সালথা উপজেলা যুবদল নেতা হাসান আশরাফের বাড়িতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন মাতুব্বরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। রবিবার রাত ১১ টায় সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার ও সাধারন সম্পাদক চৌধুরীর এমদাদ আলী সিদ্দিকী খসরু স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠন বিরোধী কার্যকালাপে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলাধীন সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন মাতুব্বরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

বহিস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.

সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি বাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও রবিবার সকালে যুবদল নেতা হাসান আশরাফের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে নাসিরকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফরিদপুর-২ আসনের নেত্রী শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকল নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরেও নাসির সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ আপার নির্দেশে তাকে বহিস্কার হয়েছে।

উল্লেখ্য, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির মাতুব্বরের সাথে উপজেলা যুবদল নেতা হাসান আশরাফের বিরোধ চলছিল। এরই জেরে শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় নকুলহাটি বাজারে বিএনপি নেতা নাসির মাতুব্বর ও যুবদল নেতা হাসান আশরাফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

এদিকে রবিবার সকাল ১০টার দিকে বিএনপি নেতা নাসির মাতুব্বর ও তার কয়েকশত সমর্থক দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যুবদল নেতা হাসান আশরাফের দোতলা বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং তার একটি টিনের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হাসান আশরাফের সমর্থক স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক মাজেদ মোল্যার দুটি ঘর, ইউনুস মোল্যা দুটি ঘর, বিভাগদী গ্রামের শহীদ সরদারের বাড়ি ঘর ও শফিকের একটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ হ স ন আশর ফ র য বদল ন ত ব এনপ র ঘটন য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ