Prothomalo:
2025-10-14@10:42:46 GMT

আকাশছোঁয়া ভবন বাড়ছে ঢাকায়

Published: 13th, January 2025 GMT

গত শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মিত কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার মালয়েশিয়াকে নতুন করে পরিচিত করেছিল। দুটি টাওয়ারের সমন্বয়ে তৈরি ভবনটি তখন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। ২০০৪ সালে তাইওয়ানে জিনেই শহরে তাইপে ১০১ নির্মিত হলে পেট্রোনাস উঁচু ভবনের মুকুট হারায়। তারপর দুই দশক পার হয়েছে। এখন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে কুয়ালালামপুরের মারদেকা ১১৮। 

এভাবেই বিভিন্ন দেশ পাল্লা দিয়ে একের পর এক আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ করছে। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়ও এখন উঁচু ভবন তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের উচ্চতার পাঁচ ভাগের এক ভাগ উচ্চতার ভবন নির্মিত হয়েছে ঢাকায়। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যাক। ১৬৩ তলাবিশিষ্ট বুর্জ খলিফার উচ্চতা ৮২৮ মিটার বা ২ হাজার ৭১৭ ফুট। আর ঢাকায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উঁচু ভবন মতিঝিলের সিটি সেন্টারের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট। এক দশক আগে ৩৭ তলা এই বাণিজ্যিক ভবনের ব৵বহার শুরু হয়। 

বর্তমানে ঢাকায় ৫০০ ফুট উচ্চতার বেশ কয়েকটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শান্তা হোল্ডিংসের পিনাকেল ও ঢাকা টাওয়ার, ট্রপিক্যাল হোমসের টিএ টাওয়ার, সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসের এসকেএস স্কাইরিচ ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমজিআই টাওয়ার। এর মধ্যে টিএ টাওয়ারটি মালিবাগে আর বাকিগুলো তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে। সবগুলো ভবনই বাণিজ্যিক। সুউচ্চ এই ভবনগুলোর মধ্যে পিনাকেলের নির্মাণকাজ চলতি বছর শেষ হবে। 

উঁচু ভবনের ইতিহাস

আকাশচুম্বী অট্টালিকার স্বর্ণযুগ শুরু প্রায় ১০০ বছর আগে। ১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত দ্য ক্রাইসলার ভবন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। চলতি শতাব্দীর প্রথম দুই যুগকে দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ বলা যায়। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০০ দালানের ৮৭টি এই সময়ের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। যদিও নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে হামলার পর আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণের কাজে কিছুটা বদল আসে। এই হামলার ঘটনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগুলো আরও বেশি নিরাপদ, মজবুত ও সবুজায়ন করে নির্মাণের ঝোঁক বাড়ে। 

উচ্চ ভবনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কাউন্সিল অন টল বিল্ডিংস অ্যান্ড আরবান হ্যাবিটেটের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পাঁচটি ভবন হচ্ছে ইউএইর বুর্জ খলিফা (উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট), মালয়েশিয়ার মারদেকা ১১৮ (২ হাজার ২২৭ ফুট), চীনের সাংহাই টাওয়ার (২ হাজার ৭৩ ফুট), সৌদি আরবের মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার (১ হাজার ৯৭২ ফুট) এবং চীনের পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সেন্টার (১ হাজার ৯৬৫ ফুট)। উচ্চতার দিক দিয়ে ১০০তম ভবন হচ্ছে চীনের হিলটন ওয়েনচৌ সিটি সেন্টার, যার উচ্চতা ১ হাজার ১১২ ফুট। 

বিশ্বের শততম উঁচু ভবনের প্রায় অর্ধেক উচ্চতার ভবন সিটি সেন্টার হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকাশচুম্বী ভবন। যদিও দেশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ শুরু স্বাধীনতার আগে। পূর্ব পাকিস্তানে সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে দিলকুশায় জীবন বিমা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটির উচ্চতা প্রায় ৮৫ মিটার। দেশ স্বাধীনের পর নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে ১০০ মিটারের কাছাকাছি উচ্চতায় বেশ কিছু ভবন নির্মিত হয়। গত শতাব্দীতে নির্মিত ৩১ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের উচ্চতা ১৩৭ মিটার বা ৪৫০ ফুট। 

বাড়ছে আকাশচুম্বী ভবন

এক দশক বা এক যুগ পর কেউ যদি গুলশান অ্যাভিনিউতে পা রাখেন, তাহলে সত্যি সত্যি অবাক হবেন। অ্যাভিনিউর সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বেশ কিছু বহুতল ভবন। গত দেড় দশকে মতিঝিলের পর গুলশান অ্যাভিনিউ বড় বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেই ঢেউ এসে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতেও লেগেছে। সেখানেও নির্মিত হয়েছে আকাশছোঁয়া ভবন। এখানেই নিজেদের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করেছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশীয় শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক শিল্পগোষ্ঠী। 

জায়গা স্বল্পতায় গুলশান-বনানীর বাণিজ্যকেন্দ্রটি সম্প্রসারণের সুযোগ কমে এসেছে। তাই সুউচ্চ ভবন নির্মাণের ঢেউ এসে লেগেছে এখন তেজগাঁওয়ে। পঞ্চাশের দশকে ৫০০ একরের বেশি জায়গা নিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৯৯৮ সালে তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়ককে ‘বাণিজ্যিক সড়ক’ ঘোষণা করে সরকার। ১০ বছর আগে শিল্পাঞ্চলের চরিত্র বদলে শিল্প-বাণিজ্য-আবাসন—এই তিনের মিশেলে তেজগাঁও গড়ে তোলার অনুমোদন দেয় সরকার। তারপরই দ্রুতই বাড়তে থাকে এই এলাকায় বহুতল ভবন। 

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ (চলতি দায়িত্বে) মো.

আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গুলশান ২ থেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত ভবনের উচ্চতার সীমা ১৫০ ফুটের বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে। ফলে এই এলাকায় ৫০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু বহুতল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের স্থাপনার ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের উচ্চতার ছাড়পত্র ও জমির পরিমাণ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবনের ট্রাফিক ইম্পেক্ট অ্যানালাইসিস (টিআইএ) করাও বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সুউচ্চ ভবনের কারণে সড়কে যানজটে কী প্রভাব পড়বে। ভবনের কাঠামোগত নকশা রাজউক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করার পর অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে ভবনের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ত্রুটি না থাকে। এসব বিষয় আগামী দিনে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংযোজন করা হবে। 

হাতিরঝিল থেকে তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে ঢুকতেই জিএমজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১২০ কাঠা জমির ওপর ৫০০ ফুট উচ্চতার ঢাকা টাওয়ার নির্মাণ করছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান শান্তা হোল্ডিংস। ছয়টি বেজমেন্ট ছাড়া ভবনটি হবে ৩৮ তলা। কিছুদূর হাঁটতেই চোখ পড়ল নির্মাণ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স ৩০ কাঠা জমিতে পাঁচটি বেজমেন্টসহ ৩০ তলা উঁচু ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। এই সড়কেই ৫০০ ফুট উচ্চতার ৪১ তলা এসকেএস স্কাই রিচ ভবনের নির্মাণকাজ করছে সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। 

তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে শান্তা হোল্ডিংসের ৫০০ ফুট উচ্চতার পিনাকেল নামের সুউচ্চ ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪৫ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন এই ভবন ৫টি বেজমেন্ট ছাড়া ৪০ তলা। গাড়ি পার্কিং থাকবে ৩৬৭টি। এর পাশেই ২৫ তলা উচ্চতার ফোরাম নামের টুইন টাওয়ার নির্মাণ করেছে শান্তা হোল্ডিংস। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার এই ভবনে ইউনিলিভার, জারা, সিনজেনটা, ম্যারিকো, সুমিতিমোর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থানান্তর করেছে। 

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে পিনাকেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে; তারপর ইন্টেরিয়রের কাজ শুরু হবে—এমনটাই জানালেন শান্তা হোল্ডিংসের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস)শিহাব আহমেদ। তিনি জানান, তেজগাঁও এলাকায় তাঁরা নতুন আরও ২টি ৫০০ ফুট উচ্চতার ভবন নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করবেন। 

আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণ নিয়ে শিহাব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুতল ভবন নির্মাণকাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভূগর্ভস্থ মাটির গঠন, কয়েক শ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, ৬০ ফুট নিচে বেজমেন্ট কাজের নিরাপত্তা, ভবনের উপরিভাগে গ্লাসে বাতাসের চাপ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়। তবে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই আমরা সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই ফোরামে এসে বলেন, ভবনের ভেতরে গেলে মনে হয় বিদেশের কোনো ভবনে এসেছেন। সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাব্যবস্থাও বিশ্বের যেকোনো আধুনিক ভবনের মতো।’ 

তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে আড়ংয়ের পরই রয়েছে একটি গলিপথ। সেখানে ২ হাজার ৭ বর্গমিটার আয়তনের জমির ওপর আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান ইনস্টার নির্মাণ করছে ৩২ তলা উঁচু ভবন। ট্রেড ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামের ভবনটির জমির মালিকানায় রয়েছে হাউস অব সানশাইন নিটওয়্যার লিমিটেড। তার পাশেই লালবাগ মেটাল ইন্ডাস্ট্রির জমিতে নির্মিত হচ্ছে ১৫ তলার আরেকটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এ ছাড়া ঢাকা ব্রেড ফ্যাক্টরির প্লটে এনএইচ টাওয়ার নামে ৩২ তলা ভবন হচ্ছে। নেক্সটিয়ন ডেভেলপমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ করছে। 

তেজগাঁও-হাতিরঝিল সংযোগ সড়কে ৫০০ ফুট (১৫২ দশমিক ৪ মিটার) উচ্চতার এমজিআই টাওয়ার নির্মাণ করছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। গত নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ভবনটিতে থাকবে ৬টি বেজমেন্ট ছাড়া ৩৯ তলা। নির্মাণাধীন ভবনটির নির্মাণ অংশীদার হিসেবে রয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সপ্তম ব্যুরো (সিএসসিইসি৭ বি)। এই ভবনেই হবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চেইন হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত। 

মালিবাগে দেশের প্রথম ৪৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন করছে ট্রপিক্যাল হোমস। তলার সংখ্যা বেশি হলেও টিএ টাওয়ার নামের এই সুউচ্চ ভবনের উচ্চতাও ৫০০ ফুট। ৪৬ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন ভবনটিতে ২২টি লিফট, হাসপাতাল, হোটেল, সুপারশপ, কনফারেন্স হল, রেস্তোরাঁ, সুইমিংপুল, হেলিপ্যাড ও থ্রিডি মুভি থিয়েটার এসব অত্যাধুনিক সুবিধা থাকবে। 

জানতে চাইলে ট্রপিক্যাল হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রবিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উঁচু ভবনের নির্মাণকাজ ও বিপণন—দুটিই কঠিন। তবে উঁচু ভবন নির্মাণ করার মতো দক্ষ প্রকৌশলী আমাদের দেশে রয়েছে। আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভবনের নকশা করিয়ে সিঙ্গাপুরের একটি ফার্মকে দিয়ে যাচাই-বাছাই করিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা আছে। ফলে জমি যাতে নষ্ট না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার আশপাশের জমি দখল বন্ধ করতে ১০০ তলা বা তার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হবে। তবে সরকার অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ এমন সুউচ্চ ভবন করার সক্ষমতা দেশের কয়েকটি কোম্পানির আছে।’ 

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মায় বিলীন বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নেই

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ।

বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে পাশের একটি বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করেছে শিক্ষা কার্যালয়। এমন অবস্থায় দিশাহারা অভিভাবকেরা আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ও পাশের জেলার বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করছেন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কাচিকাটি ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকার চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুদিন পর বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ভবনটি নদীতে ভেঙে পড়ে। আস্তে আস্তে একতলা পাকা ওই ভবন নদীতে তলিয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায় বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি।

উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এক মাস ধরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিকল্প স্থানে বিদ্যালয় চালু করার জন্য জমি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু জমি না পেয়ে আর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে পারেননি।

এক মাস ধরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিকল্প স্থানে বিদ্যালয় চালু করার জন্য জমি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু জমি না পেয়ে আর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে পারেননি। তাই ওই বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে পাশের চরজিংকিং এলাকায় অবস্থিত ৪০ নম্বর ছয়ানি দুলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে সংযুক্ত করেছেন।

উত্তর মাথাভাঙা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এ বছর নদীভাঙনে ওই গ্রামের ৩০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে আরও ৪৫টি পরিবার। ওই পরিবারগুলোর সন্তানেরা উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করত। নদীভাঙনে বিদ্যালয় বিলীন ও অনেকের বসতবাড়ি বিলীন হওয়ায় তাঁরাও অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকায় চলে গেছেন। সেখানেই সন্তানদের স্কুল ও মাদ্রাসায় ভর্তি করছেন।

উত্তর মাথাভাঙা গ্রামের বাসিন্দা মকবুল দেওয়ানের ৩ একর ফসলি জমি ছিল। সেই জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর দুই ছেলে উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করত। নদীতে মকবুলের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়িরর দীঘির পাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

মকবুল দেওয়ান বলেন, পাশের জেলার একটি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছি। সেখানেই একটি স্কুলে দুই ছেলেকে ভর্তি করেছি। তবে কীভাবে সংসারের খরচ চালাব, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিয়া পড়ালেখায় ভালো ছিল। পদ্মায় বিলীন হওয়ার পর পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের একটি আবাসিক মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করেছেন। ছামিয়ার বাবা ইউসুফ সরকার বলেন, এলাকায় পড়ালেখার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েকে পাশের জেলার একটি আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, ২০২৩ সাল থেকে বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের কবলে পড়ে। তখন থেকেই শিক্ষার্থী কমতে থাকে। এ বছর শিক্ষার্থী ছিল ৫৩ জন। বিদ্যালয়ের সব জমি ও ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর বসতবাড়িও নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অনেকে পরিবারের সঙ্গে এলাকা ছেড়েছে। এই বিদ্যালয়ের জমি যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁরা জমি দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তার দূরত্ব ৫-৬ কিলোমিটার। একটি নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কিছুটা বিপাকে পড়েছি। 

সহজ যাতায়াত হবে, এমন বিকল্প স্থানে জমি খুঁজছি। এ বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ছিল, তাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।ছোবহান মুন্সি, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছোবহান মুন্সি বলেন, ‘বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে আমরা সেটা চালু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চরাঞ্চলে একটি জমির সন্ধান পেয়েছিলাম। সেখানে জনবসতি কম। আর এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেখানে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হবে। সহজ যাতায়াত হবে, এমন বিকল্প স্থানে জমি খুঁজছি। এ বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ছিল, তাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টির তিনজন শিক্ষককে পাশের একটি বিদ্যালয়ে মৌখিক আদেশে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মায় বিলীন বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নেই