প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘সুহৃদ উৎসব’ আয়োজন করবে পাবনার ঈশ্বরদীর সুহৃদরা। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পাকশীর পদ্মা নদীর পারে নবনির্মিত রূপপুর রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এবার সুহৃদ উৎসবের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আয়োজন সফল করতে ইতোমধ্যে সুহৃদ উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম বাবুকে আহ্বায়ক ও সুহৃদ সভাপতি আর.
সম্প্রতি স্থানীয় সাপ্তাহিক ঈশ্বরদী কার্যালয়ে অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম বাবু। সভায় সুহৃদ সমাবেশের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে বিনোদনমূলক আয়োজনের পাশাপাশি শিক্ষামূলক আয়োজনের বিষয়ে অনেকে গুরুত্বারোপ করেন। বছরের শুরুতে সারা বছরের কাজের পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী একটি তালিকা তৈরি করার কথা উঠে আসে। এ বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়া বিষয়টি আলোচনা হয়। সভার সভাপতি বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করেন এবং ধারাবাহিকভাবে আলোচ্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তুতি সভায় প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল সুহৃদ উৎসব। উৎসব সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সভা।
উপস্থিত ছিলেন সমকালের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সেলিম সরদার, সুহৃদ সমাবেশ ঈশ্বরদী ইউনিটের সভাপতি আর.কে. বাবু, কার্যকরী সভাপতি আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক দুর্জয় ইসলাম লিমন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান চৌধুরী, সাহিত্য ও পাঠচক্র সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রূপম, নির্বাহী সদস্য নাজমুল হক রঞ্জন, আল-আমিন হোসেন রাজীব প্রমুখ। v
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ উৎসব ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস