দেশের মোট শ্রমিকশ্রেণির ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। তাঁদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। আর দেশের শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে ১৪২টি খাত ও উপখাতে কাজ করেন। এর মধ্যে পোশাক ও ট্যানারিসহ মাত্র ৪২টিতে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা আছে। অন্যদিকে হালকা প্রকৌশল, স্টিল রি রোলিং ও শিপ ব্রেকিংসহ ১০০ খাত–উপখাতে এখনো কোনো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। সেসব খাতের শ্রমিকের জন্য কোনো আইনি সুরক্ষাও নেই।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারসংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আজ রোববার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। সভায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন; প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।

শ্রমিকশ্রেণির জীবনমান, কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয় প্রবন্ধে। এসব সুপারিশ হলো আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিচালনগত; যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের।

দেশে শিশুশ্রমের পাশাপাশি জোর করে কাজ করানো (ফোর্সড লেবার) হয় বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকের বদলে অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে বেশি যান। এ জন্যই প্রবাসী আয় কম আসে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু অধিকারের কথা বলি, দায়িত্বের কথা বলি না। কারখানা লাভ করতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বেকারত্ব বাড়বে।’

সভায় বক্তারা শ্রম খাতের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানান। এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখনই তা করলে সমস্যা হতে পারে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, দেশে মোট শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে আট কোটি। আগে যেমন দাসত্ব ছিল, এখনো তা আছে। তবে এখন আছে নতুন ধরনের দাসত্ব। শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশার চাপ ও ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সময়ের চাপে আছে কমিশন। তা ছাড়া এ খাতে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নেই।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে হকার, গৃহশ্রমিক ও দিনমজুরের জন্য সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। শ্রম খাতের সবাইকে নিয়ে সমন্বিত সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য মজুরির মানদণ্ড, সামাজিক সুরক্ষা ও সাংগঠনিক অধিকার থাকা জরুরি। তাহলে গতিশীল অর্থনীতিতে ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠিত হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, পোশাক খাতের পরই বড় হচ্ছে নির্মাণ খাত। অথচ এ খাতে সরাসরি শ্রমিক দেখা যায় না। শ্রমিকদের নিয়োগ দেন ঠিকাদারেরা, যাঁদের সরাসরি দেখা যায় না। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তাহলে কীভাবে কাজ হবে? তাঁর প্রশ্ন, ‘শ্রমিককে কেন মজুরি ও অধিকার পেতে রাস্তায় নামতে হবে? গণমাধ্যমকর্মীদের কেন মানবাধিকার থাকবে না?’ তিনি মনে করেন, সুপারিশ প্রণয়নই শেষ কাজ নয়, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মাঠেও থাকতে হবে।

প্রবাসী শ্রমিকের কথা তুলে ধরে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের টাকায় ব্যালট ছাপানো হয়, অথচ তাঁরা ভোট দিতে পারেন না।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার পরও যাতে কমিশনের কার্যক্রম কিছুদিন অব্যাহত থাকে, সেটা আমাদের অনুরোধ। সুপারিশ বাস্তবায়নে তাঁদের নজরদারিটা কিছুদিন যেন থাকে। যদি শ্রম–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগওয়ারি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সেল গঠন করা যায়, তাহলে বড় কাজ হবে।’

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আগামী এক বছরকে ‘শ্রমকল্যাণ বছর’ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বিন্যস্ত করলে অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে উদ্যোক্তারা সব সুপারিশ বাস্তবায়নে এখনই প্রস্তুত রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রস্তুত থাকতে পারেন। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা প্রস্তুত নন।’

শ্রম খাতের জন্য জীবন, জীবিকা ও জবানের অধিকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে শ্রমশক্তির গুরুত্ব ও শ্রমশক্তির মর্যাদা সামনে রেখে কাজ করতে হবে। অনেকেই শ্রমিকদের কাজকে ছোট কাজ মনে করেন। যেমন ঘরে–বাইরে শ্রমিকদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করা হয়, যা অপমানকর।

শ্রম আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত আইনের বাংলা ভাষা ব্যবহার করার প্রতি জোর দেন তাসলিমা আক্তার, যাতে শ্রমিকদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে শিল্প পুলিশকে ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। শ্রম অসন্তোষ দূর করাই যেন তাঁদের অন্যতম কাজ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল

শুক্রবারের শুরুতেই ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও অস্ত্রাগারে বড় ধরনের হামলা চালায় এবং ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে আঘাত হানে। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান শুক্রবার গভীর রাতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের দিকে ডজন ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই হুমকি দূর না হওয়া পর্যন্ত হামলা যত দিন প্রয়োজন, তত দিন চলবে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলার প্রতি জোরালো সমর্থন জানান। তিনি সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি দারুণ হয়েছে। আমরা (ইরানিদের) সুযোগ দিয়েছিলাম, তারা সেটি নেয়নি। তারা বড় আঘাত পেয়েছে, খুব বড় আঘাত...এবং আরও আসছে।’

নেতানিয়াহুর এই হামলার পেছনের উদ্দেশ্য, কীভাবে তিনি ট্রাম্পকে কাজে লাগিয়ে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন এবং এই হামলার ফলে অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলা: ট্রাম্প কি পাগল হয়ে গেছেন১৩ জুন ২০২৫

হামলাটি ঠিক এখনই কেন হলো? প্রথমত, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’–এর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে আসছে। এই ২০ বছরের বেশির ভাগ জায়গায় নেতানিয়াহুই ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু সামরিক নেতারা অনেক আগে থেকেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের কথা ভাবছিলেন। ১৯৮১ সালে ইরাকে এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ায় পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিল। দুই ক্ষেত্রেই ওই পারমাণবিক কর্মসূচিগুলো ইসরায়েলের জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্য ছিল আগেভাগে হামলা করে সেই হুমকি দূর করা।

ইরানে হামলার চিন্তাভাবনা ২০১২ সালে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাকের সময় তুঙ্গে পৌঁছেছিল। কিন্তু তখন ওবামা প্রশাসন তাঁদের থামিয়ে দেয়। পরে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়। তখন কিছু ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধান মনে করেছিলেন যে ইসরায়েলকে একাই হামলা করা উচিত নয়।

আরও পড়ুনযে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল৭ ঘণ্টা আগে

আমেরিকার সম্মতি আর আগে থেকে জানিয়ে রাখা জরুরি। ১৯৮১ সালে মেনাখেম বেগিন আমেরিকাকে না জানিয়ে ইরাকের চুল্লিতে হামলা চালান। ফলে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে এহুদ ওলমার্ট ২০০৭ সালে জর্জ বুশকে সিরিয়ার গোপন চুল্লি সম্পর্কে জানান। তখন বুশ প্রথমে নিজে হামলার কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে তা ধ্বংস করতে দেন। প্রায় এক দশক ইসরায়েল সেই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এই হামলা ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের দুই দফা পাল্টাপাল্টি হামলার পর হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে দামেস্কে এক ইরানি জেনারেল নিহত হলে ইরান ড্রোন দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়। কারণ, ইসরায়েল মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সমর্থন পেয়েছিল।

অক্টোবর মাসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেয়। এরপর লেবাননে হিজবুল্লাহ ভেঙে পড়ে। সিরিয়ায় আসাদের শাসনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার দিকে আঘাত হানার পথ সুগম হয়। কিন্তু তারা ট্রাম্পের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল।

এখন একটা প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কি এখন গাজায় হামলা থামিয়ে দেবে? নাকি এই আক্রমণ শেষ করে গাজায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে? এটা সময়ই বলবে। নেতানিয়াহু এখনো গাজায় হামাস ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনায় অটল। ট্রাম্প পরিকল্পনা মেনে সেই এলাকায় অবকাশযাপনকেন্দ্র ও বসতি গড়ার নীতিই এখনো ইসরায়েলের নীতি।

কিছু ইসরায়েলি মনে করছিলেন, ট্রাম্প হয়তো এই হামলার অনুমতি দেবেন না। কারণ, তিনি ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। আসলে কি সময় আর ট্রাম্পের উপস্থিতিই তাহলে মূল পার্থক্য তৈরি করল?

অবশ্যই। অক্টোবরের হামলার পর ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ভেঙে যাওয়া, রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম না দেওয়া, হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের ধ্বংস, আসাদের পতন—সব মিলিয়ে বড় হামলার সুযোগ তৈরি হয়। সম্প্রতি জানা গিয়েছিল যে ইসরায়েল সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নেতানিয়াহু হামলার জন্য চাপও দিচ্ছিলেন। ট্রাম্প কয়েক দিন আগেও প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেছিলেন। বাস্তবে নেতানিয়াহু তাঁকে আগেই জানিয়েছিলেন। আর এখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের সমর্থনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ইসরায়েলকে সেন্টকমের অংশ করা হয়। ফলে ইসরায়েল এখন মার্কিন আঞ্চলিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছে। এতে মার্কিন সেনা বা বিমান নয়, গোয়েন্দা তথ্যও ভাগাভাগি হচ্ছে।

সেই সঙ্গে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বোঝার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ বলেই মনে হয়। ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তির কথা বললেও বা গাজার যুদ্ধবিরতির কথা বললেও তিনি আসলে ইসরায়েলকে কোনো রকম চাপ দিতে চান না। ফলে ইসরায়েল নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও আমেরিকা প্রায়ই ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক বিষয়ে শেষ কথা সব সময় আমেরিকার। ট্রাম্প চুক্তি চেয়েছিলেন। ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চললে হামলা হতো না। কিন্তু তারা সুযোগ নেয়নি। হিজবুল্লাহও যুদ্ধ থামাতে পারত। কিন্তু তারা তা চায়নি।

এখন একটা প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কি এখন গাজায় হামলা থামিয়ে দেবে? নাকি এই আক্রমণ শেষ করে গাজায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে? এটা সময়ই বলবে। নেতানিয়াহু এখনো গাজায় হামাস ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনায় অটল। ট্রাম্প পরিকল্পনা মেনে সেই এলাকায় অবকাশযাপনকেন্দ্র ও বসতি গড়ার নীতিই এখনো ইসরায়েলের নীতি।

ইরান আক্রমণে ইসরায়েলে প্রায় সর্বসম্মত সমর্থন আছে। গাজার যুদ্ধ ও ইরান আক্রমণ নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তাই বাড়িয়েছে। তাঁর কৌশল হলো, কোনো অজনপ্রিয় কাজ করতে গেলে যুক্তি দেখান যে বড় কোনো শক্তির চাপে পড়ে এমনটা করতে হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর এই হামলা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ ছিল, মার্কিন সমন্বয় ও ব্যর্থতার ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু এখন সমন্বয় হয়েছে। তবে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়ে গেছে। তবু এটি বহু বছরের প্রস্তুতির ফল।

ইরানের পারমাণবিক হুমকি সত্যিই বেড়েছে। গত ডিসেম্বর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের এক ধাপ কাছে চলে যায়। এই তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা। সব মিলিয়ে ইরানের এই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ, ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি এবং ট্রাম্পের সমর্থন—এই তিনের সমন্বয়েই এই হামলা হয়েছে।

আলুফ বেন হারেৎজ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

দ্য নিউ ইয়র্কার থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল