তেমন কোনো হইচই নেই। দোকানি ও ক্রেতারা যার যার মতো বেচাকেনায় ব্যস্ত। চায়ের দোকানে কিছু লোকের আড্ডা। সেখানে নানা কথা, নানা আলোচনা। মোটামুটি শান্ত-সৌম্য পরিবেশ। কোনো উত্তাপ-বিশৃঙ্খলা নেই। তারপরও জায়গাটির নাম ‘তাফালিং বাজার’।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর গ্রামে এ বাজারের অবস্থান। এর পশ্চিম দিকে উপজেলার শান্তিনগর বাজার, পূর্ব দিকে ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রাম, দক্ষিণে উত্তর উদ্দমদী ও উত্তরে উপাদী গ্রাম। উপজেলার ভাঙ্গারপাড়, পৈলপাড়া, বাবুরপাড়াসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ বাজারটিতে নিত্যপণ্য কিনে থাকেন।

ভূমি কার্যালয়ের নথিতে এটি উপাদী উত্তর গ্রাম হিসেবে নথিভুক্ত থাকলেও স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘তাফালিং বাজার’ হিসেবেই পরিচিত। প্রায় ৩০ বছর ধরে মাঝারি আকারের বাজারটি এই নামেই পরিচিত।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে উপাদী উত্তর গ্রাম। গ্রামের কিছুটা মাঝখানে সড়কের দুই পাশে বাজারটির অবস্থান। মুদি, কনফেকশনারি, ফার্মেসি, হার্ডওয়্যার, চা, সেলুনসহ মোট ৩০টি দোকান আছে সেখানে। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে সেখানে শাকসবজির হাটও বসে। রোববার সকালে ওই বাজারে গিয়ে স্থানীয় ১৫ থেকে ১৬ জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সকালে অটোরিকশায় চেপে ওই বাজার এলাকায় নামতেই চোখে পড়ে একটি চায়ের দোকান। সেখানে কিছু লোকের জটলা। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের ৮ থেকে ১০ জন আছেন। জানা গেল, সেটি জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির দোকান। তাঁর বাড়ি উপাদী উত্তর গ্রামে।

দোকানে বসে কথা হয় ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বকাউল (৭০), দলিল লেখক মো.

কাইয়ুম মিয়া, স্কুলশিক্ষক মো. রিপন, অটোরিকশাচালক মো. মোস্তাফা ও সেলুনকর্মী (নরসুন্দর) অপু চন্দ্র সূত্রধরসহ কয়েকজনের সঙ্গে। বাজারটির এমন নাম কেন জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, বাজারটি তাঁদের গ্রামের আবু হানিফ বকাউলের জায়গায় স্থাপিত। ১৯৯৫ সালে এটি স্থাপন করা হয়।

মো. সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি সেখানে প্রথম দোকানঘর দেন। সে সময় সেখানে বসত মাছের বাজার। নানা রকমের তাজা মাছের পসরা বসত। মাছ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠে একটি চক্র। অধিকাংশই ছিলেন শ্রমিকশ্রেণির। তাঁরা সেখানে দাপট দেখাতেন। স্থানীয় লোকেরা ওই দাপটকে বলতেন ‘তাফালিং’। সেই থেকে এর নাম হয় ‘তাফালিং বাজার’।

দলিল লেখক মো. কাইয়ুম মিয়া ও স্কুলশিক্ষক মো. রিপন বলেন, তাঁরা অভিধানে খোঁজ করে তাফালিং শব্দটির অর্থ পেয়েছেন। সেখানে এর কোনো খারাপ বা নেতিবাচক অর্থ পাননি। অভিধানে তাফালিং শব্দটির অর্থ ঝোড়ো বাতাস বা উত্তাপ। তবু বাজারটির এই নাম নিয়ে তাঁরা লজ্জাবোধ করেন। নামটির পরিবর্তন চান। কারণ, অনেকে মনে করেন, বাজারটিতে মারামারি, মাস্তানি, রংবাজি, চাঁদাবাজি, ধান্দা ও ফাঁপরবাজি চলে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টা। খুবই শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ বাজারটির।

৫ নম্বর উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদ উল্লাহ প্রধানের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নের বাজারটি এক নামে সবাই চেনেন, জানেন। নাম শুনে দূরের লোকেরা মুচকি হাসেন। কিছুটা অবাক হন, ভয়ও পান। এটি এর বিশেষত্ব। তবে বাজারের এমন নাম নিয়ে তিনি কিছুটা বিব্রত ও লজ্জিত। ৩০ বছর আগে কিছু লোকের তাফালিংয়ের কারণেই এমন নামকরণ। এখন এখানে কেউ তাফালিং ও রংবাজি করেন না।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, বাজারটির কথা তিনি শুনেছেন। কখনো সেখানে যাননি, গিয়ে দেখবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরের বাজারে এখন ‘ডিমওয়ালা ইলিশ’

নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মায় মাছ ধরতে শুরু করেছেন জেলেরা। তাঁদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ, বাজারেও বেড়েছে সরবরাহ। কিন্তু এসব ইলিশের অধিকাংশই ডিমওয়ালা। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এতসংখ্যক ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ায় মাছের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মেঘনা ও পদ্মায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত শনিবার রাত ১২টায়। এ সময় থেকে নদীগুলোতে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বাজারেও আসছে প্রচুর ইলিশ।

আরও পড়ুনঅনলাইনে ইলিশ বিক্রির নিবন্ধন পেলেন চাঁদপুরের ৭ ব্যবসায়ী১০ অক্টোবর ২০২৫

গতকাল রোববার ও আজ সোমবার মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর, নারায়ণপুর, মুন্সীর হাট এবং মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, সুজাতপুর ও আমিরাবাদ মাছ বাজারে ইলিশের প্রাচুর্য দেখা যায়। এগুলোর অধিকাংশই ডিমওয়ালা। তাই দামও কিছুটা কমেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে ছোট আকারের ইলিশ বা ‘টেম্পু ইলিশের’ চাহিদা বেশি। সচ্ছল ক্রেতারা কিনছেন বড় ইলিশ। অনেক দিন পর ইলিশের বাজারও কিছুটা চাঙা। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতারা খুশি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারের মাছ বিক্রেতা বিমল চন্দ্র বলেন, গতকাল বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ এসেছে। আজ প্রায় ২০ মণ ইলিশ এসেছে। এগুলো মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের মাছই বেশি, অধিকাংশই ডিমওয়ালা। বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ছোট আকারের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকালের তুলনায় আজ ইলিশের কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দাম আরও কমতে পারে।

আরও পড়ুনইলিশ রক্ষার অভিযানে জেলেদের হামলা, ফিরে গেল আভিযানিক দল০৮ অক্টোবর ২০২৫

কয়েকজন ক্রেতা ও স্থানীয় বাসিন্দা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অভিযান শেষে বাজারে যে হারে ডিমওয়ালা ইলিশ মিলছে, তাতে ইলিশ রক্ষার অভিযানের সুফল ও সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ আসার বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। তিনি বলেন, বাজার থেকে ডিমওয়ালা ইলিশ সংগ্রহের জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মেঘনায় কার্যকর অভিযান চালানোর পরও এত ডিমওয়ালা ইলিশ কেন ধরা পড়ছে—সেটি নিয়ে তাঁরা ভাবছেন। এতে ইলিশ উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদপুরের বাজারে এখন ‘ডিমওয়ালা ইলিশ’