সুন্দরবনের নদ–নদী থেকে নির্বিচার শামুক লুট
Published: 28th, October 2025 GMT
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের নতুন কৌশল হিসেবে শামুক নিধন ও পাচার শুরু করেছে একটি অসাধু চক্র। বনসংলগ্ন নদী ও খাল থেকে প্রতিদিন ট্রলার ও নৌকায় ভরে শামুক আহরণ করা হচ্ছে। পরে এসব শামুক ট্রাকে সড়কপথে কিংবা ট্রলারে নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্থের লোভ দেখিয়ে প্রান্তিক জেলেদের এ কাজে জড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক শ মণ শামুক সংগ্রহ করা হচ্ছে।
২১ অক্টোবর সকালে সুন্দরবনসংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর তীর থেকে ৬৫০ কেজি শামুক উদ্ধার করা হয় বলে জানান বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা মো.
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন–১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণ আইন–১৯৫০ অনুসারে, নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে শামুক বা ঝিনুক আহরণ ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এ কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ।
বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শামুক ও ঝিনুক নদীর তলদেশের মাটি ও পানির গুণগত মান বজায় রাখে। এগুলো নদীর প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, দূষণ কমায়, মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং মাছ ও কাঁকড়ার খাদ্যচক্র ধরে রাখে। ব্যাপক নিধন হলে নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।
এর আগে সুন্দরবনে একাধিকবার শামুক পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে। ১৩ অক্টোবর থেকে বন বিভাগ কয়রা উপজেলায় মাইকিং করে সতর্ক করে বলছে, শামুক আহরণ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকূলীয় খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বন বিভাগের মাইকিং ও অভিযানের পরও শামুক আহরণ বন্ধ হচ্ছে না। বনাঞ্চল ঘেঁষে থাকা পশুরতলা খাল, কৈখালীর মাদার নদী, জয়াখালী খাল, শাকবাড়িয়া নদী, কয়রা নদী ও কপোতাক্ষ নদ থেকে প্রতিদিনই অবৈধভাবে শামুক সংগ্রহ করা হচ্ছে।
শামুক নদীর প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, দূষণ কমায়, মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং মাছ ও কাঁকড়ার খাদ্যচক্র ধরে রাখে। ব্যাপক নিধন হলে নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে বলে শঙ্কাউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সবজিখেতের জালের বেড়ায় আটকে পড়ল অজগরের বাচ্চা
বসতবাড়ির পাশে সবজিখেতের জালের বেড়ায় আটকে পড়ে একটি অজগরের বাচ্চা। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে সাপটিকে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার দেন গ্রামের কয়েকজন নারী। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন বাড়ির মালিক নিবারণ কুমার, তাঁর পিছু পিছু আসেন আশপাশের লোকজনও। মুহূর্তেই পুরো গ্রামে অজগর ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার দুপুরে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাপটি উদ্ধার করে ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও বন বিভাগের সদস্যরা।
উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেওয়া বন বিভাগের শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, অজগরটি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেটিকে উদ্ধার করেন। পরে সুন্দরবনে সাপটিকে অবমুক্ত করা হয়।
বাড়ির মালিক নিবারণ কুমার বলেন, ‘আমার সবজিখেতে বেড়া হিসেবে সুতার জাল টানানো আছে। সেই জালের ফাঁকে আটকে পড়ে অজগরের মাথার অংশ। বাড়ির নারীরা প্রথমে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। আমিও দৌড়ে গিয়ে দেখি, সত্যিই একটা অজগর জালে আটকে আছে। আগে শুনেছি পাশের গ্রামে অজগর আসে; কিন্তু আমাদের এখানে কখনো আসেনি। এবার হঠাৎই এল।’
অজগর উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের গ্রাম থেকে কৌতূহলী মানুষ ভিড় করেন নিবারণ কুমারের বাড়িতে। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করেন, কেউ ছবি তোলেন।
বন কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, অজগরটি সুস্থ অবস্থায় ছিল। সাধারণত খাবারের সন্ধানে বা উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে তারা লোকালয়ে চলে আসে। সুন্দরবনে খাদ্যের অভাব নেই, তবে অজগরের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। তাই মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। তিনি আরও জানান, এর আগে গত ১৭ জুন কয়রার সুন্দরবন-সংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা গ্রাম থেকেও ১০ ফুট লম্বা একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছিল। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। আগে সাপ দেখলেই পেটানো হতো, এখন সবাই বন বিভাগে খবর দেয়। আজকের অজগরটিও সেই সচেতনতার কারণেই বেঁচে গেছে।