নোয়াখালীতে ঠিকাদারির দ্বন্দ্বে বিএনপির এক পক্ষের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছেন অপর পক্ষের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রাতে শহরের কাজী কলোনিতে প্রথম দফায় হামলা হয়।

এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশেও হামলা হয়। দুই দফার হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

হাসপাতালে ভর্তি মো.

রুবেল হোসেন (৩৫) নোয়াখালী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর স্বজন ও নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শহরের মাইজদী নতুন হাউজিং এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ পায় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. ইসমাইলের কাছ থেকে চলতি মাসে কাজটি ৮৫ লাখ টাকায় কিনে নেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল করিম মুক্তা। এ নিয়ে অপর পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। 

আবদুল করিম মুক্তার ভাষ্য, ঠিকাদারি কাজের মাটির প্রয়োজনে সোমবার সকালে তাঁর লোকজন কাজী কলোনির একটি পুকুর সেচতে যায়। এ সময় পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাসেরের অনুসারী ইনু, যুবদল নেতা জুয়েল, ছাত্রদলের ওয়াসিমসহ পাঁচ-ছয়জন ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই ব্যক্তিরা চলে যান। তারা বিকেল ৩টার দিকে এসে সেচ মেশিনটি নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে সমঝোতার পর মঙ্গলবার ওই সেচ মেশিনটি নিয়ে আসেন মুক্তা।

এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাসেরের নেতৃত্বে ৬০ থেকে ৭০ জন লোক এক্সক্যাভেটর চালক ও মাটি বহনকারী পিকআপ চালককে মারধর করে ও ভাঙচুর চালায়। এতে বাধা দিতে গেলে মুক্তার লোকজনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত তিনজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে শুরুতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হামলায় মুক্তার অনুসারী রুবেল হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন মুক্তা। 

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বুধবার দুপুর ১টার দিকে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেন আবদুল করিম মুক্তা। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় ৪০-৫০ জন যুবক এসে অতর্কিতে ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা আত্মরক্ষায় প্রেস ক্লাবে ঢুকে পড়লে তাদের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সংবাদ পেয়ে সুধারাম মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। 

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাসের বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে আবদুল করিম মুক্তা মিথ্যাচার করছেন। যতটুকু শুনেছি, মাটি ভরাটের কাজ নিয়ে হরিনারায়ণপুর মহল্লার ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে।’

সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনও শুনেছেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে সংঘর্ষ হয়েছে। এটি দলীয় কোনো ঘটনা নয় বলে মনে করেন তিনি। 

নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে বুধবার দুপুরে নোয়াখালী প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায়ও লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স স ঘর ষ এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ