ফেসবুকে ফাঁদ পেতে একজনকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ছয় অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বন্দর থানার নবীগঞ্জ নোয়াদ্দা এলাকার বোরহান মিয়ার ছেলে শাকিল (২৮), একই থানার দাশেরগাঁও আমিরাবাদ এলাকার সালাউদ্দিন মিয়ার ছেলে শাকিল (১৯), নোয়াদ্দা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন মিয়ার ছেলে রাহাত (২৪), কাইটাখালী এলাকার আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে শিল্প (২৪), একরামপুর ইস্পাহানী এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (২৭) ও একরামপুর পৌরসভা এলাকার সোহেল পাটুয়ারী ছেলে মো.

শরিফ (২৭)।

বন্দর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বন্দরের স্বল্পের চক এলাকার শাকিল আহম্মেদের স্ত্রী আনিকা ওরফে রিংকির সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনার আল আমিনের (৩০) ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। মেসেঞ্জারে কথা হতো। গত সোমবার রাত ১১টায় রিংকির সঙ্গে দেখা করতে আল আমিন বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে আসেন। সেখান থেকে রিংকির সহযোগীরা আল আমিনকে অপহরণ করে কাইটাখালী বাসস্ট্যান্ডের অল্প দূরে একটি নির্জন পুকুরপাড়ে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মোবাইল ও ম্যানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আল আমিনকে তাঁর বাবার কাছে মোবাইল ফোনে কল করিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ হিসেবে আল আমিনের বাবা বিকাশের মাধ্যমে ৪৮ হাজার টাকা দেন। মঙ্গলবার সকালে আরও টাকার দাবিতে অপহরণকারীরা আল আমিনকে কাইটাখালী থেকে সাবদী গ্রামে নিয়ে যায়। সাবদীতে আল আমিন টহল পুলিশের গাড়ি দেখে চিৎকার দিলে অপহরণকারীরা তাঁকে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

আল আমিন রাজধানীর মিরপুর থানার শাহ আলীবাগ এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। এ ঘটনায় তিনি গ্রেপ্তার ছয়জনসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় মামলা করেছেন। 

এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ফ সব ক গ র প ত র কর এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি

চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় আইনের সংস্পর্শে নেওয়া সাত বছরের শিশুটি পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরে গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়। শিশুটির মা কারাগারে আর বাবা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ায় মুক্তি পেলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।

‘চট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি’ শিরোনামে গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আদালতপাড়া ও নগর পুলিশে আলোচিত হয় বিষয়টি। এর আগে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) শিশুটিকে অপহরণ মামলায় গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে সোমবার হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জাহাজে ছিলাম। সেখান থেকে আসার পর ছেলেকে জিম্মায় নিয়েছি।’

এদিকে আইনে না থাকলেও মামলাটি গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফের মহাসচিব আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিপূর্বেও সাত বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়। এখনকার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এটি ভুলে নয়, কাজে অবহেলার কারণে হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে অপহরণের মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

যেভাবে শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

ঘটনার শুরু চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারা বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অসুস্থ হলে সেদিন চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সঙ্গে নিয়ে যান চার বছরের ছোট সন্তান মো. রামিমকেও। কিন্তু রামিম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রামিমকে না পেয়ে ঘটনার সাত মাস পর গত শুক্রবার পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মা আনোয়ারা বেগম।

এ ঘটনায় সাত বছরের শিশু ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে সাত বছরের ওই শিশু ও তার মা খেলার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার পর ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক ষোলশহর এলাকা থেকে সাত বছরের শিশুর মাকে গ্রেপ্তার করেন। আইনের সংস্পর্শে নেওয়া হয় শিশুটিকেও। মা যান কারাগারে, শিশুটি টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পর সোমবার সেখান থেকে হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে রাখা হয়।

জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিউল মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন ও দণ্ডবিধিতে ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা আইনের সংস্পর্শে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুনমা কারাগারে, বাবা সাগরে, মুক্তি পেয়েও ঠাঁই হলো না পরিবারে০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বনানীতে স্পা সেন্টারে অভিযানে গ্রেপ্তার ৬, ভুক্তভোগী ১২ নারীকে উদ্ধার
  • স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
  • লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
  • ৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি