Samakal:
2025-08-01@18:30:12 GMT

ঢাকার প্রস্তুতি প্রার্থনীয়

Published: 22nd, January 2025 GMT

ঢাকার প্রস্তুতি প্রার্থনীয়

সকল বিচারে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিপুল জয়লাভ করিয়া সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ করিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের এই নেতা অবশ্যই আমাদের অভিবাদন প্রাপ্য।

আমরা জানি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিদর্শনরূপে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হইবার পূর্বেই তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ নিশ্চিত করিয়াছেন। এই জন্যও ট্রাম্পকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই। ক্ষমতায় আরোহণের পর তাঁহার অপর প্রতিশ্রুতি পূরণ তথা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতিও স্বাক্ষরের আশ্বাস দিয়াছেন। আমাদের প্রত্যাশা, এই ক্ষেত্রেও তিনি সফল হইবেন। তবে এই সকল বিষয়ে উল্লাস প্রকাশ, তৎসহিত ইহাও বলা প্রয়োজন, প্রেসিডেন্টরূপে প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন যেইগুলি বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নকামী দেশে তো বটেই, খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিস্তার ঘটাইয়াছে। 

সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রহিয়াছে মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্তি এবং তথায় অভিবাসনের পথ দুরূহকরণ পদক্ষেপ। তিনি ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করিয়াছেন, যাহার কারণে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সমাপ্তি ঘটিতে পারে এবং দেশটিতে আশ্রয় ও শরণার্থী-বিষয়ক চলমান কর্মসূচি স্থগিত হইতে পারে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, কোনো বিদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে গিয়া শিশু জন্ম দিলে, উক্ত শিশুর সহিত তাহার পিতা-মাতাও নাগরিকত্ব পাইতেন। ট্রাম্পের আদেশের ফলে এই নিয়মটি বন্ধ হইয়া যাইতেছে। যদিও বিশেষজ্ঞ অনেকের মত, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেশটির সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত। সংবিধানের ঐ ধারা বাতিলের ক্ষেত্রে যদিও আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করিতে হইবে ট্রাম্প প্রশাসনকে, আপাতত ইহাই সত্য, নাগরিকত্বপ্রাপ্তির পথ বন্ধের কুফল অন্য অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশকেও ভোগ করিতে হইবে। ট্রাম্পের আদেশের কারণে দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত অভিবাসীদিগকেও বাহির করিয়া দেওয়া হইবে। তৎসহিত পরিবারের একজন নাগরিকত্ব লইয়া বাকিদের একাদিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রে লইবার নিয়মও বাতিল হইবে। 

আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের একক বৃহত্তম উৎস দেশ। ফলে আমাদের প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়িবার আশঙ্কা উড়াইয়া দিবার সুযোগ নাই। আর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এবং আমদানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবাসী আয়ের বিপুল ভূমিকার কথা স্মরণে রাখিলে ট্রাম্পের ঐ সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হইবার শঙ্কাই বেশি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যদি যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী গ্রহণের বর্তমান ধারা বন্ধ করিয়া দেয় তাহা হইলেও বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী লইয়া বাংলাদেশ যখন জেরবার, তখন বিগত মার্কিন প্রশাসন রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের আশ্বাস দিয়াছিল। ইতোমধ্যে কয়েক সহস্র রোহিঙ্গার ব্যবস্থাও তাহারা করিয়াছে বলিয়া জানি। বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলরূপে হয়তো ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বৃদ্ধিই পাইত। কিন্তু ট্রাম্পের শরণার্থী গ্রহণ বন্ধের পদক্ষেপ বিষয়টা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত করিয়া দিল। ট্রাম্পের অপর এক নির্বাহী আদেশের বলি হিসাবে অধ্যয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আরও যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হইলে, উহাও বাংলাদেশকে ভোগাইবে বলিয়া আমরা মনে করি।

ট্রাম্প এমন সময়ে উক্ত সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করিতেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রই অভিবাসীদের ভূমিরূপে পরিচিতি পাইয়াছে। এমনকি খোদ ট্রাম্পের পূর্বপুরুষ ও তাঁহার স্ত্রীও অভিবাসীরূপে উক্ত দেশে আসন গাড়িয়াছিলেন। উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও তাহার ইউরোপীয় মিত্রদের দেশে দেশে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার অভিবাসীদের এক প্রকার অধিকারও বটে। অতএব, বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়িয়া তোলা সময়ের দাবি। এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি লইবার বিকল্প নাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শরণ র থ কর য় ছ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ