সিলেটে ১১ দফা দাবিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ
Published: 28th, October 2025 GMT
সিলেট নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন চালকেরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান করে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকেরা। বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সিলেট জেলা রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত অন্যায় ও অমানবিক দাবি করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। সমাবেশে বক্তারা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে পরিবেশবান্ধব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বলে উল্লেখ করেন।
সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে সড়কে শুয়ে ও বসে অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকেরা। এ সময় চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজারগামী সড়কে যান চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। অনেকে যানবাহন রেখে পায়ে হেঁটে ওই এলাকা ছাড়েন।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে শ্রমিক সমাবেশের ডাক দেন সিলেট জেলা রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক মাসরুখ জলিল। দাবিগুলোর মধ্যে আছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে আটক যানবাহন ফিরিয়ে দেওয়া এবং বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা গ্যারেজে পুনরায় সংযোগ দেওয়া; বিআরটিএ কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ন এবং যানবাহন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নগরের গলি ও প্রয়োজনীয় সড়কে চলাচল করতে দেওয়া; যৌক্তিক ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করতে সব অংশীজনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন; জরিপের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক অটোরিকশার সংখ্যা ও মালিকানা নির্ধারণ; শ্রমিকনেতা আবু জাফরসহ গ্রেপ্তার শ্রমিকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার; সড়ক উপযোগী যানবাহনের মডেল সবার জন্য উন্মুক্ত করে যানবাহনের আধুনিকায়ন; ব্যাটারিচালিত যানবাহনের শ্রমিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি পুনরায় ফিরে না আসার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; ব্যাটারিচালিত যানবাহন গ্যারেজের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান; রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক ও সাইকেলের জন্য পর্যায়ক্রমে সব সড়কে সার্ভিস লেন নির্মাণ; জীবিকা সুরক্ষায় শ্রম সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন; রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে নাগরিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে
২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।
একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক