পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ ও রোডম্যাপের দাবি
Published: 1st, December 2025 GMT
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও রাজনৈতিক উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতারা। এ চুক্তি বাস্তবায়নে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় সংলাপ ও কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি, মানবাধিকার সুরক্ষা ও জাতীয় স্থিতির স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি।
পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন। তাঁরা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর সংবিধানে পরিচয় অস্বীকারের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিকার ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠনের পথ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।’
চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন আশা জাগালেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতকরণ এবং টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থমকে যাওয়া গভীর উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাকেও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার ফল বলে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে, চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন, কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে চুক্তি বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত করা।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘২৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান দেশের জন্য গৌরবের, যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার শপথ তৈরি করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংস্কার কমিশনগুলোতে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়েছে। ভূমি, কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না করা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটাতে এখনো সময় আছে। এ কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।’
সেনাবাহিনীর গঠনমূলক ভূমিকা, জাতীয় সংলাপ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি হলে পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথ সুদৃঢ় হবে বলে শামসুল হুদা আশা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নটি কখনোই দেশের মূলধারার গণতান্ত্রিক আলোচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি; বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো অঞ্চলের নয়; এটি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ, জাতীয় সংলাপ এবং নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি
কারাবন্দী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর বোন ও দলীয় নেতাদের সাক্ষাতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিরোধীদলীয় জোট। অন্যথায় তারা দেশজুড়ে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট হাউসের বাইরে গত শুক্রবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দেশটির বিরোধীদলীয় জোট। এতে পাখতুনখাওয়া মিলি আওয়ামী পার্টির (পিকেএমএপি) সভাপতি মেহমুদ আছাকজাই বলেন, ‘আমরা সিন্ধি, বেলুচ, পশতু ও পাঞ্জাবিদের রাস্তায় নামা আটকেছি। না হলে তাঁরা সরকার ও তার নীতির বিরুদ্ধে (রাস্তায়) নেমে পড়তেন। এতে করে শাসকেরা বড় সমস্যায় পড়তেন।’
সরকার পার্লামেন্টকে ‘রাবার স্ট্যাম্পে’ পরিণত করেছে এবং জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিক ‘অন্য কোথাও থেকে আসা নির্দেশ’ অনুসরণ করছেন বলেও অভিযোগ করেন মেহমুদ। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। কিন্তু স্পিকার এ গুরুতর বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।’
ইমরান খান দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী। বর্তমানে তিনি আছেন রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে। সম্প্রতি ইমরানের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে নানা খবর ছড়িয়েছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে মেহমুদ প্রশ্ন করেন, ইমরান খানকে কেন এখনো কারাগারে রাখা হয়েছে এবং কেন তাঁর বোন ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না? সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বসে আছেন। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁর অনুরোধে কেউ কান দিচ্ছে না।’
গণতন্ত্রের দাফন
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার বলেন, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ‘গণতন্ত্রকে দাফন করা হয়েছে’।
আসাদের অভিযোগ, হারিপুরের উপনির্বাচনের ফলাফল কম্পিউটার সিস্টেমের আশ্রয় নিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছে। এ আসনে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আইয়ুইবের স্ত্রী প্রার্থী ছিলেন।
পিটিআইয়ের আরেক নেতা ব্যারিস্টার গওহর আলী খান বলেন, বিরোধী দল পার্লামেন্ট ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হয়েই থাকতে চায়। কিন্তু উপনির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ উঠেছে, তার ফলে তা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
গওহর আরও বলেন, ‘[ইমরান] খানকে আমি যতটা জানি, তিনি আর আমাদের পার্লামেন্টের অংশ হয়ে থাকতে দিতে রাজি হবেন না।’
ইমরানের বোনের অভিযোগ
শুক্রবার ইমরান খানের বোন আলিমা খান আদিয়ালা কারাগারের সুপারিনটেনডেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অবেদন করেন। তাঁর অভিযোগ, ইমরান খানের সঙ্গে সপ্তাহে দুবার সাক্ষাতের সময়সূচি পুনর্বহাল করতে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা মানা হচ্ছে না। তাই তিনি শুক্রবার সকালে কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন।
ইমরানের মৃত্যু নিয়ে গুজব
শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়েছে বলে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
কিন্তু আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কারাগার থেকে তাঁকে (ইমরান খান) স্থানান্তর সম্পর্কিত কোনো খবর সত্য নয়। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’ কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে বিরোধী দলের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।