গত শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মিত কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টাওয়ার মালয়েশিয়াকে নতুন করে পরিচিত করেছিল। দুটি টাওয়ারের সমন্বয়ে তৈরি ভবনটি তখন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। ২০০৪ সালে তাইওয়ানে জিনেই শহরে তাইপে ১০১ নির্মিত হলে পেট্রোনাস উঁচু ভবনের মুকুট হারায়। তারপর দুই দশক পার হয়েছে। এখন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে কুয়ালালামপুরের মারদেকা ১১৮।
এভাবেই বিভিন্ন দেশ পাল্লা দিয়ে একের পর এক আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ করছে। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায়ও এখন উঁচু ভবন তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের উচ্চতার পাঁচ ভাগের এক ভাগ উচ্চতার ভবন নির্মিত হয়েছে ঢাকায়। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যাক। ১৬৩ তলাবিশিষ্ট বুর্জ খলিফার উচ্চতা ৮২৮ মিটার বা ২ হাজার ৭১৭ ফুট। আর ঢাকায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উঁচু ভবন মতিঝিলের সিটি সেন্টারের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট। এক দশক আগে ৩৭ তলা এই বাণিজ্যিক ভবনের ব৵বহার শুরু হয়।
বর্তমানে ঢাকায় ৫০০ ফুট উচ্চতার বেশ কয়েকটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শান্তা হোল্ডিংসের পিনাকেল ও ঢাকা টাওয়ার, ট্রপিক্যাল হোমসের টিএ টাওয়ার, সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসের এসকেএস স্কাইরিচ ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমজিআই টাওয়ার। এর মধ্যে টিএ টাওয়ারটি মালিবাগে আর বাকিগুলো তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে। সবগুলো ভবনই বাণিজ্যিক। সুউচ্চ এই ভবনগুলোর মধ্যে পিনাকেলের নির্মাণকাজ চলতি বছর শেষ হবে।
উঁচু ভবনের ইতিহাসআকাশচুম্বী অট্টালিকার স্বর্ণযুগ শুরু প্রায় ১০০ বছর আগে। ১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত দ্য ক্রাইসলার ভবন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। চলতি শতাব্দীর প্রথম দুই যুগকে দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ বলা যায়। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০০ দালানের ৮৭টি এই সময়ের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। যদিও নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে হামলার পর আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণের কাজে কিছুটা বদল আসে। এই হামলার ঘটনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগুলো আরও বেশি নিরাপদ, মজবুত ও সবুজায়ন করে নির্মাণের ঝোঁক বাড়ে।
উচ্চ ভবনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কাউন্সিল অন টল বিল্ডিংস অ্যান্ড আরবান হ্যাবিটেটের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পাঁচটি ভবন হচ্ছে ইউএইর বুর্জ খলিফা (উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট), মালয়েশিয়ার মারদেকা ১১৮ (২ হাজার ২২৭ ফুট), চীনের সাংহাই টাওয়ার (২ হাজার ৭৩ ফুট), সৌদি আরবের মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার (১ হাজার ৯৭২ ফুট) এবং চীনের পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সেন্টার (১ হাজার ৯৬৫ ফুট)। উচ্চতার দিক দিয়ে ১০০তম ভবন হচ্ছে চীনের হিলটন ওয়েনচৌ সিটি সেন্টার, যার উচ্চতা ১ হাজার ১১২ ফুট।
বিশ্বের শততম উঁচু ভবনের প্রায় অর্ধেক উচ্চতার ভবন সিটি সেন্টার হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকাশচুম্বী ভবন। যদিও দেশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ শুরু স্বাধীনতার আগে। পূর্ব পাকিস্তানে সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে দিলকুশায় জীবন বিমা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটির উচ্চতা প্রায় ৮৫ মিটার। দেশ স্বাধীনের পর নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে ১০০ মিটারের কাছাকাছি উচ্চতায় বেশ কিছু ভবন নির্মিত হয়। গত শতাব্দীতে নির্মিত ৩১ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের উচ্চতা ১৩৭ মিটার বা ৪৫০ ফুট।
বাড়ছে আকাশচুম্বী ভবনএক দশক বা এক যুগ পর কেউ যদি গুলশান অ্যাভিনিউতে পা রাখেন, তাহলে সত্যি সত্যি অবাক হবেন। অ্যাভিনিউর সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বেশ কিছু বহুতল ভবন। গত দেড় দশকে মতিঝিলের পর গুলশান অ্যাভিনিউ বড় বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেই ঢেউ এসে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতেও লেগেছে। সেখানেও নির্মিত হয়েছে আকাশছোঁয়া ভবন। এখানেই নিজেদের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করেছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশীয় শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক শিল্পগোষ্ঠী।
জায়গা স্বল্পতায় গুলশান-বনানীর বাণিজ্যকেন্দ্রটি সম্প্রসারণের সুযোগ কমে এসেছে। তাই সুউচ্চ ভবন নির্মাণের ঢেউ এসে লেগেছে এখন তেজগাঁওয়ে। পঞ্চাশের দশকে ৫০০ একরের বেশি জায়গা নিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৯৯৮ সালে তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়ককে ‘বাণিজ্যিক সড়ক’ ঘোষণা করে সরকার। ১০ বছর আগে শিল্পাঞ্চলের চরিত্র বদলে শিল্প-বাণিজ্য-আবাসন—এই তিনের মিশেলে তেজগাঁও গড়ে তোলার অনুমোদন দেয় সরকার। তারপরই দ্রুতই বাড়তে থাকে এই এলাকায় বহুতল ভবন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ (চলতি দায়িত্বে) মো.
হাতিরঝিল থেকে তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে ঢুকতেই জিএমজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১২০ কাঠা জমির ওপর ৫০০ ফুট উচ্চতার ঢাকা টাওয়ার নির্মাণ করছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান শান্তা হোল্ডিংস। ছয়টি বেজমেন্ট ছাড়া ভবনটি হবে ৩৮ তলা। কিছুদূর হাঁটতেই চোখ পড়ল নির্মাণ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স ৩০ কাঠা জমিতে পাঁচটি বেজমেন্টসহ ৩০ তলা উঁচু ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। এই সড়কেই ৫০০ ফুট উচ্চতার ৪১ তলা এসকেএস স্কাই রিচ ভবনের নির্মাণকাজ করছে সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে শান্তা হোল্ডিংসের ৫০০ ফুট উচ্চতার পিনাকেল নামের সুউচ্চ ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪৫ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন এই ভবন ৫টি বেজমেন্ট ছাড়া ৪০ তলা। গাড়ি পার্কিং থাকবে ৩৬৭টি। এর পাশেই ২৫ তলা উচ্চতার ফোরাম নামের টুইন টাওয়ার নির্মাণ করেছে শান্তা হোল্ডিংস। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার এই ভবনে ইউনিলিভার, জারা, সিনজেনটা, ম্যারিকো, সুমিতিমোর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থানান্তর করেছে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে পিনাকেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে; তারপর ইন্টেরিয়রের কাজ শুরু হবে—এমনটাই জানালেন শান্তা হোল্ডিংসের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস)শিহাব আহমেদ। তিনি জানান, তেজগাঁও এলাকায় তাঁরা নতুন আরও ২টি ৫০০ ফুট উচ্চতার ভবন নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করবেন।
আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণ নিয়ে শিহাব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুতল ভবন নির্মাণকাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভূগর্ভস্থ মাটির গঠন, কয়েক শ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, ৬০ ফুট নিচে বেজমেন্ট কাজের নিরাপত্তা, ভবনের উপরিভাগে গ্লাসে বাতাসের চাপ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়। তবে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই আমরা সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই ফোরামে এসে বলেন, ভবনের ভেতরে গেলে মনে হয় বিদেশের কোনো ভবনে এসেছেন। সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাব্যবস্থাও বিশ্বের যেকোনো আধুনিক ভবনের মতো।’
তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কে আড়ংয়ের পরই রয়েছে একটি গলিপথ। সেখানে ২ হাজার ৭ বর্গমিটার আয়তনের জমির ওপর আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান ইনস্টার নির্মাণ করছে ৩২ তলা উঁচু ভবন। ট্রেড ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামের ভবনটির জমির মালিকানায় রয়েছে হাউস অব সানশাইন নিটওয়্যার লিমিটেড। তার পাশেই লালবাগ মেটাল ইন্ডাস্ট্রির জমিতে নির্মিত হচ্ছে ১৫ তলার আরেকটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এ ছাড়া ঢাকা ব্রেড ফ্যাক্টরির প্লটে এনএইচ টাওয়ার নামে ৩২ তলা ভবন হচ্ছে। নেক্সটিয়ন ডেভেলপমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ করছে।
তেজগাঁও-হাতিরঝিল সংযোগ সড়কে ৫০০ ফুট (১৫২ দশমিক ৪ মিটার) উচ্চতার এমজিআই টাওয়ার নির্মাণ করছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। গত নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ভবনটিতে থাকবে ৬টি বেজমেন্ট ছাড়া ৩৯ তলা। নির্মাণাধীন ভবনটির নির্মাণ অংশীদার হিসেবে রয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সপ্তম ব্যুরো (সিএসসিইসি৭ বি)। এই ভবনেই হবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চেইন হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত।
মালিবাগে দেশের প্রথম ৪৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন করছে ট্রপিক্যাল হোমস। তলার সংখ্যা বেশি হলেও টিএ টাওয়ার নামের এই সুউচ্চ ভবনের উচ্চতাও ৫০০ ফুট। ৪৬ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন ভবনটিতে ২২টি লিফট, হাসপাতাল, হোটেল, সুপারশপ, কনফারেন্স হল, রেস্তোরাঁ, সুইমিংপুল, হেলিপ্যাড ও থ্রিডি মুভি থিয়েটার এসব অত্যাধুনিক সুবিধা থাকবে।
জানতে চাইলে ট্রপিক্যাল হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রবিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উঁচু ভবনের নির্মাণকাজ ও বিপণন—দুটিই কঠিন। তবে উঁচু ভবন নির্মাণ করার মতো দক্ষ প্রকৌশলী আমাদের দেশে রয়েছে। আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভবনের নকশা করিয়ে সিঙ্গাপুরের একটি ফার্মকে দিয়ে যাচাই-বাছাই করিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা আছে। ফলে জমি যাতে নষ্ট না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার আশপাশের জমি দখল বন্ধ করতে ১০০ তলা বা তার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হবে। তবে সরকার অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ এমন সুউচ্চ ভবন করার সক্ষমতা দেশের কয়েকটি কোম্পানির আছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল: মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য
ফিলিস্তিনের গাজায় খুঁড়ে রাখা একেকটি সুড়ঙ্গ বিস্ফোরকে ঠাসা। এমনটাই বিশ্বাস করতেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁরা এসব সুড়ঙ্গে ঢোকার আগে গাজার সাধারণ মানুষকে সেখানে পাঠিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতেন, সেখানে বিস্ফোরক বা ঝুঁকিপূর্ণ কিছু আছে কি না। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসা কিছু গোয়েন্দা তথ্যে এমন রোমহর্ষক বিষয় উঠে এসেছে।
এসব গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আলোচনা করছিলেন, তাঁরা কীভাবে ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গাজার সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে পাঠাতেন। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুজন মার্কিন কর্মকর্তা এসব কথা জানিয়েছেন।
এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা বলেন, এই তথ্যটি হোয়াইট হাউসে পাঠানো হয়েছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে গোয়েন্দা তথ্যটি বিশ্লেষণও করা হয়েছিল।
সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে নিষিদ্ধ।
গাজায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে—বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন নিয়ে লম্বা সময় ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ওয়াশিংটন এই বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যা আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি।
২০২৪ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসা নতুন গোয়েন্দা তথ্য হোয়াইট হাউস ও গোয়েন্দা মহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের এই কৌশল কতটা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছিল এবং ইসরায়েলি সেনারা কি সামরিক নেতাদের নির্দেশেই এমন কাজ করছিলেন কি না।
এই দুই মার্কিন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সংবেদনশীল এসব তথ্য নিয়ে কথা বলেছেন। তবে গোয়েন্দা তথ্যে যেসব ফিলিস্তিনির কথা বলা হয়েছে, তাঁরা বন্দী ছিলেন নাকি বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ওই দুজন।
বাইডেন প্রশাসন এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। বাইডেন প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। একইভাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, তাদের আইনে বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার কিংবা তাদের সামরিক অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ফিলিস্তিনিদের সামরিক অভিযানে ব্যবহার করার অভিযোগ তদন্ত করছে।
এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি ইসরায়েলি সরকার।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে, হামাসও বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, হাসপাতাল ও অন্যান্য আবাসিক ভবনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা অবস্থান করত। তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালায়। ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয় ২৫১ জনকে। এর পর থেকে গাজায় নৃশংস ও নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
রয়টার্স গত সপ্তাহে জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন এমন গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করেছিল, যেখানে ইসরায়েলের আইনজীবীরা সতর্ক করেছিলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করতে ব্যবহার করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে।
ওই দুই সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের এই নতুন গোয়েন্দা তথ্য মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। তারা ভেবেছিলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সমর্থন জোগাতে পারে এই গোয়েন্দা তথ্য।
আর ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে দায়ী হবে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল।
বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার আইনজীবীরা এই তথ্য পর্যালোচনা করেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হন, প্রাপ্ত তথ্যগুলো থেকে প্রমাণ হয় না যে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে। এই অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।