টেকনাফে যুবকের গলায় রশি পেছানো মরদেহ উদ্ধার
Published: 15th, January 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে পেয়ারা গাছে গলায় রশি পেছানো নুরুল ইসলাম রাশেদ (২১) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পশ্চিম নয়াপাড়া থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত নুরুল ইসলাম রাশেদ ওই এলাকার রশিদ আহমদের ছেলে।
নিহতের ভাগিনা কায়সার মাহমুদ বলেন, “সকালে বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে রাশেদের গলায় রশি পেছানো মরদেহ দেখতে পাই। তবে তার পা মাটিতে লাগানো ছিল। পরে পুলিশকে জানানো হয়।”
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) শোভন কুমার শাহা।
তিনি বলেন, “ঘটনাটি রাতে ঘটতে পারে। সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/তারেকুর/ইমন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দামেস্কের কিংবদন্তি আলেম ইমাম ইবনে আসাকির
মধ্যযুগে ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে যাঁদের মনন ও ভাবনা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তাঁদের অন্যতম হলেন কিংবদন্তি ইমাম ইবনে আসাকির। তাঁর মূল নাম আলী বিন হাসান, উপনাম আবুল হাসান। তবে ‘ইবনে আসাকির’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।
এ নামে কেন তিনি বিখ্যাত, এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও ধারণা—এটি পিতৃবংশের কারও নাম ছিল, যার সূত্র ধরে তিনি এই উপাধি অর্জন করেন। (ইমাম জাহাবি, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১৫/২৪৭, দারুল হাদিস, কায়রো, ২০০৬)
তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.), তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরাইবনে আসাকির হিজরি ৪৯৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বর্তমান সিরিয়ার দামেস্ক নগরী। সেসময় দামেস্ক ছিল জ্ঞানচর্চা, তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। তাই তিনি সেখান থেকেই জ্ঞানার্জনের পথে যাত্রা শুরু করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
পারিবারিক দীক্ষাইবনে আসাকির (রহ.)-এর পরিবার ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; যে কারণে শৈশবেই তিনি ধর্মীয় নীতিবোধ ও আত্মিক উন্নয়নের দীক্ষা লাভ করেন। তা ছাড়া পিতা ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান আলেম ও ফকিহ। তাই অল্প বয়সেই তিনি ফিকহ ও অন্যান্য শাস্ত্রে মৌলিক ধারণা লাভ করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আরও পড়ুনশিক্ষা নিয়ে ইবনে খালদুনের ভাবনা০৪ অক্টোবর ২০২৫ইবনে আসাকিরের হাদিস ও ইতিহাসচর্চা অসংখ্য আলেমকে মুগ্ধ করে। ফলে অনেকেই তাঁকে নির্ভরতার প্রতীক ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করেন।আল্লাহভীতির অনন্য প্রতীকতিনি ছিলেন আল্লাহভীতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটান আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত ও সত্যনিষ্ঠার পথে। যশ-খ্যাতি কিংবা পার্থিব সম্পদ অর্জনে তিনি কখনো আগ্রহ দেখাননি। গবেষণা ও জ্ঞানের জগতে তিনি যেমন অতুলনীয় ছিলেন, তেমনই তাকওয়া, আত্মনিবেদন ও সত্যনিষ্ঠায়ও ছিলেন অনন্য। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/২৪, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.) তাঁর ব্যাপারে লেখেন, ‘তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, (ইবাদত, জ্ঞানচর্চা বা লেখালেখিতে) সর্বদাই মগ্ন থাকতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।’ (তাজউদ্দিন সুবকি, তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৪/১৩৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৯)
শিক্ষায় অবদানশিক্ষাজীবনের সূচনা থেকেই ইবনে আসাকির (রহ.) ছিলেন অনুসন্ধিৎসু, জ্ঞানপিপাসু ও মননশীল। জ্ঞান ও গবেষণা ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। জীবনের সিংহভাগ সময়ই তিনি কাটান জ্ঞান অন্বেষণ, ভ্রমণ, গ্রন্থ সংকলন ও শাইখদের সান্নিধ্যে গমন করে।
তিনি গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য পাড়ি দেন হাজার মাইল পথ; পৌঁছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক নগরে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
বাগদাদ (ইরাক): সে যুগের প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র। ইবনে আসাকির (রহ.) সেখানে পাঁচ বছর অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি বিখ্যাত ‘মাদরাসায়ে নিজামিয়্যা’ থেকে হাদিস, ইতিহাস, নাহু, ফিকহসহ নানা শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।
নিশাপুর (ইরান): সে সময়ে হাদিসশাস্ত্র ও তত্ত্বচিন্তার সমৃদ্ধ কেন্দ্র।
ইস্পাহান (ইরান): ইমাম আবু নুআইম ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে মানদাহসহ অনেক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসের শহর।
হেজাজ: জ্ঞানার্জনের এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, যেখান থেকেই গড়ে উঠেছেন অসংখ্য আলেম, ফকিহ ও মুহাদ্দিস। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১৬-১৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
দামেস্কে ইবনে আসাকিরের সমাধি