এআই চ্যাটবট দিয়ে লেখা বানোয়াট গবেষণাপত্র অনলাইনে, তৈরি হচ্ছে উদ্বেগ
Published: 14th, January 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিভিন্ন চ্যাটবটের মাধ্যমে ভুয়া বা মিথ্যা তথ্যনির্ভর বিভিন্ন সংবাদ, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপত্রও অনলাইনে প্রকাশ করছেন অনেকে। সম্প্রতি সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব বোরসের একদল বিজ্ঞানী এআই দিয়ে লেখা বানোয়াট গবেষণাপত্রের সন্ধান পেতে গুগল স্কলার সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। সেখানে এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে লেখা শতাধিক সন্দেহজনক গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ শনাক্ত করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বর্তমানে অনলাইনে এআই চ্যাটবট দিয়ে লেখা অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ দেখা যাচ্ছে, যেগুলোর বেশির ভাগই বানোয়াট। ফলে অনলাইনে অনেক ভুল ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই এআই চ্যাটবট দিয়ে লেখা গবেষণাপত্র নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের গবেষণার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বলে বেশি জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে। আবার কোনো বিষয়ে কৌশলগত প্রভাব তৈরির জন্য এসব গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। ফলে গবেষণাপত্রগুলোর তথ্য ব্যবহারে ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুনচ্যাটবট ব্যবহারের সময় প্রতারণা এড়াতে মানতে হবে এই ৩ কৌশল০২ জুলাই ২০২৪এ বিষয়ে বিজ্ঞানী বিজোরন একস্ট্রোম বলেন, এ ধরনের গবেষণাপত্র বিভিন্ন গবেষণার পক্ষে বা বিপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের গবেষণাকে অ্যাভিডেন্স হ্যাকিং বলা হয়। এর বাস্তব পরিণতি কঠিন হতে পারে। অনেক গবেষণার ভুল ফলাফল সমাজে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য কখনোই জানানো উচিত নয়৩১ ডিসেম্বর ২০২৪এআই চ্যাটবট দিয়ে লেখা বানোয়াট গবেষণাপত্র এরই মধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, অনলাইন আর্কাইভ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সমালোচনার মুখে অনেক গবেষণাপত্র সরিয়ে ফেলা হলেও ঝুঁকি কমছে না। অনলাইননির্ভর বিভিন্ন কাজ বা গবেষণার জন্য এসব ভুয়া গবেষণাপত্রের তথ্য সহায়ক না হওয়ায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।