চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পৌরসভা বিএনপি ও যুবদল নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে মো. মুন্না (২২) নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১১টায় মিরসরাই পৌর সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মিরসরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত মুন্না মিরসরাই পৌরসভার উত্তর গোভানিয়া এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।

এ ঘটনায় সাত যুবদল কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো.

আরাফাত (২৩), আসিফ (২১), হাসান (২১), সজীব (২০), রাহাত (২৪), রাশেদ (২২) ও হৃদয় (২১)।
সংঘর্ষে আহত মো. সজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন ভাইয়ের কয়েকজন অনুসারী সোমবার রাত ১১টার দিকে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলার গেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার টোল আদায়সহ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছিলাম। এ সময় পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের ২০-২৫ জন অনুসারী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর কামরুল হাসানের অনুসারীরা আমাদের ওপর আবারও চড়াও হয়। তারা আমাদের ধাওয়া দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে নিয়ে আসে। এ সময় তারা মুন্নাকে সামনে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত মুন্নাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা সদরের সেবা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।’

যুবদল কর্মী মো. মুন্নার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেবা আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার রাত ১১টার দিকে পৌর সদরে মারামারির ঘটনায় আহত আট যুবককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

তাঁদের মধ্যে মো. মুন্নার অবস্থা ছিল গুরুতর। তাঁর ডান পায়ের ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। সেখান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি। সঙ্গে থাকা লোকজন তাঁকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন ও পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক যুবক নিহত হয়েছে। ওই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি চলছে। তার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ