শক্তিশালী বাতাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। এর মধ্যেই আগুন আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠার পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সান্তা অ্যানা বাতাস ক্রমেই শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস হয়ে উঠতে থাকায় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এবং লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বাইরের কয়েকটি নতুন স্থানেও আগুনের গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছেন ৬০ লাখের বেশি মানুষ।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বাইরে আনাহেইম, রিভারসাইড, সান বার্নার্ডিনো এবং অক্সনার্ডসহ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার আরও কয়েকটি কাউন্টিতে বুধবার থেকে মারাত্মক দাবানলের ঝুঁকিতে রয়েছেন এই লাখ লাখ মানুষ। কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা দাবানলে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। প্যালিসেডসের দাবানলে ৯ জন এবং ইটনে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:

লস অ্যাঞ্জেলেসে ঝড়ো বাতাসের পূর্বাভাস, আরো ভয়ংকর হতে পারে দাবানল

লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল আরো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, মৃত্যু বেড়ে ২৪

বুধবার সকালে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবার ‘বিশেষভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতি’ নির্দেশক লাল পতাকা সতর্কবার্তা জারি রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের কয়েকটি এলাকা এবং ভেনচুরাতে।

এনবিসি জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ভেনচুরা কাউন্টির কিছু অংশে আজ থেকে আগামীকাল পর্যন্ত সান্তা আনা বাতাসের নতুন সময়কালের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ‘অত্যন্ত গুরুতর অগ্নিকাণ্ডের পরিস্থিতির’ জন্য প্রস্তুত।

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে অতিরিক্ত অগ্নিনির্বাপকদের নিয়ে এই অঞ্চলটি নতুন হুমকির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।

শুক্রবার অবস্থার উন্নতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহের রোববার থেকে স্যান্টা আনা বাতাসের প্রভাবে আবারও দাবানল ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়া তিনটি বড় দাবানলের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্যালিসেডস দাবানল এখন পর্যন্ত মাত্র ২১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্যালিসেডসের ২৩ হাজার ৭১৩ একর জুড়ে এখনো জ্বলছে আগুন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানল- ইটন দাবানল মাত্র ৪৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

দাবানলের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও হাজার হাজার মানুষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলমান আছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লস অ য ঞ জ ল স র

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ