মিরসরাইয়ে বিএনপি ও যুবদল নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ১
Published: 13th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পৌরসভা বিএনপি ও যুবদল নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে মো. মুন্না (২২) নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১১টায় মিরসরাই পৌর সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মিরসরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত মুন্না মিরসরাই পৌরসভার উত্তর গোভানিয়া এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।
এ ঘটনায় সাত যুবদল কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো.
সংঘর্ষে আহত মো. সজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন ভাইয়ের কয়েকজন অনুসারী সোমবার রাত ১১টার দিকে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলার গেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার টোল আদায়সহ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছিলাম। এ সময় পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের ২০-২৫ জন অনুসারী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর কামরুল হাসানের অনুসারীরা আমাদের ওপর আবারও চড়াও হয়। তারা আমাদের ধাওয়া দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে নিয়ে আসে। এ সময় তারা মুন্নাকে সামনে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত মুন্নাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা সদরের সেবা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।’
যুবদল কর্মী মো. মুন্নার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেবা আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার রাত ১১টার দিকে পৌর সদরে মারামারির ঘটনায় আহত আট যুবককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
তাঁদের মধ্যে মো. মুন্নার অবস্থা ছিল গুরুতর। তাঁর ডান পায়ের ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। সেখান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি। সঙ্গে থাকা লোকজন তাঁকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদ হোসেন ও পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক যুবক নিহত হয়েছে। ওই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি চলছে। তার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।