সংস্কার ও বাজেটে শ্বেতপত্রের সুপারিশ আমলে নিতে হবে
Published: 18th, January 2025 GMT
অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় ফেরানো এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্কারই শুরু করেনি অর্ন্তবর্তী সরকার। অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম দ্রুতই শুরু করা দরকার। চলমান সংস্কার পদক্ষেপে অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে করা শ্বেতপত্রের সুপারিশ আমলে নিতে হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে এসব সুপারিশকে গুরুত্ব দিতে হবে।
'শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট' শিরোনামের এক সিম্পোজিয়ামে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আয়োজন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজনে সহায়তা দেয়। দিনব্যাপী পাঁচটি কর্মঅধিবেশনে রাজনৈতিক নেতা, সরকার-বেসরকারি খাতে প্রতিনিধি ও উন্নয়নসহ সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আলোচনায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড.
ভ্যাট প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, কোনো দেশে সরকার যদি কার্যকরভাবে কর আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে । অথচ প্রত্যক্ষ কর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত না করলে বাংলাদেশে সংস্কার পক্ষের মনোভাবের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। এর মানে হলো, যারা এখন সংস্কারের পক্ষে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে একপর্যায়ে তারা ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কার থেকে সরে আসতে পারেন ।
তিনি বলেন, একটি সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসির কাতার থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার মতো বিষয়গুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে এবং পিছিয়ে পড়াদের মধ্যমেয়াদি সহায়তা দেবে— সে বিষয়ে স্পষ্টতা প্রয়োজন।
প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। টিসিবির পণ্য বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় ভোজ্যতেল কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়। মূল্য সমন্বয় করে ১০০ টাকার বদলে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় নিয়ে ১ কোটির জায়গায় দেড় কোটি বা ২ কোটি মানুষ পর্যন্ত এ সেবা প্রসারিত করা যায়।
আলোচনায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বহির্বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমলেও দেশে কমেনি।
মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেডকে দেরিতে ডাকা হয়েছে। তারা দেরিতে এসে পানির বদলে তেল ঢেলেছে। রিজার্ভ প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে কমছিল। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের ঘন ঘন মেজাজ বদল হয়েছ। ব্যাংকিং খাতে অনিয়মে রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীকে রক্ষা করা হয়েছ। বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে ক্ষয়গুলো শনাক্ত করা হয়নি। ঋণের সুফল জাতি পায়নি। তা সুবিধাপ্রাপ্তদের পকেটে গেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বিনিয়োগ পরিকল্পনায় উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামষ্টিক অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি বিবেচনা করে থাকে। এসব বিষয়ে যা হয়েছে এডহক ভিত্তিতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে বিনিয়োগ আকর্ষণে তেমন কোনো কৌশল নেই।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইর সভাপতি জাভেদ আক্তার বলেন, এ দেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস মারাত্মক রকম কম। শুল্ক বাড়লে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দুর্নীতি হ্রাস এবং ব্যবসা ব্যয় কমাতে একটা রোডম্যাপ দাবি করেন তিনি।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘অর্থনৈতিক অস্বস্তিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন তারা। অর্থনীতি আসলেই চাপে রয়েছে। মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুতের দর বৃদ্ধি, দক্ষ শ্রমিকের অভাবের সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদ ২৫ শতাংশ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। রপ্তানিতে প্রণোদনা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
বিডার নির্বাহী সভাপতি চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগ সেবাকে প্রকৃতই একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে আনতে চান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ভারতের সঙ্গে কী কী চুক্তি ছিল তা প্রকাশের পাশাপাশি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আগামী বাজেটে বেসরকারি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ব তপত র ব যবস থ ক ষ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাদ দেওয়াসহ আইনঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাদ দেওয়াসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বহুল প্রত্যাশিত সংস্কার-প্রক্রিয়াকে কীভাবে আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা, এমনকি অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে জিম্মি করা হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসেবে অধ্যাদেশ প্রণয়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ববাদি চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য। যা সংস্কারবিরোধী আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ুন:
প্রতিটি আইন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি
জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে বিশেষজ্ঞ সদস্য চায় টিআইবি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করার ফলে সরকারি প্রভাবের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে টিআইবি।
সংস্থাটির টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশের পর টিআইবিসহ সব অংশীজন এতে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও আশান্বিত হয়েছিল যে, আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা কাটিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জনপ্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ঠিক একমাসের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর যে বাছাই কমিটি এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মূলভিত্তি হতে পারতো, সেই কমিটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন বস্তুত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মানবাধিকার কমিশনসহ বাংলাদেশের অন্য সব কমিশনের অকার্যকরতার পেছনে যেভাবে সরকারি প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকা রেখেছে, সেই একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তমাত্র, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”
বাছাই কমিটির ওপর এ আমলাতান্ত্রিক জবরদখল ও সরকারের তা মেনে নেওয়া চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে প্রশংসনীয় বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে তার এবং সার্বিকভাবে এ আইনের ভিত্তিতে গঠিতব্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকরতার সব সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করার জন্য শুধুমাত্র বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট।”
“তাছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ‘অবহিত করা যাইবে’ প্রতিস্থাপন করার মতো আরো কিছু বিধান সংযোজন করার ফলে অধ্যাদেশটির মাধ্যমে প্রত্যাশিত সব ইতিবাচক সম্ভাবনা পদদলিত করা হয়েছে,” বলে মন্তব্য করেন ড. জামান।
অনতিবিলম্বে আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতমূলক সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের বিব্রতকর অবস্থান থেকে সরে এসে অধ্যাদেশটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিধান, বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন্য ৬২ নম্বর অধ্যাদেশ, যা ৯ নভেম্বর ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তার অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত বাছাই কমিটিতে আমলাতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলো না, যা মানবাধিকার কমিশনের অকার্যকরতার দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরকারসহ সব অংশীজনের স্বীকৃতির পরিচায়ক। অথচ, পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বরের গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশ ৭৪-এ বাছাই কমিটিতে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি