মিডিয়া সংস্কার নীতিমালা হবে জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে: কামাল আহমেদ
Published: 26th, January 2025 GMT
মিডিয়া শিল্পে সংকটের যে সামগ্রিক চিত্র সেটা খুবই হতাশাজনক জানিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, “বাংলাদেশের সাধারণ পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের গণমাধ্যমের প্রতি আস্থার ঘাটতির কারণ খুঁজে বের করা হবে। জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংস্কারের নীতিমালা প্রস্তুত করবে।”
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সিলেটে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সিলেট বিভাগের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে অংশীজনের মতামত সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, “সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতাদি নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে দুর্নীতি কমে যাবে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন, প্রচার সংখ্যা নির্ধারণ ও আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা সংক্রান্ত যেসব জালিয়াতি আছে, সেগুলো বন্ধের পথ খুঁজে বের করা হবে। পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে- সে বিষয়েও সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে।”
আরো পড়ুন:
লায়লা কানিজের রিমান্ড শুনানিতে মুন্নী সাহা প্রসঙ্গ
খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন হাসান হাফিজ
সাংবাদিক প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কামাল আহমেদে বলেন, “গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো যাতে যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়, কমিশন সে উপযোগী নীতিমালা প্রণয়নে সুপারিশ করবে। কমিশন সংস্কার বিষয়ে যেসব সুপারিশ করবে, সেগুলো বাস্তবায়নে নির্বাচিত সরকারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ন্যূনতম একটি বেতনের নিশ্চয়তা থাকা দরকার। তাদের আর্থিক সংকট নিরসন না করে যারা গণমাধ্যম পরিচালনা করেন তারা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছেন।”
কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ, বেগম কামরুন্নেসা হাসান এবং আবদুল্লাহ আল মামুন। সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে তাদের সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
ঢাকা/নূর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম ল আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।