পাকিস্তানে আনুমানিক ৮০০ বিলিয়ন রুপি মূল্যের সোনার খনি আবিষ্কারের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। তবে পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার বা পররাষ্ট্র দপ্তর এখনো পর্যন্ত সোনার খনি আবিষ্কারের খবর নিশ্চিত করেনি।

বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল পাঞ্জাব প্রদেশের সাবেক খনিজ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী ইব্রাহিম হাসান মুরাদের ‘এক্স’ পোস্টের ভিত্তিতে খনি আবিষ্কারের খবরটি প্রকাশ করেছে। খবর গালফ নিউজের।

সাবেক মন্ত্রী ইব্রাহিম হাসান মুরাদ তার পোস্টে দাবি করেছেন, “পাঞ্জাবের অ্যাটকে বিশাল একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। সিন্ধু নদের পাঞ্জাব অংশের অববাহিকা এলাকা ৩২ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই খনিতে অন্তত ২৮ লাখ ভরি (প্রায় ৩৩ টন) স্বর্ণ মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (জিএসপি) স্বর্ণের খনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।”

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা বিনিময় করল ভারত-পাকিস্তান

পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, “এই আবিষ্কার পাঞ্জাবের প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনাকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। এটি পাকিস্তানের খনিজসম্পদ ব্যবহারের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করবে।” 

এদিকে বর্তমান প্রাদেশিক খনিজ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী সরদার শের আলি গোরচানিও স্বর্ণের খনির সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, খনিটিতে ২৮ লাখ ভরি (প্রায় ৩৩ টন) স্বর্ণ মজুত রয়েছে।

উর্দু সংবাদমাধ্যম জং গোরচানির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রাদেশিক সরকার সোনার মজুদের গবেষণার জন্য পাকিস্তানের ভূতাত্ত্বিক জরিপের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ করছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, গত বছর থেকে গবেষণাটি চলছে।

পাঞ্জাবের খনিজসম্পদ মন্ত্রী গোরচানি আরো বলেছেন, খনির স্বর্ণের মজুদের মূল্য আরো মূল্যায়নের জন্য সরকার নেসপাকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আনার পরিকল্পনা করছে। মন্ত্রী বিশ্বব্যাপী মূল্যের উপর ভিত্তি করে খনিতে মজুদ সোনার বাজার মূল্য ৬০০-৮০০ বিলিয়ন রুপি অনুমান করেছেন।

নিরাপত্তা জোরদার

মূল্যবান সম্পদ রক্ষার জন্য, প্রাদেশিক সরকার খনির স্থানগুলো থেকে চুরি রোধ করার জন্য এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পাঞ্জাবের খনিজসম্পদ মন্ত্রী গোরচানি জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে সোনার মজুদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত বিশাল সোনার মজুদের আবিষ্কার পাকিস্তানের খনি খাতের জন্য একটি রূপান্তরমূলক মুহূর্ত চিহ্নিত করে, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধা এবং নতুন কর্মসংস্থান ও শিল্প সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দেয়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ