টিভির বিবর্তন: সাদাকালো থেকে স্মার্ট ভবিষ্যৎ
Published: 29th, October 2025 GMT
গত শতাব্দীর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার টেলিভিশন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। আর ১৯২৮ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি তিন ইঞ্চি পর্দার প্রথম যান্ত্রিক টেলিভিশন জনসমক্ষে নিয়ে আসে। এই টিভির নামকরণ করা হয় ‘অক্টাগন টেলিভিশন’। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডে তৈরি হয় ‘বেয়ার্ড টিভি’। এ টিভিতেই প্রথম বেতারের মাধ্যমে চলমান চিত্র দেখা যায়।
মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই তো কিছুদিন আগেই আমরা সাদাকালো টিভি দেখতাম।
বাংলাদেশে টেলিভিশনের নস্টালজিয়া শুরুই হয়েছিল সেই সাদাকালো যুগে। স্বাধীনতার পর ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছিল একমাত্র চ্যানেল। সাদা আর কালো ছবির মধ্য দিয়ে টিভিতে নাটক, সংবাদ আর সিনেমা দেখাই ছিল সে সময়ের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আশির দশকে যখন দেশে রঙিন টেলিভিশন আসে, তখন সেটি ছিল এক নতুন যুগের সূচনা। রঙিন ছবির আকর্ষণ সবাইকে টিভির সামনে আরও বেশি করে টেনে আনল।
এরপর শুরু হয় কেব্ল টিভির যুগ। বিদেশি চ্যানেলের আগমন বদলে দেয় টিভি দেখার অভ্যাস। স্যাটেলাইট চ্যানেল ও ডিশ অ্যানটেনার কল্যাণে মানুষ প্রথমবারের মতো সীমাহীন বিনোদনের স্বাদ পায়। আন্তর্জাতিক খবর, অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবই তখন হাতের নাগালে। টিভি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের একটি মাধ্যম। এখন চলছে ফ্ল্যাট স্ক্রিনের সময়—যেখানে বিশাল আকারের টিভিগুলোর জায়গা নিয়েছে স্লিম ফর্মের আধুনিক ডিজাইনের টিভি। সিআরটি থেকে এলসিডি, তারপর এলইডি—প্রতিটি ধাপে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে ছবির মান, তেমনি হ্রাস পেয়েছে বিদ্যুৎ খরচ ও অতিরিক্ত জায়গার চাহিদা।
এখন আমরা বাস করছি স্মার্ট টিভির যুগে। টিভি এখন আর শুধু সম্প্রচারিত প্রোগ্রাম দেখার মাধ্যম নয়, এটি হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট-সংযুক্ত একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিভাইস। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স থেকে শুরু করে সবই দেখা যায় সরাসরি টিভিতেই। পাশাপাশি বর্তমান সময়ের এই স্মার্ট টিভিগুলোতে রয়েছে ভয়েস কন্ট্রোল, মাল্টিডিভাইস কানেক্টিভিটি, অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন এবং এআইযুক্ত রিকমেন্ডেশন সিস্টেম। যেমন স্যামসাংয়ের ভিশন এআই। এখন এই স্মার্ট টেলিভিশনগুলো এআইয়ের সাহায্যে গ্রাহকদের রুচি আর পছন্দ বুঝে নিয়ে কনটেন্ট সাজেশন দিতে পারে।
এ ছাড়া স্মার্ট টিভির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এর অ্যাপ ইকোসিস্টেম এবং গেমিং পাওয়ার। বর্তমানে স্মার্ট টিভিগুলো কেবল প্রথাগত স্ট্রিমিং অ্যাপস নয়, বরং এতে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য, ফিটনেস এবং শিক্ষার মতো হাজারো অ্যাপ্লিকেশন। বিশেষ করে গেমিংয়ের ক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কনসোল বা পিসির পাশাপাশি কিছু স্মার্ট টিভিতে সরাসরি ক্লাউড গেমিং ফিচার ইন্টিগ্রেটেড থাকে। এতে কোনো অতিরিক্ত হার্ডওয়্যার ছাড়াই কেবল উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অত্যাধুনিক গ্রাফিকসের গেম খেলা সম্ভব। টিভির লো ল্যাটেন্সি মোড এবং হাই রিফ্রেশ রেট গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
টিভি এখন আর শুধু সম্প্রচারিত প্রোগ্রাম দেখার মাধ্যম নয়, এটি হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট-সংযুক্ত একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিভাইস।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা করবেন না সাজিদের বাবা
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে দুবছরের শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশ। যে ব্যক্তি বোরহোলটি খুঁড়েছিলেন, সেই কছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। মাটির প্রায় ৫০ ফুট গভীর থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে অবহেলার অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করলেও এখন মামলা করতে চান না শিশুটির বাবা রাকিবুল ইসলাম।
শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করব না।’’
পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আগে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিচার চাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেটা বলেছিলাম যেন গোটা দেশ সতর্ক হয়। এই ভুলটা আর কেউ যেন না করে- এ জন্যই কথাটা বলেছিলাম। আমার বাচ্চাটা যেভাবে গেছে, সবাই যদি আগে থেকেই সচেতন হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এমন ক্ষতি আর হবে না। আমার ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি অন্যরা শিক্ষা পায়, সেটাই চাই।’’
মামলা না করতে কোনো ধরনের চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই। গোটা দেশ আমাদের পক্ষে আছে। ইনশাআল্লাহ পুলিশ-প্রশাসনও আমাদের পাশে আছে।’’
পলাতক কছির উদ্দিন এলাকায় ফিরে কোনো সহানুভূতি জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘না। উনি এখনও এলাকায় আসেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি।’’
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশেই কছির উদ্দিনের জমিতে থাকা গভীর নলকূপের ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৩১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার রাতে মাটির ৫০ ফুট নিচ থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সাজিদের মা রুনা খাতুন শুরু থেকেই বিচার দাবি করে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কছির উদ্দিন আমার বাড়ির পাশে এভাবে তিন জায়গায় গর্ত করে ফেলে রেখেছে। কেন এভাবে ফেলে রাখল, গর্তগুলো কেন বন্ধ করল না? আমি বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কছির উদ্দিন আগে বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি পানির ব্যবসা শুরু করেন এবং এলাকায় পাঁচটি অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) স্থাপন করেন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসব সেমিডিপ চালানো হচ্ছিল।
বছরখানেক আগে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আরও একটি সেমিডিপ বসাতে বোরহোল করান কছির উদ্দিন। মাটির প্রায় ৯০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর পাথর উঠতে থাকায় তিনি পরপর তিনটি স্থানে বোরহোল করেন। তবুও পানির সন্ধান না মেলায় সেখানে সেমিডিপ বসানো হয়নি। সেই পরিত্যক্ত বোরহোলগুলোর একটিতে পড়ে মারা যায় শিশু সাজিদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, ‘‘কছির উদ্দিনের অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভিকটিমের পরিবার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পদাধিকারবলে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জানান, কছির উদ্দিনের আগের কয়েকটি সেচপাম্প বৈধ কি না যাচাই করা হবে। তবে যে বোরহোলে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেটির জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটি ছিল বেআইনি কাজ।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নাঈমা খান বলেন, ‘‘সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঘটনার পর থেকেই কছির উদ্দিন আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ঢাকা/শিরিন//