রাজশাহীতে যুবদল নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ বাবার মৃত্যু
Published: 15th, January 2025 GMT
রাজশাহীর পাবা উপজেলায় যুবদলের সাবেক এক নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই নেতার বাবা গুলিবিদ্ধ হন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. আলাউদ্দিন (৬০)। তার বাড়ি উপজেলার ভুগরইল গ্রামে। নিহতের ছেলে সালাহউদ্দিন মিন্টু নওহাটা পৌর যুবদলের সাবেক সদস্য।
শাহমখদুম থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, “হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে আলাউদ্দিন মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় হত্যা মামলা করা হবে।” কেউ আটক হয়েছেন কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আমরা তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
আরো পড়ুন:
বরিশালে যুবলীগ নেতার পায়ের রগ কাটল দুর্বৃত্তরা
চারঘাটে আ.
নিহতের পরিবার জানায়, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে সালাহউদ্দিন মিন্টুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে কয়কজন ব্যক্তি। দরজা ভেদ করে একটি গুলি মিন্টুর বাবা আলাউদ্দিনের কোমরে লেগেছিল। রাতেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে তিনি অপারেশন থিয়েটারে মারা যান।
নিহতের ছেলে সালাহউদ্দিন মিন্টু জানান, তাদের এলাকায় দুই পক্ষের টাকা-পয়সা নিয়ে একটা বিরোধ ছিল। এর মীমাংসার জন্য রাতে উভয় পক্ষ রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানায় বসেছিল। একপক্ষের একটি ছেলে তার ‘ছোট ভাই’। এ জন্য তিনিও গিয়েছিলেন। থানায় মীমাংসাও হয়ে যায়। এরপর তিনি বাড়ি ফেরেন। এর আধাঘণ্টা পরই তার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়।
এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে ভুগরইল শিহাবের মোড় এলাকার কয়েকজনের নাম জানিয়ে মিন্টু বলেন, “তারা ১০-১২ জন এসেছিল। সবাই টোকাই, মাদকাসক্ত। তারা গুলিবর্ষণ করেছে।”
মিন্টু যখন কথা বলছিলেন, তখন তার বাবার অস্ত্রোপচার চলছিল। তিনি জীবিত ছিলেন। চিকিৎসার ব্যস্ততা শেষে মিন্টু মামলা করবেন জানিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর তার চাচাতো ভাই মো. রনি জানান, আহত আলাউদ্দিন মারা গেছেন।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, “দুটি পক্ষ থানায় একটি আপস-মীমাংসার জন্য বসেছিল। তারপর নাকি একপক্ষ গিয়ে মিন্টুর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করেছে। ঘটনাস্থলটা পড়েছে শাহমখদুম থানা এলাকায়। শাহমখদুম থানা-পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।