ভারতের ওয়ানডে দলের সহ–অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার তিন দিন ধরে সিডনির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পান তিনি। ড্রেসিংরুমে ফেরার পর অস্বস্তি অনুভব করলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে সেখানেই আছেন বলে আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বিসিসিআই।

বিবৃতিতে বোর্ড জানায়, পরীক্ষায় দেখা গেছে আইয়ারের প্লীহা ছিঁড়ে গেছে। তিনি এখন চিকিৎসাধীন, শারীরিকভাবে স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, আইয়ার বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। সেখানে তাঁকে আরও দুই দিন রাখা হতে পারে। তবে ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আজ বিকেলের দিকে তাঁকে আইসিইউ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

২৫ অক্টোবর সিডনির এসসিজিতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ক্যারির ক্যাচ নিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান আইয়ার। প্রথমে চোটটা গুরুতর মনে হয়নি। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ভেতরের ক্ষতটা আশঙ্কার চেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন‘অন্তত দলে রাখো’—আইয়ারকে নিয়ে বাবার আকুতি২১ আগস্ট ২০২৫

বিসিসিআই জানিয়েছে, বোর্ডের পক্ষ থেকে দলের চিকিৎসক ডা.

রিজওয়ান খানকে সিডনিতে রাখা হয়েছে আইয়ারের দেখভালের জন্য। তিনি প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করছেন ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের শারীরিক অগ্রগতি।

ভারতের ওয়ানডে দলের অন্য খেলোয়াড়েরা শনিবারের ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়া ছেড়েছেন। টি–টোয়েন্টি দলের ক্রিকেটারেরা চলে গেছেন সিডনি থেকে ক্যানবেরায়। এখন সিডনিতে আছেন বিসিসিআইয়ের চিকিৎসক এবং আইয়ারের কয়েকজন বন্ধু–পরিচিতজন।

ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইয়ারের পরিবারের একজন সদস্য মুম্বাই থেকে সিডনিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় যাত্রায় কিছুটা দেরি হচ্ছে।

আরও পড়ুনশ্রেয়াস আইয়ারকে বিয়ের প্রস্তাব কলকাতার নারী সমর্থকের১৯ এপ্রিল ২০২২

আইয়ার বর্তমানে ভারতের শুধু ওয়ানডে দলেই খেলছেন। ভারতের পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে ৩০ নভেম্বর, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাঁচিতে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইয় র র স ডন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মামলা করবেন না সাজিদের বাবা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে দুবছরের শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশ। যে ব্যক্তি বোরহোলটি খুঁড়েছিলেন, সেই কছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। মাটির প্রায় ৫০ ফুট গভীর থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে অবহেলার অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করলেও এখন মামলা করতে চান না শিশুটির বাবা রাকিবুল ইসলাম।

শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করব না।’’ 

পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

আগে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিচার চাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেটা বলেছিলাম যেন গোটা দেশ সতর্ক হয়। এই ভুলটা আর কেউ যেন না করে- এ জন্যই কথাটা বলেছিলাম। আমার বাচ্চাটা যেভাবে গেছে, সবাই যদি আগে থেকেই সচেতন হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এমন ক্ষতি আর হবে না। আমার ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি অন্যরা শিক্ষা পায়, সেটাই চাই।’’

মামলা না করতে কোনো ধরনের চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই। গোটা দেশ আমাদের পক্ষে আছে। ইনশাআল্লাহ পুলিশ-প্রশাসনও আমাদের পাশে আছে।’’

পলাতক কছির উদ্দিন এলাকায় ফিরে কোনো সহানুভূতি জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘না। উনি এখনও এলাকায় আসেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি।’’

উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশেই কছির উদ্দিনের জমিতে থাকা গভীর নলকূপের ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৩১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার রাতে মাটির ৫০ ফুট নিচ থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সাজিদের মা রুনা খাতুন শুরু থেকেই বিচার দাবি করে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কছির উদ্দিন আমার বাড়ির পাশে এভাবে তিন জায়গায় গর্ত করে ফেলে রেখেছে। কেন এভাবে ফেলে রাখল, গর্তগুলো কেন বন্ধ করল না? আমি বিচার চাই। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কছির উদ্দিন আগে বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি পানির ব্যবসা শুরু করেন এবং এলাকায় পাঁচটি অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) স্থাপন করেন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসব সেমিডিপ চালানো হচ্ছিল।

বছরখানেক আগে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আরও একটি সেমিডিপ বসাতে বোরহোল করান কছির উদ্দিন। মাটির প্রায় ৯০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর পাথর উঠতে থাকায় তিনি পরপর তিনটি স্থানে বোরহোল করেন। তবুও পানির সন্ধান না মেলায় সেখানে সেমিডিপ বসানো হয়নি। সেই পরিত্যক্ত বোরহোলগুলোর একটিতে পড়ে মারা যায় শিশু সাজিদ। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, ‘‘কছির উদ্দিনের অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভিকটিমের পরিবার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

পদাধিকারবলে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জানান, কছির উদ্দিনের আগের কয়েকটি সেচপাম্প বৈধ কি না যাচাই করা হবে। তবে যে বোরহোলে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেটির জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটি ছিল বেআইনি কাজ।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নাঈমা খান বলেন, ‘‘সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঘটনার পর থেকেই কছির উদ্দিন আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

ঢাকা/শিরিন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ