকর্তা মো.

জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে তারই দপ্তরে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মী নারায়ণ বিশ্বাস তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এরপর থেকেই ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে আবারো অভিযোগ ওঠে এই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী কর্মচারী নারায়ণ বিশ্বাসের বরাতে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর অসুস্থ সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে না পারায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জুয়েলকে ফোনে বিষয়টি জানান। তিনি নারায়ণকে নিরাপত্তা ও এস্টেট শাখার আরেক কর্মকর্তা মো. আজমল হোসেন পান্নুকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানাতে বলেন।

কিন্তু পান্নুকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেনি তিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্রে নারায়ণ জানতে পারেন মো. জাহাঙ্গীর কবিরের নির্দেশনায় পান্নু ফোন রিসিভ করেনি। 

লিখিত ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কর্মকর্তা পান্নুকে দিয়ে ওই কর্মচারী নারায়ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেওয়ার চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর কবির। কিন্তু পান্নু চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে সফল না হয়ে নারায়ণ বিশ্বাসকে ঝিনাইদহ ক্যাম্পাসে বদলির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কর্মচারী নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চাই। তাই আমি আসবাবপত্র লোপাটের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। কিন্তু জাহাঙ্গীর কবির স্যার সেটা পছন্দ করেননি। তাই তিনি বিভিন্নভাবে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “তিনি (জাহাঙ্গীর) আমাকে দূরের ক্যাম্পাসে বদলি করার মাধ্যমে আমার ক্ষতি করতে চান। আমি এমনিতেই অসহায় মানুষ, আমাকে ঝিনাইদহ ক্যাম্পাসে বদলি করা হলে আমার পরিবারের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মহাবিপদে পড়ে যাব আমি।”

অভিযোগের ব্যাপারে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা ও এস্টেট শাখা) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে যারা এমন অভিযোগ তুলছে, আমি মনে করি তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, “তার (জাহাঙ্গীর) দুইটি অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।”

সাক্ষী দেওয়া কর্মচারীকে হয়রানি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগেই জাহাঙ্গীরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। যেন তিনি কোনো অধীনস্থ কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণ না করেন। নতুন করে যদি তার বিরুদ্ধে এমন কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত বোর্ড তার ব্যাপারে শাস্তির সুপারিশ করলে সামনের রিজেন্ট বোর্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্দকৃত আসবাবপত্র লোপাট চেষ্টার অভিযোগ ওঠে স্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কর্মরত পাঁচজন অনুপস্থিত কর্মচারীর নামে ভুয়া বেতনশিট তৈরি ও সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ‘বিএসএস’র সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শনিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে ‘ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের’ দমনে ডেভিল হান্ট ২ চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এ হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার যেকোনো অপচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারি যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেন তিনি।

এ ছাড়া লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে কোর কমিটি অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেস টু অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অপারেশন ডেভিল হান্ট ১ শুরু করে সরকার। মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সবাই ওসমান হাদির জন্য দোয়া করবেন। উনি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমাদের সবার দোয়ায় আল্লাহ দিলে উনি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নেওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে।

ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ