ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নে মিরান খান (৩৮) নামে এক যুবদল নেতার চোখ তুলে ফেলার পর পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরে ডাঙ্গীগ্রামের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আশিক খন্দকার জানান, মিরান ডাকাতি ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাতে অস্ত্র নিয়ে গুচ্ছগ্রামে ডাকাতি করতে আসলে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে একটি এয়ারগান ও একটি ছ্যান‌দা (দা) পাওয়া গেছে।  

আরো পড়ুন:

রাউজানে দিনে-দুপুরে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
তাওহীদ হত্যা মামলায় মাদারীপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, “এলাকাবাসীর পিটুনিতে এক ব্যক্তি আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরে তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিহতের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিল। এরমধ্যে মাদক, চাঁদাবাজি ও হত্যার মামলা রয়েছে।”

নিহত মিরান আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সাদীপুর সেতুর পাশের জালাল খানের ছেলে। তিনি পদ্মার চরে বালু, মাছ ও ইন্টারনেট ব্যবসা করতেন। মিরান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলেও জানায় পরিবার।  

মিরানের ছোট ভাই ইরান খান বলেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিন মাস আগে মাছ ধরা নিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ তন্ময়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের দ্বন্দ্ব হয়। সে সময় থানায় জিডি করেছিলাম। তারাই আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমার ভাই মিরান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।” 

তিনি আরো বলেন, “যেখানে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের একটি ঘর আছে। আমি শুনেছি, কোনো এক নারীকে নিয়ে আমার ভাই ওই ঘরে রাত্রিযাপন করতে যান। ডাকাতির যে কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। আমার ভাই ব্যবসা করতেন, আমরা যথেষ্ট সচ্ছল। যে গ্রামে ডাকাতির কথা বলা হচ্ছে, সেটি একটি গুচ্ছগ্রাম। সেখানকার সবাই অতিদরিদ্র। কারো ঘরে দুই হাজার টাকা পাওয়া যাবে না। মূলত প্রভাব বিস্তার ও মাছ ব্যবসা নিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই জেরে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।” 

তিনি বলেন, “রাত ১২টার দিকে খবর পাই, আমার ভাইকে মারা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও নদীর ওপার যেতে পারিনি। কারণ ঘাটে কোনো নৌকা রাখেনি তারা। এমনকি ভোরে গিয়ে আমার ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে তারা বাধা দেয়।” 

স্থানীয় বাসিন্দা মনি শিকদার বলেন, “রাতে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তবে কুয়াশার কারণে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। ভোরের দিকে মিরানের স্বজনরা এসে তাকে আহত অবস্থায় নিয়ে গেছে।”

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ড মাস্টার ফায়েকুজ্জামান বলেন, “শুক্রবার (২৪ জনুয়ারি) ভোর ৬টার দিকে মিরানকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। কিছুক্ষণ পরে তার মৃত্যু হয়।”

ঢাকা/তামিম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন য ন ব যবস য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ