৭২-এর সংবিধান বাতিল করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশনের ৩৬ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। সোমবার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায়।

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা ৭২-এর সংবিধান বাতিল করার হীন প্রচেষ্টাকে আমরা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ৭২-এর সংবিধান বাতিল করার অর্থ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের প্রতি বেইমানি করা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছরের অধিক সময়ের মধ্যে বিগত সরকারগুলো তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নিজেদের মতো করে ৭২-এর মূল সংবিধান বারবার কাটাছেঁড়া করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থী কাজ করেছে।

তারা আরও বলেন, সময়ের প্রয়োজনে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দেশের সংবিধান সংশোধন কিংবা যুগোপযোগী করা রাষ্ট্রের চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলি কোনো মতেই প্রশ্নবিদ্ধ ও পরিবর্তন করা যাবে না। ৭২-এর সংবিধান ছুড়ে ফেলা কিংবা কবর রচনা করা নিয়ে কোনো বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানাই। কোনো মতেই ৭২-এর সংবিধান বাতিল করা যাবে না, বরং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি ৭২-এর মূল সংবিধান হুবহু পুনঃপ্রবর্তন করা হোক।

বিবৃতিতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করেছি যে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করাসহ তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর এবং সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

বিবৃতিকারী খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন, এ ডব্লিউ চৌধুরী (বীর উত্তম ও বীর বিক্রম), ক্যাপ্টেন শাহাব উদ্দিন (বীর উত্তম), মেজর এটিএম হামিদুল হোসেন (বীর বিক্রম), লে.

কর্নেল আব্দুর রউফ (বীর বিক্রম), অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল হক (বীর বিক্রম), আবুল কালাম আজাদ (বীর বিক্রম), মেজর জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান (বীর প্রতীক), ক্যাপ্টেন কাজী আ. সাত্তার (বীর প্রতীক), ডিআইজি (অব.) কাজী জয়নাল আবেদীন (বীর প্রতীক), মো. মমিন উল্লাহ্ পাটোয়ারী (বীর প্রতীক), আনোয়ার হোসেন পাহাড়ি (বীর প্রতীক), মো. শাহাজাহান কবির (বীর প্রতীক), মিজানুর রহমান খান (বীর প্রতীক), মোজাম্মেল হক (বীর প্রতীক), মাহবুব এলাহী রঞ্জু (বীর প্রতীক), নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক), মহিউদ্দিন মানিক (বীর প্রতীক), বাহার উদ্দিন রেজা (বীর প্রতীক), প্র. ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন (বীর প্রতীক), দেলোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক), রতন আলী শরীফ (বীর প্রতীক), সৈয়দ রেজওয়ান আলী (বীর প্রতীক), রফিকুল ইসলাম (বীর প্রতীক), গোলাম আজাদ (বীর প্রতীক), মো. ইদ্রিস আলী (বীর প্রতীক), আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক), আনিসুর রহমান (বীর প্রতীক), মেজর ওয়াকার হাসান (বীর প্রতীক), সরদার মহসীন আলী (বীর প্রতীক), আ. হাকিম (বীর প্রতীক), বজলুর মাহমুদ (বীর প্রতীক), নুরুল হক (বীর প্রতীক), নুরুল ইসলাম (বীর প্রতীক), হাবিবুর রহমান (বীর প্রতীক), ফজলুল হক (বীর প্রতীক), আবদুল্লাহ (বীর প্রতীক) ও আব্দুল গফুর (বীর প্রতীক)।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ