সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারীর প্রত্যাহার দাবি বিএনপির
Published: 11th, January 2025 GMT
নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলি আকতার ও অফিস সহকারী সালমা খাতুনের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা বিএনপি। শনিবার দুপুরে সিংড়া গোডাউনপাড়ায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কলম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল। এ সময় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন, পৌর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউল গনি, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব উৎপল কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও বিভিন্ন দপ্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। সিংড়ার ইটালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহাগ মোল্লার নেতৃত্বে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্যসচিব জাকারিয়া হোসেনের জমির ধান কেটে নেওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। উল্টো ছাত্রদল নেতার বাবা কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইটালী ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শামীম হোসেনকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয় যুবলীগ নেতা সোহাগ মোল্লা ও তাঁর বাহিনী।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গুরুতর আহত কৃষক ও যুবদল নেতাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির জন্য নিলে যুবলীগ নেতা সোহাগ মোল্লার বোন ও হাসপাতালের কর্মচারী সালমা খাতুনের সহায়তায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মিলি আকতার তড়িঘড়ি করে তাঁদের দুজনের ভাঙা হাত প্লাস্টার করে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় চিকিৎসক মিলি আকতার ও কর্মচারী সালমা খাতুনকে দ্রুত প্রত্যাহার ও অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সোহাগ মোল্লাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিএনপির নেতারা।
তবে অভিযুক্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলি আকতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবু বক্কর সিদ্দিক ও শামীম হোসেনকে যথাযথ চিকিৎসাই দিয়েছি। তাঁদের প্রথমে ইনজেকশন দিয়েছি। এরপর এক্স-রে করিয়ে হাতের আঙুল ভাঙা পাওয়া যায়। তখন তাঁদের হাত প্লাস্টার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ, হাসপাতালে তাঁদের থাকার প্রয়োজন ছিল না। এ ছাড়া হাসপাতালে শয্যার অভাব ছিল। সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে উপজেলার ইটালী ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শামীম হোসেন ও কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি সোহাগ মোল্লার বিরুদ্ধে। পরে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাঁদের ভর্তি না করানোর অভিযোগ ওঠে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা শামীম হোসেন বলেন, তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। খুব অসুস্থতাবোধ করছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে তড়িঘড়ি করে হাত প্লাস্টার করে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা সোহাগ মোল্লা বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমিতে জোর করে ধান লাগানো নিয়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো রোগীর সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিংড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তবে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কি না তাঁর জানা নেই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।