বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সুরক্ষার দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
Published: 23rd, November 2025 GMT
মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী মো. আবুল সরকারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং পরে বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায় দলটি। বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংগঠিতভাবে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলা, হুমকি এবং প্রাণনাশের আশঙ্কাজনক প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মানিকগঞ্জ কোর্ট এলাকায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মিছিল, সহিংস আচরণ ও উসকানিমূলক স্লোগান বাংলার বাউল ঐতিহ্য, শিল্প–সংস্কৃতির বহুত্ব ও মানবিকতার চেতনাকে অবমাননা করেছে।
বিবৃতিতে দলটি চার দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো গ্রেপ্তার বাউলশিল্পীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার, বাউলশিল্পীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিল্প–সংস্কৃতির স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলার লোকসংস্কৃতি, বাউল দর্শন ও মানবতাবাদী চর্চা জাতির ইতিহাস ও পরিচয়ের অংশ। এ ঐতিহ্য দমনে কোনো উগ্রবাদী চক্রের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না।
৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় খালা পাগলির মেলায় পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ধর্ম অবমাননা করে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। তাঁর মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর রাতে মাদারীপুরে একটি গানের আসর থেকে আবুল সরকারকে আটক করে মানিকগঞ্জ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরের দিন সকালে তাঁকে জেলা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ওই দিন দুপুরে মুফতি মো.
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন ভক্ত-অনুরাগীসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন। ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি এবং আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব উলশ ল প ম ন কগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরে ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফর দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গভীরভাবে বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে এক যৌথ বিবৃতিতে এই কথা বলা হয়েছে।
বাসস লিখেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করছেন।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া, প্রধান উপদেষ্টার একান্ত আলাপ
শনিবার (২২ নভেম্বর) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা স্বাগত জানান। এছাড়া গার্ড অব অনার এবং তোপধ্বনি দেওয়া হয়। পরে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পৃথকভাবে সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শনিবার দুই নেতার উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করেন, বিশেষ গুরুত্ব দেন বাণিজ্য, সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে।
প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভুটানই প্রথম দেশ যারা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভুটানের অকৃত্রিম সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় পক্ষ ২০২৪ সালের মার্চে ভুটানের রাজা’র সফরের কথাও উল্লেখ করেন, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করেছিল।
বাংলাদেশ ও ভুটান বাণিজ্য ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকা ভুটানের রাজার গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি উদ্যোগের প্রশংসা করে এবং সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে। উভয় পক্ষ কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ইতিবাচক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে।
বাংলাদেশ সরকার-টু-সরকার ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়, যা ভুটানের জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করবে।
দুই দেশের নেতা ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
গত বছর ভুটানের রাজার সফরের পর সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে দেশটির শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএস/বিডিএস আসনের বার্ষিক বরাদ্দ ৩০ জনে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ বুয়েটে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ১০টি নির্দিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং আসন, ক্রীড়া বিজ্ঞানে ডিপ্লোমার জন্য বিকেএসপিতে একটি নির্দিষ্ট আসন, ভুটানি ক্রীড়া দলের জন্য হোম-গ্রাউন্ড সুবিধা এবং ভুটানি বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশেষায়িত পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে।
উভয় নেতা সার্ক এবং বিমসটেকসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যা অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সাধারণ আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
প্রধানমন্ত্রী তোবগে তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানান।