সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত, দাবি চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের
Published: 27th, October 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম যে বক্তব্য গতকাল দিয়েছিলেন, তা গণমাধ্যমে ভুলভাবে উদ্ধৃত হয়েছে বলে দাবি করেছে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
আজ সোমবার চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার সই করা এ–সংক্রান্ত একটি নথি ট্রাইব্যুনালে কার্যরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেন প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান। তার শিরোনাম ছিল—‘গণমাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (সংশোধিত)-এর ধারা ২০ (সি) সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রসিকিউশনের বক্তব্য’।
সেই নথিতে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে আইনটি এখনো প্রয়োগ হয়নি বা সেনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর আইনের প্রয়োগ নির্ভর করছে, যা বাস্তবতা ও আইনের ভাষার পরিপন্থী।
গতকাল প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ২৬ অক্টোবর ‘সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আজ ২৭ অক্টোবরের মুদ্রিত সংস্করণে ‘ওনারা সার্ভিং, বলাই যেতে পারে’ শিরোনামে মুদ্রিত সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনকে একজন সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছিলেন এই প্রসিকিউটর, সেটার ভিত্তিতেই সংবাদ করা হয়েছে। সাংবাদিকের করা সেই প্রশ্ন এবং প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার যে জবাব দিয়েছিলেন, তা তুলে ধরা হয়েছিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
এই প্রসিকিউটরকে সাংবাদিকের প্রশ্নটি ছিল—‘একটা বিষয় একটু ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করবেন। আপনারা বলছেন যে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত অনেকেই আছেন এবং সার্ভিং (চাকরিরত) বলছেন।.
এর জবাবে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন বলেছিলেন, ‘যেটা আইনে বলা আছে, সেটাই আইনের ব্যাখ্যা। এখন সেনা সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে যে এই আইন অনুযায়ী কবে ওনাদের, এই আইনটা ওনাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। যতক্ষণ না প্রয়োগ করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তো ওনারা সার্ভিং (চাকরিরত) বলাই যেতে পারে।’
প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের সেই বক্তব্য নিয়েই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অন্য যেকোনো আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে। প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুধু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াগত বিষয়টি ইঙ্গিত করেছিলেন, যা আইনের ব্যাখ্যা নয়। অতএব, সংবাদটির তথ্যগত ভুল সংশোধন ও আইনি ব্যাখ্যার যথার্থতা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রসিকিউশনের বক্তব্য গুরুত্বসহকারে একটি সংশোধনী ও ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভ্রান্তি এড়ানো যায় এবং সংবেদনশীল বিচারিক বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে যথাযথ দায়িত্বশীলতা রক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুন১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের২২ অক্টোবর ২০২৫এক দিন আগে বলা সেই বক্তব্য নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রতিক্রিয়া আসার পর মোনাওয়ার হুসাইনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আজ ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর কোনো প্রসিকিউটর আগের মতো ব্রিফিংয়ে আসেননি।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাতে এই বিধান যুক্ত করা হয় যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সরকারি কোনো চাকরিতে থাকতে পারবেন না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর কারাগারে পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চাকরিরত এই সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ঢাকা সেনানিবাসে তাঁদের সেনা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁদের ২২ অক্টোবর নেওয়া হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। তাঁদের এখন রাখা হচ্ছে সেনানিবাসেরই একটি উপকারাগারে।
আরও পড়ুনআনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবে০৭ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ম নবত ব র ধ প রক শ ত অপর ধ র ১৫ স ন আইন র র আইন ই আইন
এছাড়াও পড়ুন:
সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত, দাবি চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম যে বক্তব্য গতকাল দিয়েছিলেন, তা গণমাধ্যমে ভুলভাবে উদ্ধৃত হয়েছে বলে দাবি করেছে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
আজ সোমবার চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার সই করা এ–সংক্রান্ত একটি নথি ট্রাইব্যুনালে কার্যরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেন প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান। তার শিরোনাম ছিল—‘গণমাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (সংশোধিত)-এর ধারা ২০ (সি) সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রসিকিউশনের বক্তব্য’।
সেই নথিতে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে আইনটি এখনো প্রয়োগ হয়নি বা সেনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর আইনের প্রয়োগ নির্ভর করছে, যা বাস্তবতা ও আইনের ভাষার পরিপন্থী।
গতকাল প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ২৬ অক্টোবর ‘সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আজ ২৭ অক্টোবরের মুদ্রিত সংস্করণে ‘ওনারা সার্ভিং, বলাই যেতে পারে’ শিরোনামে মুদ্রিত সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনকে একজন সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছিলেন এই প্রসিকিউটর, সেটার ভিত্তিতেই সংবাদ করা হয়েছে। সাংবাদিকের করা সেই প্রশ্ন এবং প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার যে জবাব দিয়েছিলেন, তা তুলে ধরা হয়েছিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
এই প্রসিকিউটরকে সাংবাদিকের প্রশ্নটি ছিল—‘একটা বিষয় একটু ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করবেন। আপনারা বলছেন যে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত অনেকেই আছেন এবং সার্ভিং (চাকরিরত) বলছেন।...যখন এই আইনটা (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন করেন, তখন বলেছিলেন যে...অভিযোগ আমলে (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল) নেওয়ার পরপরই আর চাকরি নাই। তাহলে তাঁরা কি অবসরপ্রাপ্ত বা চাকরিচ্যুত বা সার্ভিং—কোনটা আমরা বলব এখন?’
আরও পড়ুনসেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর২৬ অক্টোবর ২০২৫এর জবাবে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন বলেছিলেন, ‘যেটা আইনে বলা আছে, সেটাই আইনের ব্যাখ্যা। এখন সেনা সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে যে এই আইন অনুযায়ী কবে ওনাদের, এই আইনটা ওনাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। যতক্ষণ না প্রয়োগ করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তো ওনারা সার্ভিং (চাকরিরত) বলাই যেতে পারে।’
প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইনের সেই বক্তব্য নিয়েই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অন্য যেকোনো আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে। প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুধু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াগত বিষয়টি ইঙ্গিত করেছিলেন, যা আইনের ব্যাখ্যা নয়। অতএব, সংবাদটির তথ্যগত ভুল সংশোধন ও আইনি ব্যাখ্যার যথার্থতা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রসিকিউশনের বক্তব্য গুরুত্বসহকারে একটি সংশোধনী ও ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভ্রান্তি এড়ানো যায় এবং সংবেদনশীল বিচারিক বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে যথাযথ দায়িত্বশীলতা রক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুন১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের২২ অক্টোবর ২০২৫এক দিন আগে বলা সেই বক্তব্য নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রতিক্রিয়া আসার পর মোনাওয়ার হুসাইনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আজ ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর কোনো প্রসিকিউটর আগের মতো ব্রিফিংয়ে আসেননি।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাতে এই বিধান যুক্ত করা হয় যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সরকারি কোনো চাকরিতে থাকতে পারবেন না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর কারাগারে পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চাকরিরত এই সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ঢাকা সেনানিবাসে তাঁদের সেনা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁদের ২২ অক্টোবর নেওয়া হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। তাঁদের এখন রাখা হচ্ছে সেনানিবাসেরই একটি উপকারাগারে।
আরও পড়ুনআনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবে০৭ অক্টোবর ২০২৫