অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় ফেরানো এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্কারই শুরু করেনি অর্ন্তবর্তী সরকার। অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম দ্রুতই শুরু করা দরকার। চলমান সংস্কার পদক্ষেপে অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে করা শ্বেতপত্রের সুপারিশ আমলে নিতে হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে এসব সুপারিশকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

'শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট' শিরোনামের এক সিম্পোজিয়ামে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আয়োজন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজনে সহায়তা দেয়। দিনব্যাপী পাঁচটি কর্মঅধিবেশনে রাজনৈতিক নেতা, সরকার-বেসরকারি খাতে প্রতিনিধি ও উন্নয়নসহ সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

আলোচনায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো  এবং  অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড.

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানোর জন্য  সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'আমরা বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে, কীভাবে অবিবেচনাপ্রসূতভাবে মূল্য সংযোজন কর বাড়ানো হলো। প্রত্যক্ষ কর বাদ দিয়ে প্রথমে পরোক্ষ করের দিকে ঝুঁকেছে সরকার। বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’

ভ্যাট প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, কোনো দেশে সরকার যদি কার্যকরভাবে কর আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে । অথচ প্রত্যক্ষ কর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত না করলে বাংলাদেশে সংস্কার পক্ষের মনোভাবের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। এর মানে হলো, যারা এখন সংস্কারের পক্ষে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে একপর্যায়ে তারা ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কার থেকে সরে আসতে পারেন । 

তিনি বলেন, একটি সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসির কাতার থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার মতো বিষয়গুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে এবং পিছিয়ে পড়াদের মধ্যমেয়াদি সহায়তা দেবে— সে বিষয়ে স্পষ্টতা প্রয়োজন।

প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। টিসিবির পণ্য বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন,  দীর্ঘমেয়াদে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় ভোজ্যতেল কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়।  মূল্য সমন্বয় করে ১০০ টাকার বদলে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় নিয়ে ১ কোটির জায়গায় দেড় কোটি বা ২ কোটি মানুষ পর্যন্ত এ সেবা প্রসারিত করা যায়।  

আলোচনায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বহির্বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমলেও দেশে কমেনি।  

মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তুলনা  করে তিনি বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেডকে দেরিতে ডাকা হয়েছে। তারা দেরিতে এসে পানির বদলে তেল ঢেলেছে। রিজার্ভ প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে কমছিল। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের ঘন ঘন মেজাজ বদল হয়েছ। ব্যাংকিং খাতে অনিয়মে রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীকে রক্ষা করা হয়েছ।  বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে ক্ষয়গুলো শনাক্ত করা হয়নি। ঋণের সুফল জাতি পায়নি। তা সুবিধাপ্রাপ্তদের পকেটে গেছে। 

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বিনিয়োগ পরিকল্পনায় উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামষ্টিক অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি বিবেচনা করে থাকে। এসব বিষয়ে যা হয়েছে এডহক ভিত্তিতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে বিনিয়োগ আকর্ষণে তেমন  কোনো কৌশল নেই।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইর সভাপতি জাভেদ আক্তার বলেন, এ দেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস মারাত্মক রকম কম। শুল্ক বাড়লে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দুর্নীতি হ্রাস এবং ব্যবসা ব্যয় কমাতে একটা রোডম্যাপ দাবি করেন তিনি।

এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘অর্থনৈতিক অস্বস্তিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন তারা। অর্থনীতি আসলেই চাপে রয়েছে। মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুতের দর বৃদ্ধি, দক্ষ শ্রমিকের অভাবের সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদ ২৫ শতাংশ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। রপ্তানিতে প্রণোদনা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।

বিডার নির্বাহী সভাপতি চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগ সেবাকে প্রকৃতই একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে আনতে চান তারা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ভারতের সঙ্গে কী কী চুক্তি ছিল তা প্রকাশের পাশাপাশি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আগামী বাজেটে বেসরকারি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ব তপত র ব যবস থ ক ষ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের 

‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করাসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ৩৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

আরো পড়ুন:

‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিলে কেউ যেন খুনের কনটেক্সট না ভুলে যান: প্রেস সচিব

বিএফইউজের দাবিগুলো হলো:
০১. ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করতে হবে।

০২. অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে।

০৩. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে না। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হয়নি। অথচ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। তাই, বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

০৪. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একইভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে। আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তা-ই হচ্ছে।

০৫. সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু আছে। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। এতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে।

০৬. সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

০৭. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।

০৮. আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হন। এসব মামলা ঘাড়ে নিয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। থানা বা কোর্ট নয়, সংবাদসংক্রান্ত সব মামলা শ্রম আদালতে করতে হবে।

০৯. সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, মাল্টিমিডিয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত জাতীয় সংবাদমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে। এই সমন্বিত নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য ভিন্ন নীতিমালা থাকবে। অনেক নীতিমালা প্রণয়ন না করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে সেটি প্রয়োগ করা ও মেনে চলা সহজ হবে।

১০. সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদ সংস্থা ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজ বোর্ড করতে হবে। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। তাই, টেলিভিশন সাংবাদিকদের চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এটা অত্যন্ত অমানবিক।

১১. রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না। বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কারণে-অকারণে। মামলা-গ্রেপ্তারেও পিষ্ট হচ্ছে।

১২. কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করতে হবে।

১৩. চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

১৪. কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না।

১৫. মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দিতে হবে। জেলা পর্যায়ে কিছু পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বেতন দিলেও অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ উপজেলা প্রতিনিধিদের এক টাকাও বেতন দেয় না। উপন্তু, তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সংবাদকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে।

১৬. তিন বছর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে।

১৭. সরকার ও গণমাধ্যম কর্তৃক দ্রুত সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১৮. বছরের শুরুতে আগের বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর পর পর মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করে বিবেচনা করতে হবে।

১৯. পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বীমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিৎসা বীমার ব্যবস্থা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদকর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে তাদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম রাখতে হবে।

২০. সাংবাদিকদের তৈরি প্রতিবেদনের কারণে যেসব ফৌজদারি মামলা আছে, তা প্রত্যাহার ও বাতিল করতে হবে।

২১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

২২. কোনো গণমাধ্যমকে গোয়েন্দা সংস্থা কোনো ধরনের নির্দেশনা দিতে পারবে না।

২৩. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা কোনো সংবাদমাধ্যম/গণমাধ্যম পরিচালিত হতে পারবে না।

২৪. সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের রিপোর্ট প্রতি তিন মাস অন্তর সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিতে হবে। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সত্যিকার অর্থে ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করেছে কি না, সেটা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

২৫. সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। সাংবাদিকদের শুরুতে বেতন ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা হতে হবে এবং প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।

২৬. রেডিও, টেলিভিশনের লাইসেন্স প্রদানে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। দলীয় বিবেচনায় নয়, যোগ্যতায় হতে হবে লাইসেন্সপ্রাপ্তির মূল ভিত্তি।

২৭. কোনো সাংবাদিক যত দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার মতো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তার বিরুদ্ধে যদি আর্থিক দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো প্রমাণিত অভিযোগ না থাকে, তা হলে তাকে অবসর দেওয়া যাবে না।

২৮. সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন পরশোধ করতে হবে।

২৯. দেশে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো সেকেলে রয়েছে গেছে। কেউ যদি যথাযথভাবে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াও অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। নিবন্ধন পেতে হয়রানি, ঘুষ দাবিসহ সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে সংবাদমাধ্যমের অবমূল্যায়ন ও হয়রানি বন্ধ করে যেকোনো এক জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন-সংক্রান্ত বিশেষ সেল রাখা যেতে পারে। ভেরিফিকেশন থেকে শুরু করে নিবন্ধনসহ সব কিছু বিশেষ সেলের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা করবেন।

৩০. চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন হার নির্ধারণ করে থাকে। এখানে অনেক শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। যেসব পত্রিকা দৈনিক ৫০০ কপিও ছাপা হয় না, সেসব পত্রিকা লাখ লাখ কপি ছাপানোর ভুয়া তথ্য দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বেশি বিজ্ঞাপন রেট নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে রেট আপ-ডাউন বন্ধ করতে হবে।

৩১. সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপন রেট বাড়াতে হবে। ৯০০ টাকা রেট দিয়ে এখনকার সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এখনকার মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় রেট আরো অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। একই কথা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের জন্যও প্রযোজ্য। সব মিডিয়ার জন্যও বাস্তবসম্মত বিজ্ঞাপন নীতিমালা করতে হবে;

৩২. রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। ঠিক তেমনই করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন টিভি-রেডিও ও সংবাদপত্রকে মালিকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩৩. কথায় কথায় সংবাদমাধ্যম ডিক্লারেশন বাতিল বন্ধ করতে হবে। সরকার কোনো সংবাদমাধ্যম বন্ধ করলে সরকারকে অন্তত ৬ মাস ওই মিডিয়ার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বহন করতে হবে।

৩৪. নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিকের নির্বাচনী তথ্য জানার অধিকারকে সংকুচিত করবে। বিশেষ করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ চলাচল, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আমরা অবিলম্বে এই নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।

৩৫. নিউজ প্রিন্টের আমদানি শুল্ক ২ শতাংশ (বর্তমানে প্রযোজ্য ৫ শতাংশ), ভ্যাট ১৫ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর (এটি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ন্যূনতম ১ শতাংশ করতে হবে। সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপন করতে হবে।

৩৬. সামগ্রিক মিডিয়াকে শিল্প ঘোষণা করে এই শিল্পের বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, সরকারের পছন্দমতো সংবাদ না করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হুমকি দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে। সংবাদের কারণে কোনো গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন বন্ধ করাকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩৭. সাংবাদিকতাকে বাধাহীন করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩৮. রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

দাবিগুলো উপস্থাপন করে সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “আমরা এমন একটি পরিবর্তিত সংবাদমাধ্যম চাই, যেখানে একজন সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন। যেখানে অনুসন্ধানই হবে সত্যের সমাহার আর দায়িত্ববোধ হবে সাংবাদিকতার মূলশক্তি।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, রফিক মুহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, সাঈদ খান, আবু বকর, অপর্ণা রায়, মোদাব্বের হোসেন, খন্দকার আলমগীর, ডিএম অমর, আল আমিন প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের