সোনার দাম তিনদিনে কমেছে ১৫ হাজার টাকা, ভরি এখন ২ লাখের নিচে
Published: 29th, October 2025 GMT
দেশের বাজারে সোনার দাম এক লাফে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার টাকা কমেছে। এ নিয়ে টানা তিন দিনে সোনার ভরি ১৫ হাজার ১৮৭ টাকা কমেছে। তাতে সোনার দাম দুই লাখ টাকার নিচে নেমে আসছে।
সোনার দামের এই বড় পতনের জন্য জুয়েলার্স সমিতি স্থানীয় পাইকারি বাজারে তেজাবি সোনা বা পিওর গোল্ডের দাম কমার কথা বলেছে। তবে মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক বাজারে সোনার দরপতন। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
জুয়েলার্স সমিতি গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক লাফে সোনার ভরি ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়। আজ বুধবার থেকে এই দাম কার্যকর হবে। ফলে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম কমে দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
সর্বশেষ গতকাল প্রতি ভরি সোনার দাম কমানো হয় ৩ হাজার ৬৭৪ টাকা। তার আগে ২৭ অক্টোবর ১ হাজার ৩৯ টাকা কমানো হয়। আর ২৪ অক্টোবর ভরিতে দাম কমানো হয়েছিল ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা। ফলে চার দফায় সোনার দাম কমছে ভরি প্রতি ২৩ হাজার ৫৭৩ টাকা।
নতুন দাম অনুযায়ী, আজ বুধবার থেকে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা কমে দাম দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৯ হাজার ৯৯৬ টাকা কমে হচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ টাকা।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৮ হাজার ৫৭৩ টাকা কমে নতুন দাম হচ্ছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭২ টাকা। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭ হাজার ৩১৪ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২৮ টাকা।
সোনার দাম কমানো হলেও রূপার দাম অপরিবর্তিত আছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা ও সোনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন র দ ম কম
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা করবেন না সাজিদের বাবা
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে দুবছরের শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশ। যে ব্যক্তি বোরহোলটি খুঁড়েছিলেন, সেই কছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। মাটির প্রায় ৫০ ফুট গভীর থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে অবহেলার অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করলেও এখন মামলা করতে চান না শিশুটির বাবা রাকিবুল ইসলাম।
শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করব না।’’
পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আগে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিচার চাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেটা বলেছিলাম যেন গোটা দেশ সতর্ক হয়। এই ভুলটা আর কেউ যেন না করে- এ জন্যই কথাটা বলেছিলাম। আমার বাচ্চাটা যেভাবে গেছে, সবাই যদি আগে থেকেই সচেতন হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এমন ক্ষতি আর হবে না। আমার ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি অন্যরা শিক্ষা পায়, সেটাই চাই।’’
মামলা না করতে কোনো ধরনের চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই। গোটা দেশ আমাদের পক্ষে আছে। ইনশাআল্লাহ পুলিশ-প্রশাসনও আমাদের পাশে আছে।’’
পলাতক কছির উদ্দিন এলাকায় ফিরে কোনো সহানুভূতি জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘না। উনি এখনও এলাকায় আসেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি।’’
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশেই কছির উদ্দিনের জমিতে থাকা গভীর নলকূপের ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৩১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার রাতে মাটির ৫০ ফুট নিচ থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সাজিদের মা রুনা খাতুন শুরু থেকেই বিচার দাবি করে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কছির উদ্দিন আমার বাড়ির পাশে এভাবে তিন জায়গায় গর্ত করে ফেলে রেখেছে। কেন এভাবে ফেলে রাখল, গর্তগুলো কেন বন্ধ করল না? আমি বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কছির উদ্দিন আগে বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি পানির ব্যবসা শুরু করেন এবং এলাকায় পাঁচটি অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) স্থাপন করেন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসব সেমিডিপ চালানো হচ্ছিল।
বছরখানেক আগে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আরও একটি সেমিডিপ বসাতে বোরহোল করান কছির উদ্দিন। মাটির প্রায় ৯০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর পাথর উঠতে থাকায় তিনি পরপর তিনটি স্থানে বোরহোল করেন। তবুও পানির সন্ধান না মেলায় সেখানে সেমিডিপ বসানো হয়নি। সেই পরিত্যক্ত বোরহোলগুলোর একটিতে পড়ে মারা যায় শিশু সাজিদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, ‘‘কছির উদ্দিনের অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভিকটিমের পরিবার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পদাধিকারবলে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জানান, কছির উদ্দিনের আগের কয়েকটি সেচপাম্প বৈধ কি না যাচাই করা হবে। তবে যে বোরহোলে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেটির জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটি ছিল বেআইনি কাজ।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নাঈমা খান বলেন, ‘‘সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঘটনার পর থেকেই কছির উদ্দিন আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ঢাকা/শিরিন//