যে কারণে ৫ যুবককে ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য
Published: 27th, October 2025 GMT
পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার বিরুদ্ধে পাঁচ যুবকের মাথা ন্যাড়া করানোর অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে প্রায় শতাধিক মানুষের সামনে ওই যুবকদের মাথা ন্যাড়া করানো হয়। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
৫ যুবককে ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য
ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটিতে সংঘর্ষ: আহত দুই শতাধিক, পরিস্থিতি থমথমে
স্থানীয় সূত্র জানায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত শুক্রবার দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয়। এসময় বাবার সঙ্গে মিলে মনিরকে লাঞ্ছিত করেন মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান। এরই জেরে গত শনিবার রাতে মনির গোলদারের ছেলে রাব্বি ও রিয়ান তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রাব্বি রিয়ানকে মারধর করেন।
রিয়ানকে মারধরের ঘটনাটি তার বাবা মোজাম্মেল স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে জানান। পরদিন সকালে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে মধ্য চতলাখালীর খুতির বাজার এলাকায় সালিশ বসে। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ যুবকের মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন। একপর্যায় নর সুন্দর ডেকে এনে তাদের থেকে মাথা ন্যাড়া করে দেন তিনি।
এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি হাতে রেশাদ খলিফা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, নরসুন্দর যুবকদের মাথা ন্যাড়া করছেন।
ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন, “আমি তো কোন অপরাধ করিনি। রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি ছাড়িয়ে দিয়েছি। তারপরও মেম্বর ফোন করে আমাকে ডেকে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিছে।”
নয়ন সরদারের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, “আমি মানুষের কাছে শুনে ঘটনাস্থলে যাই। আমি অভিভাবক, আমিতো আছি। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে আমাকে ডাকতো। সে তো কোরো অপরাধ করেনি। মারামারি দেখে থামিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, মেম্বার বিনা অপরাধে আমার ছেলের মাথা কামিয়েছেন।”
অপর ভুক্তভোগী রাব্বি বলেন, “রিয়ান ভাইর সঙ্গে আমার মারামারি হয়েছে। রেশাদ মেম্বার এসে চৌরাস্তায় (খুতির বাজার) সালিশ করে দিছেন। ওর (রিয়ান) এবং আমারসহ পাঁচজনের চুল কেটে দিছে। ওরা (তিনজন) মারেনি, ওদেরও চুল কেটে দিছে।”
রাব্বির মা মাহফুজা বলেন, “জমিজমা নিয়ে ঝামেলায় রাব্বির বাবাকে মারধর করেছে রিয়ান ও তার বাবা। এটা কোন ছেলে মেনে নিতে পারে? তাই রিয়ানকে এই কথা জিজ্ঞস করতে গেলে মারামারি হয়েছে। সেটা নিয়ে রেশাদ মেম্বার সবার চুল কেটে দিছে।”
রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বলেন, “রাব্বির বাবা মনিরের সঙ্গে আমার যে সমস্যা হয়েছিল, তা মিটমাট হয়ে গেছে। তারপর মনিরের ছেলে এসে আমার ছেলেকে মারধর করছে। আমার ছেলেকে চার-পাঁচজনে মিলে মারছে। আমি মেম্বারের কাছে বিচার চাইছি। মেম্বার এসে বিচার করে দিছে। মাফ চাওয়াইছে। আমার ছেলেসহ সবার চুল কেটে দিছে।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
গ্রাম আদালতের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো.
রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ আম র ছ ল অপর ধ ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো
বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি ডিগ্রির লক্ষ্য নয়; এটি নিজের জ্ঞান, চিন্তাশক্তি ও গবেষণার পরিসরকে বিস্তৃত করার এক দীর্ঘ যাত্রা। মাস্টার্স থেকে পিএইচডি—এই পথচলায় শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের একাডেমিক দক্ষতা বাড়ান, তেমনি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শেখেন এবং গবেষণার মাধ্যমে নিজের আগ্রহের ক্ষেত্রকে গভীরভাবে জানতে পারেন।
সঠিক পরিকল্পনাবিদেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে পরিকল্পনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে নিজের উদ্দেশ্য। আপনি কি শুধুই ডিগ্রি অর্জন করতে চান নাকি গবেষণার মাধ্যমে একাডেমিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চান? এরপর আসে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের বিষয়টি। বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা কাঠামো, টিউশন ফি, জীবনযাপনের খরচ ও গবেষণার পরিবেশ আলাদা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি বা নেদারল্যান্ডস—প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব গবেষণা ফোকাস ও আলাদা একাডেমিক নেটওয়ার্ক।
সুপারভাইজার নির্বাচনগবেষণানির্ভর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সঠিক সুপারভাইজার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন উপযুক্ত সুপারভাইজার শুধু গবেষণার দিকনির্দেশনাই দেন না, বরং আপনার কাজের মান, প্রকাশনা এমনকি ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের ওপরও প্রভাব ফেলেন। তাই গবেষণার বিষয় ঠিক করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আগ্রহের ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রফেসরদের কাজ ও প্রকাশনা পড়া দরকার। প্রাথমিকভাবে ই–মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই জানা যায় আপনার আগ্রহ তাঁদের গবেষণার সঙ্গে মেলে কি না।
আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে২৬ অক্টোবর ২০২৫স্কলারশিপের সুযোগআন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বা স্কলারশিপ পাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক সময় টিউশন ফি ও জীবনযাপনের খরচ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রায় সব দেশেই রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ফান্ডিংয়ের সুযোগ। যেমন কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য), ফুলব্রাইট (যুক্তরাষ্ট্র), ডাড (জার্মানি), এরাসমাস মুন্ডুস (ইউরোপ) এবং অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস (অস্ট্রেলিয়া)। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের উদ্যোগেও টিউশন ওয়েভার, রিসার্চ গ্র্যান্ট বা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ অফার করে থাকে। তাই আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ‘স্কলারশিপ’ বিভাগটি ভালোভাবে দেখা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় নথিপত্রআবেদনের প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। সাধারণত মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন শুরু করতে হয় অন্তত আট থেকে বারো মাস আগে। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে হয় স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রিসার্চ প্রোপোজাল (যদি প্রয়োজন হয়), ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ, রিকমেন্ডেশন লেটারসহ প্রাসঙ্গিক নথিপত্র। পাশাপাশি সময়মতো সম্ভাব্য সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
আরও পড়ুনজেনে নিন বিশ্বের সেরা ১০ স্কলারশিপ সম্পর্কে২৬ অক্টোবর ২০২৫বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতাবিদেশে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা শুধু একাডেমিক নয়, এটি মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিজেকে গড়ে তোলারও সুযোগ। ভিন্ন সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, গবেষণার নতুন পদ্ধতি শেখা এবং বৈশ্বিক একাডেমিক পরিবেশে কাজ করা—সব মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গিকে বহুমাত্রিক করে তোলে। মাস্টার্স বা পিএইচডি শেষে অনেকে যুক্ত হন গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চমানের চাকরিতে। সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও সময়মতো পদক্ষেপই শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে পারে বিশ্বমানের শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের গন্তব্যে।