এখনো ন্যূনতম মজুরির বাইরে ১০০ খাত-উপখাত
Published: 12th, January 2025 GMT
দেশের মোট শ্রমিকশ্রেণির ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। তাঁদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। আর দেশের শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে ১৪২টি খাত ও উপখাতে কাজ করেন। এর মধ্যে পোশাক ও ট্যানারিসহ মাত্র ৪২টিতে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা আছে। অন্যদিকে হালকা প্রকৌশল, স্টিল রি রোলিং ও শিপ ব্রেকিংসহ ১০০ খাত–উপখাতে এখনো কোনো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। সেসব খাতের শ্রমিকের জন্য কোনো আইনি সুরক্ষাও নেই।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারসংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আজ রোববার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। সভায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন; প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।
শ্রমিকশ্রেণির জীবনমান, কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয় প্রবন্ধে। এসব সুপারিশ হলো আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিচালনগত; যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের।
দেশে শিশুশ্রমের পাশাপাশি জোর করে কাজ করানো (ফোর্সড লেবার) হয় বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকের বদলে অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে বেশি যান। এ জন্যই প্রবাসী আয় কম আসে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু অধিকারের কথা বলি, দায়িত্বের কথা বলি না। কারখানা লাভ করতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বেকারত্ব বাড়বে।’
সভায় বক্তারা শ্রম খাতের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানান। এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখনই তা করলে সমস্যা হতে পারে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, দেশে মোট শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে আট কোটি। আগে যেমন দাসত্ব ছিল, এখনো তা আছে। তবে এখন আছে নতুন ধরনের দাসত্ব। শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশার চাপ ও ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সময়ের চাপে আছে কমিশন। তা ছাড়া এ খাতে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নেই।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে হকার, গৃহশ্রমিক ও দিনমজুরের জন্য সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। শ্রম খাতের সবাইকে নিয়ে সমন্বিত সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য মজুরির মানদণ্ড, সামাজিক সুরক্ষা ও সাংগঠনিক অধিকার থাকা জরুরি। তাহলে গতিশীল অর্থনীতিতে ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠিত হবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, পোশাক খাতের পরই বড় হচ্ছে নির্মাণ খাত। অথচ এ খাতে সরাসরি শ্রমিক দেখা যায় না। শ্রমিকদের নিয়োগ দেন ঠিকাদারেরা, যাঁদের সরাসরি দেখা যায় না। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তাহলে কীভাবে কাজ হবে? তাঁর প্রশ্ন, ‘শ্রমিককে কেন মজুরি ও অধিকার পেতে রাস্তায় নামতে হবে? গণমাধ্যমকর্মীদের কেন মানবাধিকার থাকবে না?’ তিনি মনে করেন, সুপারিশ প্রণয়নই শেষ কাজ নয়, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মাঠেও থাকতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকের কথা তুলে ধরে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের টাকায় ব্যালট ছাপানো হয়, অথচ তাঁরা ভোট দিতে পারেন না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার পরও যাতে কমিশনের কার্যক্রম কিছুদিন অব্যাহত থাকে, সেটা আমাদের অনুরোধ। সুপারিশ বাস্তবায়নে তাঁদের নজরদারিটা কিছুদিন যেন থাকে। যদি শ্রম–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগওয়ারি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সেল গঠন করা যায়, তাহলে বড় কাজ হবে।’
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আগামী এক বছরকে ‘শ্রমকল্যাণ বছর’ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বিন্যস্ত করলে অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে উদ্যোক্তারা সব সুপারিশ বাস্তবায়নে এখনই প্রস্তুত রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রস্তুত থাকতে পারেন। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা প্রস্তুত নন।’
শ্রম খাতের জন্য জীবন, জীবিকা ও জবানের অধিকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে শ্রমশক্তির গুরুত্ব ও শ্রমশক্তির মর্যাদা সামনে রেখে কাজ করতে হবে। অনেকেই শ্রমিকদের কাজকে ছোট কাজ মনে করেন। যেমন ঘরে–বাইরে শ্রমিকদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করা হয়, যা অপমানকর।
শ্রম আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত আইনের বাংলা ভাষা ব্যবহার করার প্রতি জোর দেন তাসলিমা আক্তার, যাতে শ্রমিকদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে শিল্প পুলিশকে ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। শ্রম অসন্তোষ দূর করাই যেন তাঁদের অন্যতম কাজ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ-প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এখনই যা দরকার
খুব সাধারণ চোখে তাকালেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্র কী পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, নদী-হ্রদ-বিল ও জলাভূমির মতো স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্র, শালবন, চিরসবুজ বন এবং পার্বত্য এলাকার বনভূমি, অর্থাৎ স্থলজ বাস্তুতন্ত্র, পাহাড়ি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং মনুষ্যসৃষ্ট বাসস্থান, যেমন গ্রাম, শহর ও কৃষিজমি—সবই এখন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে মানুষের আচরণের কারণে।
অতিরিক্ত মাছ ধরা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার অভাব, রাসায়নিক ও তেলের দূষণ, বন ধ্বংস, অব্যবস্থাপনায় বনজ সম্পদের অপচয়, পাহাড় কাটা, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, গাছ-মাছ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহিরাগত প্রজাতির আগমন, পর্যটন ও উন্নয়নের নামে ব্যয়বহুল প্রকল্প—এসব মিলেই বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন আসছে। এটি এখন প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনের চেয়েও ভয়াবহ।
এ ধরনের ক্ষয় ঠেকাতে এখনই শক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতির ধরন বুঝে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের যা হারিয়েছি, তা আর হারাতে দেওয়া যাবে না। এটা হওয়া উচিত জাতিগতভাবে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বাস্তুতন্ত্রের জীব ও জড় উপাদান একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। শক্তিপ্রবাহ, পুষ্টিচক্র, প্রজাতিগুলোর আন্তসম্পর্ক বাস্তুতন্ত্রকে কার্যকর রাখে। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা না করা মানেই আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের ঝুঁকিতে ফেলা। প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার (ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) একটি কার্যকর পথ। তবে এটি সহজ কিংবা তাৎক্ষণিক কোনো কাজ নয়, এটি সম্পন্ন করতে হলে আমাদের অর্থনীতি, কৃষি, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা দিকেই পরিবর্তন আনতে হবে। এর সৌন্দর্য হলো এটি যেকোনো স্কেলে ঘটতে পারে এবং এতে সবারই ভূমিকা রয়েছে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে শুধুই গাছ লাগানো নয়। আমরা অনেকেই ভাবি, গাছ লাগানো মানেই পরিবেশ বাঁচানো। বাস্তবে শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়, কী গাছ লাগানো হচ্ছে, সেটা দেশি কি না, কোথায় লাগানো হচ্ছে, গাছের উপযুক্ত যত্ন হচ্ছে কি না—এসব বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তুতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
সব সময় একটি পরিবেশকে তার অতীত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। যেমন আগে যেসব অঞ্চল বনভূমি ছিল, এখন সেগুলোর একটি বড় অংশ কৃষিজমি বা বসতিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশকে বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে, ঠিক যেমন সমাজ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াচ্ছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) তথ্যমতে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে যদি ৩৫ কোটি হেক্টর ভূমি ও জলজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যায়, তবে বিশ্ব প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিবেশগত সেবা পেতে পারে এবং ১৩ থেকে ২৬ গিগাটন গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে পারে। এ অর্থনৈতিক লাভ বিনিয়োগের তুলনায় ৯ গুণ বেশি। অন্যদিকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষতি তিন গুণ বেশি।
বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব সব ক্ষেত্রেই—বন, কৃষিজমি, শহর, জলাভূমি ও সাগর পর্যন্ত। উদ্যোগ নিতে পারে সরকার, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কমিউনিটি এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ের মানুষও। কারণ, ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং এর উৎসও বিভিন্ন। বস্তুত পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে একটি সার্বিক পরিবর্তন—শুধু প্রকৃতির নয়, আমাদের আচরণেরও। এটা রোগনিয়ন্ত্রণ, জীবিকা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা, এমনকি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিস) অর্জনের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত।
জাতিসংঘ ঘোষিত ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের দশক (ইউএন ডকেড অন ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) আমাদের আহ্বান জানায়, যাতে আমরা ইকোসিস্টেমের, অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষয় রোধ করি, ধ্বংস থামাই ও পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হই। এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক (২০২১-২০৩০) ধরে চেষ্টা করবে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক জলবায়ু সমাধান (ন্যাচারাল ক্লাইমেট সলিউশন), যা অভিযোজন ও প্রশমনে সহায়তা করে এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই পথ তৈরি করবে।
প্যারিস চুক্তি ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপস) আওতায়, দেশগুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানে পরিবেশ পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এ ছাড়া আরইডিডি+, অর্থাৎ ‘রেড’ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বন ধ্বংস ও বন নষ্ট হওয়া থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো। আর ‘+’ চিহ্নটি বোঝায় অতিরিক্ত কিছু বন-সম্পর্কিত কাজ, যেমন বনের ভালোভাবে দেখাশোনা করা, আর বনের কার্বন ধরে রাখা ও বাড়ানো, যেগুলো জলবায়ু রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে রেড+ এর আওতায় বন সংরক্ষণ ও কার্বন মজুতের উন্নয়ন সম্ভব। তবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থায়ন, যা এখনো সীমিত। এ ক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স’ (সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থায়ন) নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আমরা অনেক সময় ধরে একটা চক্রেই যেন আটকে আছি—পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের সমস্যার সমাধান শুধু গাছ লাগানোর মধ্যেই যেন আমরা খুঁজে পাচ্ছি! তা–ও বলা বাহুল্য যে যথোপযুক্ত উপায়ে নয়।
যা হোক, আমরা যদি বাস্তুতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে পুনরুদ্ধার করতে চাই, তবে শুধু গাছ লাগানো নয়, পুরো বাস্তুতন্ত্রের প্রেক্ষাপট বুঝে কাজ করতে হবে। সময় খুব কম। এখনই উদ্যোগ না নিলে ক্ষতির মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছাবে, যেখান থেকে ফেরা আর সম্ভব হবে না।
সম্প্রতি জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) সহায়ক সংস্থার ৬২তম অধিবেশনে (এসবি–৬২) অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। জার্মানির বন এ অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে কপ–৩০ (২০২৫) সম্মেলনের আগে অভিযোজন ও অর্থায়ন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার ও এ দৃষ্টিকোণও তুলে ধরা সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিজ্ঞতা ও যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বললেই চলবে না। এখন দরকার বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও আমূল আচরণগত পরিবর্তন। পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের ঘোষিত দশকের (২০২১-২০৩০) মধ্যভাগে এসে আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, আমরা কি সত্যিই এগোচ্ছি? পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গুরুত্ব না দিই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা রেখে যাব এক অস্থির, বিপন্ন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ।
বিধান চন্দ্র পাল প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রভা অরোরা, ন্যাশনাল অপারেটর, ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন (এফইই), বাংলাদেশ এবং চেয়ার, মেইক এ ডিফারেন্স উইক সেলিব্রেশন গ্লোবাল কমিটি, সোসাইটি ফর ইকোলজিক্যাল রেস্টোরেশন (এসইআর)।
[email protected]