ইরানে দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই আয়োজক গ্রেপ্তার
Published: 6th, December 2025 GMT
ইরানের কিশ দ্বীপে এক দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়া নারীদের অংশ নেওয়ার ছবি প্রকাশের পর দুজন আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দেশটির বিচার বিভাগ এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির অতি রক্ষণশীলদের সমালোচনা বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ ব্যর্থ হচ্ছে। পশ্চিমা প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কায় এসব সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর থেকে ইরানে অনেক নারী হিজাব আইন লঙ্ঘন করে চলেছেন। গত সপ্তাহে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তর জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হিজাববিহীন এক নারীর ছবি প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে পড়ে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাববিহীন নারীদের অংশ নেওয়ার ছবিগুলো শুক্রবারের। এতে দেখা যায়, অনেক নারী হিজাব ছাড়া দৌড়ে অংশ নেন। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে হিজাব বাধ্যতামূলক করে ইরান।
বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৌড় প্রতিযোগিতার দুই প্রধান আয়োজককে পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে একজন কিশ মুক্তাঞ্চলের কর্মকর্তা। অন্যজন প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কিশ দ্বীপের এ দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের বরাতে মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনকানুন, ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি এবং পেশাগত নীতিমালা মানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগেই (আয়োজকদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছে।’
ইরানের ‘তাসনিম’ ও ‘ফার্স’-এর মতো রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলো এ দৌড় প্রতিযোগিতাকে আগেই অশালীন এবং ইসলামি আইনের প্রতি অসম্মানজনক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছিল।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাহ সরকার উৎখাত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র নারীদের পোশাকে কড়াকড়ি আরোপ করে আইন পাস করে। শুরুতেই এ আইনের বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, জনপরিসরে নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখা এবং শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
২০২২ সালে যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে রাজধানী তেহরান থেকে মাশা আমিনি নামের এক কুর্দি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নীতি পুলিশের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে কয়েক মাস টানা বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েক শ বিক্ষোভকারী নিহত হন। গ্রেপ্তার হন কয়েক হাজার। এরপর হিজাব আইন মানার ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে হিজাব আইন প্রয়োগের ব্যর্থতার অভিযোগ আনে। পরে দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই হিজাব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ইরানের পার্লামেন্ট হিজাব আইন লঙ্ঘনকারী নারীদের কঠোর শাস্তির আদেশসংবলিত একটি আইন পাস করে। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সরকার তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২৩ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে নারীরা হিজাব ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ওই বছরের মে মাসে দেশটির অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা না হলে রাশিয়া বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে। বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাসে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে আট বছর ধরে চলা লড়াইয়ের পর পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে কয়েক হাজার সেনা পাঠান।
পুতিন নয়াদিল্লি সফরের আগে ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “হয় আমরা অস্ত্রের জোরে এই অঞ্চলগুলো মুক্ত করব অথবা ইউক্রেনীয় সেনারা এই অঞ্চলগুলো ছেড়ে চলে যাবে।”
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়াকে তারা নিজস্ব ভূখণ্ড উপহার দিতে চায় না যা মস্কো যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ ভূমি নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়া। এটি তারা ২০১৪ সালে সংযুক্ত করেছিল। এর বাইরে পুরো লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশেরও বেশি, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া।
যুদ্ধের অবসানের জন্য সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির রূপরেখা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় রাশিয়া বারবার বলেছে, তারা সমগ্র ডনবাসের উপর নিয়ন্ত্রণ চায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অনানুষ্ঠানিকভাবে মস্কোর নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া।
২০২২ সালে রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া এখন রাশিয়ার অংশ। এ সংক্রান্ত গণভোটকে পশ্চিমা এবং কিয়েভ প্রহসন বলে খারিজ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ দেশ এই অঞ্চলগুলোকে এবং ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
ঢাকা/শাহেদ