Samakal:
2025-06-16@17:21:05 GMT

ঢাকার প্রস্তুতি প্রার্থনীয়

Published: 22nd, January 2025 GMT

ঢাকার প্রস্তুতি প্রার্থনীয়

সকল বিচারে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিপুল জয়লাভ করিয়া সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ করিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের এই নেতা অবশ্যই আমাদের অভিবাদন প্রাপ্য।

আমরা জানি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিদর্শনরূপে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হইবার পূর্বেই তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ নিশ্চিত করিয়াছেন। এই জন্যও ট্রাম্পকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই। ক্ষমতায় আরোহণের পর তাঁহার অপর প্রতিশ্রুতি পূরণ তথা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতিও স্বাক্ষরের আশ্বাস দিয়াছেন। আমাদের প্রত্যাশা, এই ক্ষেত্রেও তিনি সফল হইবেন। তবে এই সকল বিষয়ে উল্লাস প্রকাশ, তৎসহিত ইহাও বলা প্রয়োজন, প্রেসিডেন্টরূপে প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন যেইগুলি বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নকামী দেশে তো বটেই, খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিস্তার ঘটাইয়াছে। 

সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রহিয়াছে মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্তি এবং তথায় অভিবাসনের পথ দুরূহকরণ পদক্ষেপ। তিনি ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করিয়াছেন, যাহার কারণে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সমাপ্তি ঘটিতে পারে এবং দেশটিতে আশ্রয় ও শরণার্থী-বিষয়ক চলমান কর্মসূচি স্থগিত হইতে পারে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, কোনো বিদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে গিয়া শিশু জন্ম দিলে, উক্ত শিশুর সহিত তাহার পিতা-মাতাও নাগরিকত্ব পাইতেন। ট্রাম্পের আদেশের ফলে এই নিয়মটি বন্ধ হইয়া যাইতেছে। যদিও বিশেষজ্ঞ অনেকের মত, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেশটির সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী দ্বারা সুরক্ষিত। সংবিধানের ঐ ধারা বাতিলের ক্ষেত্রে যদিও আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করিতে হইবে ট্রাম্প প্রশাসনকে, আপাতত ইহাই সত্য, নাগরিকত্বপ্রাপ্তির পথ বন্ধের কুফল অন্য অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশকেও ভোগ করিতে হইবে। ট্রাম্পের আদেশের কারণে দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত অভিবাসীদিগকেও বাহির করিয়া দেওয়া হইবে। তৎসহিত পরিবারের একজন নাগরিকত্ব লইয়া বাকিদের একাদিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রে লইবার নিয়মও বাতিল হইবে। 

আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের একক বৃহত্তম উৎস দেশ। ফলে আমাদের প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়িবার আশঙ্কা উড়াইয়া দিবার সুযোগ নাই। আর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এবং আমদানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবাসী আয়ের বিপুল ভূমিকার কথা স্মরণে রাখিলে ট্রাম্পের ঐ সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হইবার শঙ্কাই বেশি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যদি যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী গ্রহণের বর্তমান ধারা বন্ধ করিয়া দেয় তাহা হইলেও বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী লইয়া বাংলাদেশ যখন জেরবার, তখন বিগত মার্কিন প্রশাসন রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের আশ্বাস দিয়াছিল। ইতোমধ্যে কয়েক সহস্র রোহিঙ্গার ব্যবস্থাও তাহারা করিয়াছে বলিয়া জানি। বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলরূপে হয়তো ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বৃদ্ধিই পাইত। কিন্তু ট্রাম্পের শরণার্থী গ্রহণ বন্ধের পদক্ষেপ বিষয়টা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত করিয়া দিল। ট্রাম্পের অপর এক নির্বাহী আদেশের বলি হিসাবে অধ্যয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আরও যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হইলে, উহাও বাংলাদেশকে ভোগাইবে বলিয়া আমরা মনে করি।

ট্রাম্প এমন সময়ে উক্ত সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করিতেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রই অভিবাসীদের ভূমিরূপে পরিচিতি পাইয়াছে। এমনকি খোদ ট্রাম্পের পূর্বপুরুষ ও তাঁহার স্ত্রীও অভিবাসীরূপে উক্ত দেশে আসন গাড়িয়াছিলেন। উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও তাহার ইউরোপীয় মিত্রদের দেশে দেশে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার অভিবাসীদের এক প্রকার অধিকারও বটে। অতএব, বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়িয়া তোলা সময়ের দাবি। এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি লইবার বিকল্প নাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শরণ র থ কর য় ছ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ